Worldwide Bengali Panjika

শ্রী শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত – Krishna Janmashtami Vrat


শ্রী শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত পালনের নিয়ম জেনে নিন (Krishna Janmashtami Vrat): শ্রীকৃষ্ণ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে কতখানি ভক্তির সেটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত বাংলার হিন্দু সমাজের একটি অন্যতম ব্রত, অন্যান্য ব্রত গুলির তুলনায়।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

পুরুষ ও মহিলারা উভয়েই জাগতিক মঙ্গল কামনা এবং অশুভ, অকল্যাণ দূর করতে এই কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করে থাকেন এবং অনেকেই পুত্র সন্তান পাওয়ার আশা নিয়ে এই ব্রত পালন করেন। এটি ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের জন্মাষ্টমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় এবং এই পূজার বিশেষ গুরুত্বও রয়েছে।

কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত পালনের প্রয়োজনীয় উপকরণ:

কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট উপকরণের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন পূজায় যেমন নৈবেদ্য ও উপকরণ প্রয়োজন পড়ে এই পূজোর ক্ষেত্রে কিন্তু ঠিক তাই। জন্মাষ্টমী ব্রত পালনের প্রথম পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ হল:-

  • ফুল
  • আতপ চাল
  • ফলের নৈবেদ্য
  • দুর্বাঘাস
  • তুলসী পাতা
  • ধুপ
  • প্রদীপ
  • পঞ্চগব্য
  • পঞ্চগুড়ি
  • বালি
  • পাট
  • পঞ্চ বর্ণের গুঁড়ো
  • মধু পার্কের বাটি
  • আসন অঙ্গুরি সংগ্রহ করতে হয়।
  • এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্রত পালনের সারাদিন উপবাস থেকে উপকরণ গুলি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতে হয় এবং ব্রত ভঙ্গ করার পর নিরামিষ আহার গ্রহণ করতে হয়, যে সমস্ত ভক্তগণ উপবাস পালন করছেন।

শাস্ত্র অনুসারে জানা যায় কেউ যদি একবার শ্রীকৃষ্ণের এই জন্মাষ্টমী উপবাস পালন করে থাকেন তাহলে তাঁকে আর এই জগতে জন্ম, মৃত্যু, ব্যাধি, কষ্ট ভোগ করতে হয় না এবং পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না। নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই ব্রত পালন করে থাকেন, সারাদিন উপবাস থেকেও তাঁদের মনে একটা আনন্দ অনুভব হয় যে শ্রীকৃষ্ণের ব্রত পালন করছেন।

শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পালনের পদ্ধতি:

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক শ্রীকৃষ্ণের এই ব্রত কিভাবে পালন করবেন?

  • জন্মাষ্টমীর আগের দিন অবশ্যই নিরামিষ খাবার খেতে হবে এবং সংযম পালন করতে হবে। আর রাত বারোটার মধ্যে খেয়ে নিতে হবে, ঘুমানোর আগে অবশ্যই ভালো করে মুখ, হাত, পা ধুয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে পবিত্র হয়ে ঘুমাতে হবে।
  • তবে যাঁদের উপবাস পালনে সমস্যা রয়েছে, অসুস্থ, তাঁরা অবশ্যই দুপুর ১২ টার পরে কৃষ্ণের কাছে ক্ষমা চেয়ে একটু দুধ বা ফল খেতে পারেন, তবে একাদশীর মতোই অন্ন সহ পঞ্চ রবি শস্য খাবার খাওয়ার বিধান নেই।
  • জন্মাষ্টমীর দিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উপবাস করতে হয় এবং জেগে থাকতে হয়, উপবাস থেকে হরিনাম জপ করতে হয়, কৃষ্ণলীলা শ্রবণ করতে হয়, ভগবানকে দর্শন করতে হয়, ভক্তদের সঙ্গে হরিনাম কীর্তন করতে হয়, অভিষেক দর্শন করতে হবে এবং ভগবানকে অভিষেক করে একাদশীর দিনের মতো অনুকল্প প্রসাদ সেবন করতে হবে।
  • শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমীর ব্রত পালন করার ক্ষেত্রে জন্মাষ্টমীর পরের দিন সকালে স্নান করা শেষে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারণ মন্ত্র পাঠ করে শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদ দিয়ে পারণ করবেন।

কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত পালনের জন্য পূজার স্থান:

একটি শান্ত ও কোলাহলমুক্ত স্থান প্রয়োজন, স্থানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে এবং পুজোর জন্য স্নান সেরে রাখতে হবে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একটি ছবি অথবা মূর্তির সঙ্গে গণেশ মূর্তিও স্থাপন করা হয়ে থাকে। তবে পাশে রাখতে হবে জ্বলন্ত প্রদীপ, মিষ্টি, ফল ও অন্যান্য নৈবেদ্য থালায় সাজিয়ে রাখতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় ফুল, সাদা রঙের ফুল রাখতে হবে পূজার ডালিতে।

শ্রীকৃষ্ণের ভোগ নিবেদন:

শ্রীকৃষ্ণ অথবা গোপালের প্রিয় খাবার গুলির মধ্যে রয়েছে মাখন, মিছরি, ননি, নাড়ু, তালের বড়া, ক্ষীর, মালাই, রাবড়ি, মালপোয়া ইত্যাদি। যেহেতু কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী তে ছোট্ট কৃষ্ণকে আরাধনা করা হয় সেক্ষেত্রে কৃষ্ণের পছন্দের খাবারগুলি সাজিয়ে তার সামনে ভোগ হিসেবে নিবেদন করতে হবে।

জন্মাষ্টমী পূজা পদ্ধতি:

প্রথমে শ্রী গণেশের প্রার্থনা ‘ওম শ্রী গনেশায় নমঃ’ এটি করতে হবে। এরপর কিছুক্ষণ ধ্যান করতে হবে মন যাতে শান্ত থাকে, তারপর প্রদীপ জ্বালাতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের প্রার্থনা ‘ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায় নম’ এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের প্রার্থনা করার সাথে সাথে ফুল অর্পণ করতে হবে, তুলসী পাতা থাকলে খুবই ভালো হয়, তাছাড়া ধুপ জ্বালাতে হবে।

ফুল অর্পণ করার সময় ঘন্টা বাজানোর রীতি প্রচলিত রয়েছে। এরপর ফল, মিষ্টি এবং অন্যান্য নৈবেদ্য অর্পণ করতে হবে। প্রার্থনা শেষে কিছুটা জল ছিটিয়ে দিতে হবে। কৃষ্ণ ভগবানের এই মন্ত্র বেশ কয়েকবার মনে মনে উচ্চারণ করা যেতে পারে।

এরপর ফল, মিষ্টি এবং আরো অন্যান্য যে নৈবেদ্য, ভোগ অর্পণ করা হয়েছে সেগুলি প্রসাদ হিসেবে সবাইকে বিতরণ করুন, যাঁরা ভক্ত হিসেবে রয়েছেন। পূজা সম্পন্ন হওয়ার পর ভগবত গীতা পাঠ করতে হবে অথবা যাঁরা পাঠ করতে পারেন না তাঁরা শ্রবণ করতে পারেন এতে পূণ্য অর্জন করা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!