Worldwide Bengali Panjika

শ্রী শ্রী যমরাজ পূজা বিধি – Yamaraj Puja


যমরাজ পূজা বিধি (Yamaraj Puja): হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে একাধিক দেব-দেবীদের নাম আমরা সকলেই কম বেশি জানি তবে ৩৩ কোটি দেবদেবীর নাম হয়তো বেশিরভাগ মানুষই জানবেন না। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে বিভিন্ন জায়গা বিশেষে অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন পূজা পার্বণ এবং দেবদেবীদের আরাধনা করা হয়।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

কিন্তু হিন্দু শাস্ত্রে অন্যতম দেবতা হলেন যমরাজ (Yamaraj)। যিনি কিনা মৃত্যুর দেবতা, তাঁকে পূজা করা হয় এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করেই নিজেদের নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়। তবে যমরাজের পূজার প্রচলন রয়েছে বেশ কিছু জায়গায় যে পুজো শুরুর পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস।

যমরাজ পূজার কাহিনী:

পুরান মতে স্বয়ং ব্রহ্মাই যমরাজকে দায়িত্ব দেন পরলোকের। মানব জনমের পাপ পুণ্যের হিসাব দেখে স্বর্গ অথবা নরক বাস স্থির করার দায়িত্ব যমরাজের দেওয়া হয়। কিন্তু একা যমরাজ এই দায়িত্ব পালন করতে এবং সামলাতে না পেরে তিনি আবারও সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার কাছে যান এবং বিকল্প কিছু ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করেন।

সেই সময় ব্রহ্মার কায়া থেকে উদ্ভূত এক দেবতা ইনি হলেন চিত্রগুপ্ত (Chitragupta), তিনি সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার কায়া থেকে সৃষ্টি হয়েছেন এবং এর জন্য তাঁর সন্তানরা কায়স্থ হিসেবে পরিচিতি পান। ব্রহ্মা চিত্রগুপ্তকে পাপ পূণ্যের হিসাব রাখার কাজে নিয়োজিত করেন।

আর সেই থেকেই মানব সমাজের সকল মানুষের পাপ পুণ্যের হিসাব নিকাশ করেই তবেই সেই মানুষের মৃত্যুর পরে স্বর্গ অথবা নরক বাস হয়ে থাকে যমরাজের দ্বারা। আর সেই থেকেই যমরাজের পাশাপাশি চিত্রগুপ্তের পূজা করার প্রচলন শুরু হয় মর্ত্যে।

যমরাজের মন্দির:

দিল্লি থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে হিমাচল প্রদেশের চম্বা জেলায় ভারমোর এলাকায় রয়েছে যমরাজের মন্দির। ভারমোর এলাকার এই প্রাচীন মন্দিরটি ভারতের মাটিতে যমরাজের একমাত্র মন্দির হিসেবে গণ্য করা হয়। ধর্মেশ্বর মহাদেব মন্দির (Mahadev Mandir) নামে এটি সকলের কাছে পরিচিত।

হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে যমরাজ হলেন মৃত্যুর দেবতা। মন্দিরের আশেপাশের মানুষজনের বিশ্বাস, মৃত্যুর পর এই মন্দিরেই মৃত ব্যক্তির আত্মার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় স্বয়ং যমরাজের। এখানে বসেই তাদের বিচার করেন যমরাজ। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস অনুসারে জানা যায়, স্বয়ং যমরাজ এই মন্দিরেই বাস করেন।

তবে যমরাজ একা নন এই মন্দিরের একটি আলাদা ঘরে রয়েছেন চিত্রগুপ্ত, যিনি যমরাজের বিশেষ সহযোগী। এই মন্দিরটি পাহারা দেয় দুটি চার চোখ ওয়ালা কুকুর এটা বিশ্বাস অনুসারে জানা যায়, যারা আসলে যমরাজেরই পোষ্য কুকুর।

যমরাজের এই ঘরের চারিদিকে রয়েছে চারটি অদৃশ্য দরজা। সোনা, রুপা, তামা আর লোহার তৈরি এই চারটি দরজা। এখানে বিচারের রায় শোনানোর পরে যমদূত এসে কর্মফল অনুযায়ী সেই চারটি দরজার একটি দিয়ে আত্মাকে স্বর্গ অথবা নরকে নিয়ে যান। গরুড় পুরানে অবশ্য যমরাজের দরবারে চারিদিকের এমনই চারটি দরজার কথা উল্লেখ রয়েছে।

এছাড়া প্রতিটি প্রাচীন মন্দিরের সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেক লোমহর্ষক কাহিনী, যা শুনতে ভীষণ ভালো লাগার পাশাপাশি মানুষের মনে আরও কৌতুহলের সৃষ্টি করে। এই মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের আকর্ষণীয় এবং লোমহর্ষক কাহিনী।

