Worldwide Bengali Panjika

গোষ্ঠাষ্টমী বা গোপাষ্টমী উৎসব – Gopashtami Puja


গোষ্ঠাষ্টমী উৎসব (Gosthashtami Puja) অথবা গোপাষ্টমী উৎসব (Gopashtami Puja): দেবী দুর্গা বিভিন্ন রূপে পৃথিবীতে পুজিতা হয়ে থাকেন। দেবী দুর্গার আরেক রূপ জগদ্ধাত্রী অর্থাৎ দেবী দুর্গাকে জগদ্ধাত্রী রূপে কালী পূজার পরেই আরাধনা করা হয়। জগদ্ধাত্রী পুজোর মহা অষ্টমীতে আবার গোপাষ্টমী অথবা গোষ্ঠ অষ্টমী উৎসব পালন করা হয়।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

মহাভারতে দেবী দুর্গার সঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্কের কথা বিভিন্নভাবে উল্লেখ রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় একের পর এক শিশু হত্যা চলাকালীন রাজা কংসকে শিশুকন্যা থেকে মহামায়া রূপ ধরে ভয় দেখানো হয়েছিল, আর সেই শিশু কন্যা অথবা সেই মহামায়া ছিলেন দেবী দুর্গা।

রাজা বসুদেবকে ভয়াবহ যমুনা পারাপারের সাহায্য করেছিলেন, এমন নানা ঘটনার ভগবতী বা দুর্গার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শুধু তাই নয় পরবর্তীকালে শ্রীকৃষ্ণ নিজেও অর্জুনকে ভগবতী অথবা দুর্গার আরাধনা করতে সহযোগিতা করেন।

গোষ্ঠাষ্টমী বা গোপাষ্টমী উৎসবের পৌরাণিক কাহিনী:

যেমন ভাবে এই দুর্গার আরেক রূপ জগদ্ধাত্রী পূজার অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের গোপাষ্টমী অথবা গোষ্ঠাষ্টমী উৎসব পালন করা হয়। কাহিনী অনুসারে জানা যায় শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরাম দুজনেরই বয়স পাঁচ বছর হয়ে যায় তার পর নন্দ মহারাজ তাদের বাছুরের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। নন্দ মহারাজ বৃন্দাবনে প্রথমবার গরু চরাতে যাওয়ায় শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন।

সেক্ষেত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গিনী রাধাও কিন্তু গরু চরাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মেয়ে হওয়ার কারণে তাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সেই কারণে রাধা এক ছেলের ছদ্মবেশ ধারণ করে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন এবং গরু চরানোর জন্য গিয়েছিলেন আর এই উৎসবে তিনি অংশগ্রহণ করেন, আর এই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লা অষ্টমী।

আর সেই কারণেই এই বিশেষ দিনে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে রাধার পূজার পাশাপাশি গরুর পূজা (গো-পুজা), গোগ্রাস দান ও গো প্রদিক্ষণ অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস এমনটা করলে অন্ন এবং আর্থিক সমস্যা দূর হয়। এর পাশাপাশি নানা ধরনের গ্রহ দোষ কেটে যায়। এর সঙ্গে এই বিশেষ দিনে গীতা পাঠেরও প্রচলন রয়েছে। শাস্ত্র মতে প্রজাপ্রতি ব্রহ্মা বলেছিলেন যে, “গীতার প্রথম অধ্যায় পাঠ করলে সকলের মন পবিত্র হয়।

এছাড়া গীতার দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ করলে মনে নির্মলতা বৃদ্ধি পায়, তৃতীয় অধ্যায় পাঠ করলে সর্ব পাপ থেকে দূরে থাকা যায়। চতুর্থ অধ্যায় পাঠ করলে ব্রহ্ম হত্যা এবং স্ত্রী হত্যাজনিত পাপ দূর হয়ে যায়। আবার পঞ্চম অধ্যায় পাঠ করলে চৌর্য মহাপাপ দূর হয়। ষষ্ঠ অধ্যায় পাঠ করলে মন্দ ভাগ্যও দূরে সরে যায় আর সৌভাগ্যের উদয় হয়। সপ্তম অধ্যায় পাঠ করলে বুদ্ধি নির্মলতা লাভ হয়, অষ্টম অধ্যায় পাঠ করলে অখাদ্য ও অপেয়জাত সকল প্রকার পাপ থেকে দূরে থাকা যায়। এমনভাবে প্রতিটি অধ্যায় পাঠের পাশাপাশি বিভিন্ন পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

