মহা অষ্টমীতে ব্রত পালন ও পুষ্পাঞ্জলির নিয়ম: দুর্গাপূজার সাথে অষ্টমীতে পুষ্পাঞ্জলি (Ashtami Pushpanjali) দেওয়ার এই বিষয়টি আশা করি কারোরই অজানা নয়। যেকোনো পুজোর প্রধান অঙ্গই হলো অঞ্জলি দেওয়া। দেবতাকে অর্ঘ্য নিবেদন করাই হল অঞ্জলি দান। দুর্গাপূজায় সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে অঞ্জলি দেওয়া যেতে পারে তবে অধিকাংশ মানুষ অষ্টমীর (Ashtami) দিন পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে থাকেন এবং এই দিন অনেকেই উপবাস পালন করেন।
প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)
যাঁদের বাড়িতে পুজো হয় তাঁরা প্রতিদিন পুজো পর্যন্ত উপবাস করে অঞ্জলি দিয়ে প্রসাদ গ্রহণ করেন। পুজোর চার দিন পুষ্পাঞ্জলি দিলেও মহাষ্টমী মানে সকাল বেলা স্নান সেরে নতুন জামা কাপড় পরে গিয়ে হাজির হওয়া, তারপর দুহাত ভরে ফুল নিয়ে মায়ের কাছে সকল মনের কথা জানিয়ে প্রার্থনা জানিয়ে এবং সকলের মঙ্গল কামনা করে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া মায়ের চরণে। সকল পুরুষ এই দিন ধুতি-পাঞ্জাবি পরার চেষ্টা করেন এবং সকল নারীরা সাড়িতে সেজে ওঠেন।
মহা অষ্টমীতে অঞ্জলির গুরুত্ব:
ফুল হাতে নিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে এবং সকল মনোকামনা জানিয়ে সেই ফুল মায়ের চরণে দেওয়ার এই প্রথা আজকে নতুন নয় এবং এর মধ্যে দিয়ে ভক্তের মনের ইচ্ছা দেবীর কাছে জানানো হয় আর দেবী সেই ভক্তের মনের ইচ্ছা পূরণ করেন।
এই বিশ্বাস অনুসারে প্রতিটি পূজা ও অঞ্জলীর গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম। পুরান মতে ভাদ্র মাসে কৃষ্ণা নবমী তিথিতে দেবতাদের তেজ ক্রমশ পুঞ্জিভূত হতে শুরু করে। সপ্তমী তিথিতে সেই পুঞ্জিভূত তেজ রাশি অবয়ব ধারণ করে।
তাই সপ্তমী থেকে দেবীর মূর্তিতে পুজো করা শুরু হয়ে যায়, মহাষ্টমী তিথিতে দেবতারা দুর্গাকে নানা ধরনের অস্ত্র, রত্ন হার, পদ্ম ফুলের মালা দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। যেহেতু মহাষ্টমীতে দেবী দুর্গাকে দেবতারা সাজিয়ে দিয়েছিলেন তাই ঐদিন আমরাও মা দুর্গাকে সাজিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি যথাযথ।
সবচেয়ে সুন্দর জিনিস দিয়ে সেদিন পূজা করা হয়। আমরা নিজেরাও সেরা এবং পবিত্র জামাকাপড় এ সেজে উঠি, পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার জন্য। তাই মহাষ্টমীর অঞ্জলি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
মহা অষ্টমী পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার নিয়ম:
- অবশ্যই আপনাকে উপবাসে থাকতে হবে, আর যদি না থাকতে পারেন তাহলে কিছু ফল আহার করতে পারেন।
- অষ্টমীর সকালে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে ঠাকুরের সামনে বসতে হবে।
- তিনবার হাতে গঙ্গা জল নিয়ে আচমন করতে হবে।
- এরপর হাতে ফুল নিতে হবে এবং তিনবার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র পড়ে ঠাকুরের চরণে সেটি প্রদান করতে হবে।
- এরপর প্রণাম মন্ত্র অর্থাৎ “ওম সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে শরণ্যে ত্রম্ব্যকে গৌরী নারায়নি নমস্তুতে” এটি উচ্চারণ করে অঞ্জলি শেষ করুন।
- সকল মেয়ে, মা দুর্গার অংশ, তাই মৃন্ময়ী প্রতিমাকে পূজা করার পাশাপাশি কম বয়সি সকল ছোট মেয়েদেরও পূজা করা হয় অর্থাৎ যাকে কুমারী পূজা বলা হয়।
- মহাষ্টমীর দিন কুমারী মেয়ে বিশেষত যে সকল মেয়ের বিবাহের বাধা সৃষ্টি হচ্ছে বা বিবাহ স্থির হয়েও ভেঙে যাচ্ছে তাঁদের ক্ষেত্রে বিশেষ শুভ ফলদায়ক।
- লাল অথবা হলুদ বস্ত্র দেবী দুর্গাকে প্রদান করতে হবে।
- লাল বা হলুদ সুতো মায়ের কাছে নিবেদন করে হাতে বেঁধে রাখুন।
- চিনি, মিষ্টি, ডাব, ফল দিয়ে পূজা করতে হবে। এবং নিজের মনোবাসনা সম্পূর্ণ করার জন্য সংকল্প করুন।
- নিরামিষ আহার গ্রহণ করুন এই দিন, এর সাথে সাথে ঘি এর প্রদীপ জ্বালান।
মহাষ্টমীতে অঞ্জলি দেওয়ার শুভফল:
কথিত আছে যে, মহাষ্টমীতে দেবীর পূজা করার সময় সঠিক নিয়ম মেনে চললে জীবনে কখনো আর্থিক দিক থেকে অবনতি ঘটে না এবং সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি সর্বদাই বজায় থাকে, আর জীবনে আসে সাফল্য। তাই ভোরে উঠে স্নান সেরে নতুন পোশাক পরে প্যান্ডেল, মন্দির অথবা কোন বনেদি বাড়িতে যাঁদের নিজেদের বাড়িতে পুজো হয় সেখানে উপস্থিত হতে হয়।
মানুষের ভিড় কত পরিমাণে হয় সেটা তো আর নাইবা বললাম। শক্তির আরাধ্যা দেবী দুর্গার কাছে নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়ে প্রার্থনা করার শুভ সময় হল এই মহাষ্টমীতে অঞ্জলি দেওয়ার সময়।
এমনটাই মনে করে বিশ্বাস রেখে অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে এবং শুভ শক্তিকে জীবনে আগমন ঘটাতে এই দিন পুষ্পাঞ্জলির গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিবছর শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে দুর্গা অষ্টমী ব্রত পালন করা হয়। বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মধ্যে এই দুর্গাষ্টমী ব্রত (Durgashtami Vrat) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রক্তে রক্তে মিশে রয়েছে।