Worldwide Bengali Panjika

ভূত চতুর্দশী পুজা ও পালন পদ্ধতি – Bhoot Chaturdashi


ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi): দুর্গাপুজোর পরে লক্ষ্মীপূজো (Lakshmi Puja) শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তোড় জোড় শুরু হয়ে যায় কালীপূজা (Kali Puja) অর্থাৎ দীপাবলীর (Diwali)। আর এই দীপাবলিতে এমন অনেক পূজা অর্চনা, প্রথা, নিয়ম ও উৎসব রয়েছে যেগুলি দিনক্ষণ ও তিথি অনুসারে পালন করা হয় সংসারের মঙ্গল কামনায়।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

দীপাবলির আগে পালিত হয় ধনতেরাস (Dhanteras) এবং নরক চতুর্দশী, কার্তিক কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে নরক চতুর্দশী (Narak Chaturdashi) অথবা ভূত চতুর্দশী পালন করা হয়। হিন্দু শাস্ত্রে এই তিথির রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। বিশেষ কিছু নিয়ম পালন করলে পাওয়া যায় সুফল। এছাড়া গঙ্গা স্নান (Ganga Snan) বা পূণ্য স্নান করতে হয় সারা গায়ে হলুদ লাগিয়ে, গঙ্গা স্নান করা খুবই শুভ বলে মনে করা হয় এই তিথিতে।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ভূত চতুর্দশী অথবা নরক চতুর্দশী সম্পর্কে:

ভূত চতুর্দশীর পৌরাণিক কথা:

পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে ঘোর অমাবস্যার রাতে বিদেহী আত্মারা নেমে আসেন মর্ত্যলোকে, এর ঠিক পরের দিনই চন্দ্রের তিথি নিয়ম মেনে হয় দীপান্বিতা কালীপূজা। পুরাণ মতে জানা যায় ভূত চতুর্দশীর রাতে শিব ভক্ত বলি মর্ত্যে আসেন পূজা নিতে, সঙ্গে আসেন তাঁর অনুচর ভূতেরা।

চতুর্দশী তিথির ভরা অমাবশ্যায় চারিদিক যখন ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢেকে থাকে তখন সেই ঘন অন্ধকারে যাতে বলি রাজার অনুচরেরা বাড়িতে ঢুকে না পড়েন তার ব্যবস্থায় করা হতো প্রাচীনকালে, আর সেটা চৌদ্দটি প্রদীপ জ্বেলে চারিদিক আলোকিত করে তোলা হয়।

ভূত চতুর্দশীর পূজা:

  • এই তিথিতে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পড়ে পবিত্র হয়ে নিতে হবে।
  • এই তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ, মা কালী, যমরাজ, শিব, হনুমান এবং বিষ্ণুর বামন অবতারের পূজা করা হয় বলে জানা যায়।
  • বাড়ির ঈশান কোণে সমস্ত দেব দেবীর প্রতিমা অথবা ছবি স্থাপন করে পূজা করতে হবে।
  • দেবতাদের কুমকুমের তিলক অথবা চন্দনের তিলক লাগাতে হবে।
  • ধূপকাঠি জ্বালাতে হবে, প্রদীপ জ্বালাতে হবে তার সাথে সাথে মন্ত্র জপ করতে হবে।

ভূত চতুর্দশীর দিনে যে কাজ গুলি করতে পারেন:

  • শাস্ত্র অনুসারে ভূত চতুর্দশী সকালে উঠে নিজের সারা শরীরের তেল মালিশ করলে দেবী লক্ষ্মী খুবই খুশি হন মনে করা হয়।
  • তেলের মধ্যে লক্ষ্মী ও জলে গঙ্গার বসবাস, এই তিথিতে সকালে স্নান করার পর পূজার সংকল্প নিলে দেবী লক্ষ্মী ও গঙ্গা প্রসন্ন হন এবং ভক্তদের আশীর্বাদ প্রদান করেন।
  • এই দিনে যমরাজের পূজা করা হয় যা অকাল মৃত্যু থেকে রক্ষা করে মর্ত্যবাসিকে। এছাড়া পৌরাণিক ধারণা অনুসারে জানা যায় কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষে চতুর্দশী তিথিতে শ্রী কৃষ্ণ নরকাসুর কে বদ করে দেবতা ও ঋষিদের তার অত্যাচার এবং আতঙ্ক থেকে মুক্ত করেন।

ভূত চতুর্দশী তে কি কি করার প্রথা রয়েছে?

