রাধাষ্টমী ব্রত (Radhastami Vrat): ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে রাধারানীর নাম বিশেষভাবে জড়িত। রাধা কে ছাড়া কৃষ্ণ কে ভাবাই যায় না। রাধা কলঙ্কিনী হলেও তাঁর পূজা হয়ে থাকে এবং রাধা অষ্টমী (Radhastami) এই ব্রত পালন করে থাকেন হিন্দু ঘরের মা-বোনেরা।
প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)
প্রায় প্রত্যেকটি ঘরের হিন্দু মা এবং বোনেরা রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে থাকেন। রাধা অষ্টমী ব্রত পালনের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। তাছাড়া শুধুমাত্র এই ব্রত হিসাবেই নয়, প্রত্যেকটি ব্রতর একটি নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে, সেগুলি ভালোভাবে মেনে যদি ব্রত পালন করা যায় তাহলেই শুভ ফল পাওয়া যায়।
ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে রাধাষ্টমীর এই ব্রত পালন করা হয়। এই শুভ দিনটি শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় রাধা রানীর জন্মবার্ষিকী হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বাস অনুসারে জানা যায় শ্রীকৃষ্ণের জন্মের ঠিক ১৫ দিন পরে রাধারানীর জন্ম হয়েছিল। তাই এই দিনটিকে রাধার জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়। আর যা পৃথিবীবাসীর কাছে রাধা অষ্টমী নামে পরিচিত।
রাধাষ্টমী ব্রত পালনের নিয়ম:
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক রাধা অষ্টমী ব্রত পালনের নিয়ম সম্পর্কে:
১) রাধা অষ্টমী ব্রত পালন করার জন্য প্রথমে প্রয়োজনীয় উপকরণ যেগুলি লাগবে সেগুলি ভালোভাবে সংগ্রহ করে নিতে হবে। যেমন ধরুন ফুল, ফল, আতপ চাল, সিদ্ধ চাল এবং নৈবেদ্য হিসেবে আট রকমের আটটি ফল কিন্তু আলাদা করে সংগ্রহ করতে হবে।
২) এরপর ব্রত পালনের জন্য সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। সারাদিন উপবাস থেকে উপকরণ গুলি দিয়ে রাধা এবং অষ্ট সখীর পূজা করতে হবে। এর পাশাপাশি আলাদাভাবে বৃষ ভানু ও নন্দ রাজার পূজা করতে হবে।
৩) এরপর ব্রত পালনের পরের দিন ব্রাহ্মণ এবং বৈষ্ণবদের আপনার যথাসাধ্য ভোজন করিয়ে ব্রত সমাপন করতে হবে।
রাধা অষ্টমীতে হলুদ রঙের গুরুত্ব:
রাধা অষ্টমী ব্রত পালন করার জন্য হলুদ রঙের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই শুভদিনে হলুদ রঙের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলেই অনেকেই ব্রত পালন করে হলুদ রঙের পোশাক পরে থাকেন। রাধারানী হলুদ রং খুবই পছন্দ করেন, যাঁরা এই দিন উপবাস রাখবেন, ব্রত পালন করবেন, তাঁরা অবশ্যই হলুদ রঙের পোশাক পরিধান করার চেষ্টা করবেন।
এই শুভদিনে পূজোর পাশাপাশি হলুদ কাপড় বিছিয়ে শ্রী রাধা কৃষ্ণের মূর্তি স্থাপন করতে হবে। শ্রী রাধা কে হলুদ রঙের ফল ও ফুল নিবেদন করতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে এই দিনে দেওয়া খাবারটিও হলুদ রঙের হওয়া উচিত।
রাধাষ্টমীতে রাধারানীর উদ্দেশ্যে কি নৈবেদ্য ও ভোগ অর্পণ করবেন ?
