Worldwide Bengali Panjika

বীরাষ্টমী ব্রত উপবাস – Birashtami Vrat


বীরাষ্টমী ব্রত (Birashtami Vrat) উপবাস পালন: দুর্গাপূজার সাথে জড়িত রয়েছে এমন অনেক পৌরাণিক কাহিনী, আর তার সাথে রয়েছে এমন অনেক ছোট বড় ব্রত উপবাস যা বাড়ির সকল মা ও বোনেরা পালন করে থাকেন। সংসারের মঙ্গল কামনা এবং জীবনে উন্নতি সাধনে দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা করে থাকেন এই সমস্ত ব্রত পালন করার মধ্যে দিয়ে। শাস্ত্র অনুযায়ী নবরাত্রীর অষ্টম দিন বা অষ্টমী (Ashtami) হলো দুর্গা পূজার পবিত্রতম দিন।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়ার কথা তো সকলেরই জানা, আশ্বিন মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথির এই দিনটিকে আমরা সকলেই দুর্গাষ্টমী (Durgashtami), মহাষ্টমী (Mahashtami), বীরাষ্টমী (Birashtami) বলে থাকি। আশ্বিন মাসের এই অষ্টমী তিথি টি অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভ শক্তির আবির্ভাব ঘটানোর জন্য খুবই শুভ দিন। সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাস্ত্রে এই দিনটির মাহাত্ম্য বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে এই অষ্টমীর দিন হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসীরা অস্ত্র পূজাও করে থাকেন।

দেবী দুর্গার দশটি হাতে থাকে দশ রকমের অস্ত্র, এই দিনে দেবী দুর্গার অস্ত্রকে দেব জ্ঞানে অর্ঘ্য প্রদানের মত করে পূজা করা হয়। কারণ দেবগন নানা অস্ত্র প্রদানের মাধ্যমে এই দিনেই দেবীকে রনসাজে সাজিয়ে তুলেছিল। এই মহাষ্টমী (Maha Ashtami) তিথিতেই এই শুভ কাজ সম্পন্ন করা হয়। তাই এই দিনটিকে বীরাষ্টমীও বলা হয়। আবার ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দিনটিকে বলা হয় অস্ত্র পূজার দিন, বীর সন্তান লাভের জন্য বীরাষ্টমী ব্রত পালন করে থাকেন অনেক মহিলারা।

বীরাষ্টমী ব্রত পালন:

বলা হয় যে, অষ্টমী তিথিতে অসুর বিনাশ এর শুদ্ধসত্তার আবির্ভাব তিথি। এই দিন দেবী মহালক্ষ্মী এর রূপে বৈষ্ণবী শক্তির আবির্ভাব হয়েছে। দেবী সেদিন রাজরাজেশ্বরী মূর্তি ধারণ করেছিলেন। দুই হাতে বর প্রদান করেন ভক্তদের।

তাই এই শুভদিনে বীর সন্তান লাভ করার জন্য বীরাষ্টমী ব্রত পালন করে থাকেন সকল বিবাহিত ও অবিবাহিত মহিলারা। আশ্বিন মাসের শুক্লা অষ্টমীতে ব্রত রাখা হয় আর এই ব্রত একবার পালন করলে তারপর পর পর আট বছর পর্যন্ত ব্রত পালন করতে হয়।

বীরাষ্টমী ব্রত পালনে অস্ত্র পূজা কেন করা হয়?