আর এক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, কার্তিক শুক্লা প্রতিপদা থেকে সপ্তমী তিথি পর্যন্ত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার হাতের কনিষ্ট আঙুলে গোবর্ধন পর্বত ধারণ করেছিলেন। এই একই সময়ে কার্তিক শুক্লার অষ্টমী তিথিতে ইন্দ্রদেব তার ক্রোধ ত্যাগ করে শ্রীকৃষ্ণের কাছে ক্ষমা চাইতে আসেন। কথিত আছে যে সেই থেকে কার্তিক শুক্লা অষ্টমী তিথিতে গোপাষ্টমী অথবা গোষ্ঠাষ্টমী উৎসব পালন করা হয়।

গোপাষ্টমী বা গোষ্ঠাষ্টমী উৎসব পালন করার বিধি:

এই শুভদিনে গরুর পূজা করার নিয়ম রয়েছে, এই ক্ষেত্রে এই শুভদিনে শুভক্ষণে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করতে হবে। এরপর পূজার জায়গায় গরু ও বাছুরকে যথাযথভাবে পূজা করতে হবে। তাদেরকে ধুপ, ধুনো, প্রদীপ এগুলি দেখিয়ে পূজা শুরু করতে হবে।

গরু পূজার পর নিজে হাতে গরুকে সবুজ ঘাস খাওয়ানো খুবই শুভ। এছাড়া গরুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করুন এটি করার পর গরুর আরতি করুন। এই দিনে গরুকে গুড় নিবেদন করলে সূর্য দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। গোপাষ্টমীর দিনে এত কিছু করার সময় যদি আপনার কাছে না থাকে তাহলে গোয়াল ঘরে গরুর চারণের ব্যবস্থা করতে পারেন অর্থাৎ গরুকে সুন্দর ঘাস খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।

গোপাষ্টমী পূজার আচার অনুষ্ঠান:

  • খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে নিজেকে এই পূজার জন্য তৈরি করতে হবে এবং সংকল্প গ্রহণ করতে হবে গরু ও বাছুর কে তাদেরকে স্নান করাতে হবে।
  • ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে রাখতে হবে এবং সুন্দর করে সাজিয়ে রাখলে খুবই ভালো।
  • রোলি ও চন্দন দিয়ে গরু ও বাছুরের গায়ে তিলক লাগাতে হবে।
  • শ্রীকৃষ্ণের একটি মূর্তি নিন এবং মূর্তিকে পঞ্চামৃত দিয়ে স্নান করান।
  • ভোগ প্রসাদ তৈরি করুন এবং এই ভোগে ক্ষীর, পুরি, সবজি এবং হালুয়া অবশ্যই রাখতে হবে।
  • একটি কাঠের তক্তার উপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একটি মূর্তি রাখুন এবং একটি প্রদীপ জ্বালান, অবশ্যই ঘি এর প্রদীপ জ্বালালে শুভ ফল পাবেন।
  • ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে ফুলের মালা এবং ভোগ প্রসাদ অর্পণ করুন।
  • এরপর গুড় বিভিন্ন ধরনের ফল এবং মিষ্টি দিয়ে গরুকে ভোগ নিবেদন করুন।
  • যদি আপনার বাড়িতে গরু না থেকে থাকে তবে আপনি এই অনুষ্ঠানটি কোন গোয়াল ঘরে করতে পারেন যেখানে আপনি গরুকে খাওয়াতে পারবেন এবং তাদের পূজা করতে পারবেন।
  • গরুর পূজা করার পর একজনকে অবশ্যই গোপালকে দক্ষিণা দিতে হবে।
  • এই দিন গরুর পূজা করলে সকল প্রকার কষ্ট ও সমস্যা দূর হয় বলে জানা যায়।

গোপাষ্টমী বা গোষ্ঠাষ্টমী পূজার তাৎপর্য:

হিন্দু ধর্মে এই উৎসবের খুব বড় ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে, এই দিনটি ব্রজ, মথুরা, গোকুল, বৃন্দাবন, নাথদ্বারা, দ্বারকাধীশ এবং পুরীতে অত্যন্ত ভক্তি সহকারে এই উৎসব পালন করা হয়। গোপাষ্টমীর এই শুভ দিনে সকল ভক্তরা ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার ভগবান কৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করে থাকেন।

এটা বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং ভগবান বিষ্ণুর পূজা করলে জীবনের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি থাকে। অনেক জায়গায় এই উৎসব খুবই বড় আকারে পালন করা হয় এবং এই উৎসব উপলক্ষে কিছু জায়গায় মেলাও বসে। যেখানে দূর দূরান্তর থেকে আগত ভক্তরা উৎসব উদযাপন করার পাশাপাশি এই উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!