বলা হয় মন্দিরের ভিতরে নাকি একটি শূন্য প্রকোষ্ঠ রয়েছে, সেখানে স্বয়ং যমরাজ শাসন করেন। এই প্রকোষ্ঠে একবার কেউ প্রবেশ করলে সে আর জীবিত অবস্থায় বেরিয়ে আসে না বলে বিশ্বাস করা হয়। অনেকদিন আগে কেউ কেউ সাহস করে নাকি এই প্রকোষ্ঠে ঢুকেছিল, তবে পরের দিন তাদের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল।

তবে এইসব কাহিনী মনগড়া এবং লোকবিশ্বাস অনুসারে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, এর কোন বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই তা তো বলাই বাহুল্য। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বে যমরাজের এই মন্দির বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে সকল ভক্তদের কাছে। প্রাচীন এই মন্দির তার আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য এবং গঠনগত সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছেও বিশেষ প্রিয় একটি স্থান হিসেবে পরিচিত।

যমরাজকে সন্তুষ্ট করতে কি করবেন?

যমরাজকে আমরা সকলেই মৃত্যুর দেবতা মনে করি। যমের নাম শুনলে সকলের মনে একটা আলাদা ভয় কাজ করে। মনে করা হয় যমের দূতেরা অন্যের দুঃখ কষ্ট দেখতে বা শুনতে পারেনা। কোন জাতকের মৃত্যু কাছাকাছি গেলে তাঁরা যমদূতদের দেখতে পান, এমনটাই বিশ্বাস করা হয়।

তবে যে সমস্ত জাতক জাতিকাদের উপরে যমরাজের বাবা সূর্যের আশীর্বাদ থাকে তাঁরা অকাল মৃত্যুর ভয় থেকে দূরে থাকেন এবং যমদূতরা তাদের কোন কষ্ট দেয় না, এমনটাই বিশ্বাস চলে আসছে প্রাচীনকাল থেকে। সূর্যের আশীর্বাদ থাকলে অকাল মৃত্যুর ভয় থেকে জাতক জাতিকারা মুক্তি পেয়ে থাকেন এবং সর্বদাই নির্ভয়ে থাকতে পারেন।

যমরাজকে সন্তুষ্ট করতে এই কাজ করুন:

যমরাজকে সন্তুষ্ট করতে এবং সূর্যদেবের আশীর্বাদ পেতে যেগুলি করবেন:

  • খুব সকালে অর্থাৎ ব্রহ্মমুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে সূর্যকে জলের অর্ঘ্য দেওয়ার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে।
  • সূর্য উদয়ের আগে উঠে স্নান করে সূর্যকে জল অর্পণ করলে আত্মবিশ্বাস, তেজ, যশ, সাহস, ইতিবাচকতা ও সুখ বৃদ্ধি হয় বলে জানা যায়।
  • এক্ষেত্রে তামার ঘটিতে জল ভরে তাতে কুমকুম অথবা চন্দন, অক্ষত, লাল ফুল দিয়ে সূর্যকে অর্পণ করা হয় যা খুবই শুভ ফল দেয়।
  • যমদের ভয় থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন সূর্য মন্ত্র জব করা উচিত। সূর্য মন্ত্র হল:- “ওম হৃং হৃং সূর্যায় সহস্রকিরণরায় মনোবাঞ্ছিত কলম দেহি দেহি স্বহা”, এই মন্ত্র জপ করলে কোষ্ঠীতে সূর্যের পরিস্থিতি খুবই মজবুত হয়।
  • যমের সুনজরে থাকার জন্য সূর্যকে দুধ ও ঘি অর্পণ করলে শুভ ফল লাভ করতে পারবেন।
  • নিজের সাত পুরুষের উদ্ধার করার জন্য সূর্য মন্দিরে ঝাড়-পোছ করলে এবং মন্দিরের বিশেষ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করলে বিশেষ শুভ ফল লাভ করতে পারবেন।
  • অকাল মৃত্যুর ভয় থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতি মাসের অমাবস্যা তিথিতে পরিবারের সকল সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে গীতার সপ্তম অধ্যায় পাঠ করা শুভ বলে মনে করা হয়।
  • জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে গীতার এই সপ্তম অধ্যায় পাঠ সমাপ্ত হওয়ার পর সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করুন।
  • পরিবারের সদস্যরা মিলে উন্নত স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করতে পারেন যমরাজ ও সূর্যদেবের কাছে।

এছাড়া অমাবস্যা তিথিতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে পারেন, তাছাড়া অসহায় বাচ্চাদের খাবার ও মিষ্টি হালুয়া খাওয়ালে তাদের হাসিমুখ আপনার জীবনে শুভ ফল বয়ে নিয়ে আসবে। আপনার জীবন হয়ে উঠবে ভয়-ভীতিহীন আনন্দময়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!