ভূতে বিশ্বাস করেন এমন মানুষ অনেকই আছেন। আবার অনেকেই বিশ্বাস করেন না। ভূত বা আত্মায় বিশ্বাস যদি নাও করে থাকেন তবুও কিন্তু দীপাবলীর এই ভূত চতুর্দশীর দিনে সবকটি নিয়ম পালন করে চলাটা শুভ বলে মনে করা হয়। কারণ ভূত চতুর্দশী তিথি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত।

কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিকে বলা হয় ভূত চতুর্দশী। কালী পূজার আগের রাত ভূত চতুর্দশী হিসাবে পালন করে থাকেন সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। সন্ধ্যার পর ভূতেদের দেখা পাওয়া যায় বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। তেনাদের খালি চোখে দেখা যায় না ঠিকই কিন্তু অনুভব করা যায়।

ছোট থেকে ভূত চতুর্দশী নিয়ে অনেকের মনে অনেক ধারণা জন্মায়। তাছাড়া পরিবারের মধ্যে ১৪ রকম শাক খাওয়ার যে প্রথা রয়েছে তা আজও পর্যন্ত বিদ্যমান। এই ১৪ রকম শাকের মিশ্রণ যদি না খাওয়া হয় তাহলে নাকি সন্ধ্যা বেলায় ভুতে ধরবে এই ধরনের আরো অনেক প্রচলিত ধারণা রয়েছে।

১) ১৪ টি প্রদীপ জ্বালানোর নিয়ম:

এই দিন সন্ধ্যায় সবার বাড়িতে সারা বাড়ি জুড়ে চৌদ্দটি প্রদীপ চালানোর নিয়ম রয়েছে। বলা হয় ১৪ টি প্রদীপের আলো দেখে পূর্বপুরুষরা এক রাতের জন্য নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসেন। আবার অনেকেই এই প্রদীপ গুলিকে যম প্রদীপ বলে থাকেন এবং যম প্রদীপ দান হিসেবে এই প্রদীপ গুলি উৎসর্গ করেন।

এই দিনে অশুভ শক্তির প্রকোপ বৃদ্ধি পায় বলে একটা বিশ্বাস প্রচলিত আছে। ভূত-প্রেত নিয়ে এই দিন রাজা বলিও মর্ত্যে আসেন বলে মনে করেন অনেকে। যেহেতু দিনটি চতুর্দশী তাই চৌদ্দটি প্রদীপ জ্বালানোর নিয়ম রয়েছে।

২) শ্মশানে যাওয়া বারণ:

এই দিন সন্ধ্যায় তেনাদের দেখা পাওয়া যায় বলেই অনেকেই শ্মশান অথবা গোরস্থানে যেতে চান না বা যাওয়া নিষিদ্ধ রয়েছে। কারন এই দিনে এই নেতিবাচক শক্তির প্রভাব গুরুতর হয় যা মানব জীবনের ক্ষতি সাধন করতে পারে। সেই সব শক্তি মানব জীবনে বিভিন্ন বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসতে পারে, তাই সাবধানে থাকা ভালো।

৩) ঝাড়ু দেওয়া যাবেনা:

এই দিন সন্ধের পর কোন ভাবেই বাড়িতে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা চলবে না। যেটুকু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা দরকার তা সন্ধ্যে হওয়ার আগেই সম্পন্ন করতে হবে। এমনটা করলে লক্ষ্মী দেবীকে ঘর থেকে বিতাড়িত করা হয় বলে ধারণা করা হয়। তাই এমনটা সংসারের পক্ষে কখনোই মঙ্গলজনক নয়।

৪) রান্নাঘর পরিষ্কার:

এই দিনে রান্নাঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে সংসারে মঙ্গল সাধন হয়।

১৪ জন যমের নাম:

ভূত চতুর্দশী তে ১৪ টি প্রদীপ জ্বালানো হয় যমরাজদের উদ্দেশ্যে এবং অকালমৃত্যু থেকে রক্ষা পেতে। তবে এদিন ১৪ জন যমের উদ্দেশ্যে যে তর্পনের রীতি রয়েছে সেই রীতি অনুযায়ী ১৪ জন যম হলেন:-

ধর্মরাজ, অন্তক, মৃত্যু, সর্বভুতক্ষয়, বৃকোদর, উড়ম্বর, বৈবস্বত, কাল, যম, দধ্ন, নীন, পরমেষ্ঠী, চিত্র ও চিত্রগুপ্ত। পদ্মপুরাণ অনুসারে জানা যায় ভূত চতুর্দশীতে গঙ্গা স্নান করলে মৃত্যুর পর নরক যন্ত্রণা কম সহ্য করতে হয়।

ভূত চতুর্দশীতে ১৪ রকম শাক খাওয়ার নিয়ম:

এই নিয়ম সকলেই পালন করার চেষ্টা করেন, ১৪ ধরনের শাক খাওয়ার রীতি প্রচলিত রয়েছে এই দিন। এই ১৪ রকম শাক হলো:- ওল, বেতো, কেও, কালকাসুন্দা, সর্ষে, নিম, শালিঞ্চা অথবা শাঞ্চে শাক, জয়ন্তী, পলতা পাতা, গুলঞ্চ, ঘেটু অথবা ভাঁট পাতা, হিনচে শাক, শুষনি শাক এবং শেলু। তবে এই চোদ্দ রকম শাক খাওয়ারও রয়েছে বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য।

এই সময়টা ঋতু পরিবর্তনের সময় এবং ১৪ রকম শাক খেলে মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আসলে হেমন্ত কালের এই সময় তখন আস্তে আস্তে শীত পড়ে, এই সময় সর্দি-কাশি সহ আরো নানা ধরনের ছোটখাটো রোগের প্রকোপ দেখা দেয়।

সেই সব রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে এই শাক খাওয়ার নির্দেশ রয়েছে বলে জানা যায়। যা প্রাচীনকালে এক চিকিৎসাও বলা যেতে পারে, যেটি আজ এই উৎসবের প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!