বাঙালি হিন্দু একসময় অস্ত্র ধরতে পারতো, আর জীবনে বেঁচে থাকার জন্য, যুদ্ধ করতে হতো রাজাদের এবং রাজ্য জয়ের জন্য। যুদ্ধ যেন তখন একটা জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা মূল বিষয় বলা যায়। সেই জায়গা থেকে দেখলে দেখা যায় বীরাষ্টমী অথবা এই মহাষ্টমীতে সেই অস্ত্র গুলোকে পূজা করা হয়, যেন কোন যুদ্ধে না হেরে আসে তারা।

প্রাচীনের রীতি যারা বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের মধ্যে ভারত সেবাশ্রম সংঘ হল অন্যতম। এছাড়া উত্তর কলকাতার বাগবাজার সার্বজনীনেও পালিত হয় বিরাষ্ট্রমী ব্রত এবং সেখানেও হয় অস্ত্র পূজা

মহা অষ্টমী তিথিতে আর কোন কোন ব্রত পালন করা হয়:

ব্রত পালন এবং ব্রতকথা শ্রবণ করা বা পাঠ করা সেই ব্রত উদযাপন করা একসময় বাংলার ঘরে ঘরে প্রচলিত ছিল ভীষণভাবে। যা আজও বর্তমানে সকল মা বোনেদের কাছে এক পবিত্র কাজ। নিজের এবং নিজের পরিবারের সুরক্ষার জন্য আর সার্বিক কল্যাণের জন্য মানুষ তখন দৈবশক্তি অথবা প্রাকৃতিক শক্তির উপরে নির্ভরশীল ছিল।

এছাড়া ব্রত ইত্যাদি ছিল তৎকালীন সমাজে সামাজিক মিলনের একটি মাধ্যম। এর মধ্যে দিয়ে সকলে একসাথে উৎসব আনন্দের মধ্য দিয়ে এই ব্রত পালন করে থাকেন এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন সকল কিছু যেন মঙ্গলময় হয়।

দুর্গাপূজার মহাষ্টমীতে পালিত সমস্ত ব্রত:

তবে দুর্গাপূজার মহাষ্টমী তিথিতে আরো যে সমস্ত ব্রত পালন করা হয় সেগুলি নিচে দেওয়া হল:-

বীরাষ্টমী ব্রত পালনের নিয়ম:

আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে অর্থাৎ মহা অষ্টমী তিথিতে বীরাষ্টমী ব্রত পালন করা হয় তা তো আমরা সকলেই জানলাম। শুদ্ধকালে আশ্বিন মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে এই ব্রত শুরু করে প্রতিবছর মহাষ্টমীতে ব্রত আচরণ করে আট বছর পর্যন্ত এই ব্রত পালন করতে হয় এবং নবম তম বর্ষে প্রতিষ্ঠা করতে হয়।

এই ব্রত পালনের জন্য আট রকমের ফল, আট রকমের ফুল, ঘট, ঘি, প্রদীপ এবং ভোগ নিবেদন করতে হয় এবং ব্রত শেষ করে অষ্টগ্রন্থিযুক্ত (আটটি গিঁট দেওয়া) ডোর ধারণ করতে হয়। বীরাষ্টমী ব্রতর মাহাত্ম্য বিষয়ে নারদ পুরাণে বলা হয়েছে যে, “যে রমণী আশ্বিন মাসের শুক্লাষ্টমীতে বীরাষ্টমী ব্রত পালন করবেন, জন্মান্তরে তিনি দীর্ঘজীবী, সু-সন্তানের জননী ও স্বামী চিত্তানুরঞ্জিনী হয়ে থাকেন।”

মহাষ্টমী ব্রত (Maha Ashtami Vrat):

এই দিন আরও একটি উল্লেখযোগ্য ব্রত হল মহাষ্টমী ব্রত যা সচরাচর সকলেই পালন করে থাকেন। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিকে মহাষ্টমী বলা হয়। এই তিথিতে উপবাস রেখে দুর্গার পূজা ও মহাষ্টমী ব্রত পালন করলে ব্রতী মহা ধনবান, শ্রীমান, পুত্রবান ও সৌভাগ্যশালী হন।

এই দিন উপবাস রেখে কোনরকম অন্ন গ্রহণ করা চলবে না এবং পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা করতে হয়। দেবীপুরাণে বলা হয়েছে যে, সহস্র কোটি একাদশী করলে যে শুভফল লাভ হয়, মহাষ্টমী উপবাস পালন করলে সেই শুভফল লাভ করা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!