শ্রীরাধার পছন্দের ফুলের মধ্যে রয়েছে, সকল রকমের ফুল যা শ্রীকৃষ্ণের পছন্দ সেই সকল ফুলই কিন্তু রাধা রানী পছন্দ করেন। তবে পদ্মফুল, কদম ফুল, বকুল ফুল, মালতি ফুল, বিশেষ করে কাঠগোলাপ ফুল রাধারানীর খুবই প্রিয় ফুল।
শ্রীরাধার পছন্দের ফলের মধ্যে রয়েছে, সকল ধরনের ফল যে সমস্ত ফল শ্রীকৃষ্ণ পছন্দ করেন। তবে বিশেষ করে আতাফল রাধারানীর খুবই প্রিয়।
শ্রীরাধার পছন্দের সবজির মধ্যে রয়েছে, মুখি কচু যা খুবই প্রিয়, তাই রান্না ভোগ দিতে চাইলে মুখী কচুর নানা ধরনের পদ রান্না করে দিতে পারেন।
রাধারানীর পছন্দের মিষ্টান্নর মধ্যে, তেমন গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখযোগ্য কিছু না থাকলেও নানা ধরনের মিষ্টান্ন বাড়িতে তৈরি করে আপনি উৎসর্গ করতেই পারেন।
রাধাষ্টমী পূজা বিধি:
খুবই সহজ পদ্ধতিতে বাড়িতেই রাধা রানীর পূজা করতে পারবেন আপনি নিজেই। মনে অনেকখানি ভক্তি রেখে নিজেকে পবিত্র রেখে এই ব্রত পালন করলেই পেতে পারেন শুভ ফল।
- প্রথমে খুব ভোরে স্নান সেরে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করতে হবে।
- যে পাত্রে রাধারানীর অভিষেক করা হবে সেটি একটি উঁচু জায়গায় স্থাপন করতে হবে অথবা কোন চৌকিতে স্থাপন করতে হবে।
- অগরু মিশ্রিত চন্দন দিয়ে অষ্টদল পদ্ম অর্থাৎ যে পদ্ম ফুলের আটটি পাপড়ি রয়েছে সেটি এঁকে নিয়ে চিত্রপট বা রাধামাধব মূর্তি স্থাপন করতে হবে।
- রাধারানীর পূজা করতে মূর্তির সামনে একটি তামার কলসি রাখুন, তাতে জল রাখুন।
- তারপর নিয়ম অনুসারে সিঁদুর, কুমকুম, চাল, ফুল, ধুপ ও প্রদীপ নিবেদন করুন।
- সুগন্ধিত ধুপ, প্রদীপ জ্বালিয়ে দিতে হবে যা পূজার বিশেষ অংশ।
- পঞ্চামৃত যেমন দুধ, দই, ঘি, মধু, চিনি দিয়ে স্নান করতে হবে।
- ফুল চন্দন দিয়ে সাজিয়ে নিতে হবে।
- শ্রীকৃষ্ণের পাদ পদ্মে তুলসী পাতা এবং রাধারানীর পাদ পদ্মে ফুল অর্পণ করতে হবে।
- এরপর ভোগ নিবেদন করতে হবে মন্ত্র উচ্চারণ করে।
- মঙ্গল আরতি করতে হবে রাধাকৃষ্ণের।
- পূজা সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর প্রসাদ বিতরণ করুন এবং নিজেও সেই প্রসাদ গ্রহণ করে উপবাস ভঙ্গ করুন।
রাধা অষ্টমী ব্রত পালনের তাৎপর্য:
হিন্দু ধর্মে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে রাধা ছাড়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা রাধিকাকে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষে পূজা করা হয়, কেননা তিনি এই সময়ে জন্মগ্রহণ করেন।
এক্ষেত্রে যাঁরা রাধারানীর এই ব্রত অথবা উপবাস পালন করবেন অর্থাৎ রাধা অষ্টমী উপবাস পালন করবেন এই দিনে রাধারানীর সাথে ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরও পূজা করতে হবে, এর ফলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিশেষ আশীর্বাদ পাবেন।
এটা বিশ্বাস করা হয় যে, যে বিবাহিত দম্পতিরা রাধা অষ্টমী উপবাস করেন এবং নিয়ম অনুসারে পূজা করেন তাঁদের জীবনে সর্বদাই সুখ থাকে এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সব সময় ভালোবাসা বজায় থাকে, পরিবারের সমৃদ্ধি ও উন্নতি বাড়তে থাকে।