হনুমানজির পূজা ও উৎসব পালন (Hanuman Puja): হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এমন অনেক পুজা রয়েছে যা প্রতিনিয়ত শুভ তিথি অনুযায়ী পালন করা হয়। পবন পুত্র হনুমানের পূজা করার মধ্যে দিয়ে অনেকেই শক্তিকেও পূজা করে থাকেন নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে। তাঁকে ডাকলে তাঁকে সর্বদাই পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করেন প্রত্যেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। মঙ্গলবার তিনি যেকোনো সংকট থেকে সকলকে রক্ষা করেন। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে যে ব্যক্তি মঙ্গল বার হনুমানজীর ব্রত রাখেন তাঁর কুন্ডলীতে সকল গ্রহ শান্ত থাকে এবং সেই ব্যক্তি সকল রকম দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পান।
প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)
এর সাথে সাথে সকল নেতিবাচক শক্তি দূর হয়ে যায়, ভূত-প্রেত থেকে সমস্ত রকম জাদু টোনা সব কিছুর শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এর পাশাপাশি সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও ধন সম্পদের প্রাপ্তি ঘটে। সন্তান প্রাপ্তির জন্য এই ব্রত অনেকেই পালন করে থাকেন। ভবিষ্যতে আগত যে কোন সংকট থেকে রক্ষা পান এই ব্রত পালনকারীরা। এই ব্রত পালনকারীর সকল মনস্কামনা পূর্ণ হয়। মন থাকে শান্ত এবং শরীর থাকে নীরোগ।
হনুমানজির পূজার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী:
- হনুমানজির পূজা করার জন্য হনুমানজির মূর্তি অথবা ছবি প্রয়োজন পড়বে এবং
- ধূপ,
- ধুনা ও জল,
- কলা,
- সিদুর,
- প্রদীপ,
- লাল কাপড়,
- শ্রী রামচন্দ্রের নাম লেখা লাল পতাকা
হনুমানজির পূজার নিয়ম:
শাস্ত্র তে বলা হয়েছে লাল কাপড় পরা হনুমানজির মূর্তি বাড়িতে রাখা খুবই শুভ। সেই কারণেই হনুমানজির পূজা করার সময় লাল কাপড় নিবেদন করতে হয়:-
- সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে শুদ্ধ কাপড় পরে পুজোর জায়গা ভালো করে গঙ্গাজল দিয়ে পরিষ্কার করে পবিত্র করে নিতে হবে।
- এরপর একটা লাল কাপড় বিছিয়ে তার উপর হনুমানজির ছবি অথবা মূর্তি রাখতে হবে।
- তবে এর আগে ঠাকুরের মূর্তিটা জল দিয়ে ভালো করে স্নান করে নিতে হবে।
- এবার ঠাকুরের গায়ে সিঁদুর লাগিয়ে দিতে হবে।
- তারপর প্রদীপ জ্বালিয়ে ফুলের মালা পরাতে হবে।
- এরপরে হনুমানজির মূর্তির সামনে হনুমান চল্লিশা পাঠ করতে হবে।
- এই সাধারণ পূজার মধ্যে আপনি নিষ্ঠা ও ভক্তি ভরে যদি এই পূজা সম্পন্ন করতে পারেন তাহলে আপনার সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি সকল সংকট থেকে মুক্তি পাবেন।
- জীবনে উন্নতি সাধন করতে এবং সমস্ত ঝামেলা ঝঞ্ঝাট দূর করতে শ্রীরাম লেখা পতাকা অবশ্যই প্রয়োজন পড়বে এবং এই হনুমান পূজার দিনে মন্দিরের চূড়ায় প্রায় ২ মিটার লম্বা লাল রঙের পতাকা লাগানো উচিত।
হনুমান পূজায় বিশেষ কিছু বিধি নিষেধ মেনে চলতে হয়:
বজরংবালি কে স্পর্শ করা যাবে না মেয়েদের:
বজরাংবালি অর্থাৎ হনুমানজি সারা জীবন ব্রহ্মচর্য পালনের সংকল্প করেছেন। তাই তাঁর পুজোর সময় মহিলারা তাঁকে স্পর্শ করবেন না। যদি এমনটা হয় তাহলে কিন্তু অশুভ ফলাফল লাভ করতে পারেন মহিলারা।
মেয়েদের ক্ষেত্রে সিঁদুর নিবেদন করা যাবে না:
সিঁদুর হল হনুমানজীর সবচেয়ে প্রিয় একটি উপকরণ। পুরুষরা সিঁদুর লাগাতে পারলেও মহিলারা এই সিঁদুর লাগানো থেকে বিরত থাকুন। তাই সিঁদুরের পরিবর্তে লাল রঙের ফুল নিবেদন করবেন তাঁরা।
মেয়েরা যে জিনিসগুলি হনুমানজিকে অর্পণ করতে পারবেন না:
যজ্ঞ পবিত, চোলা ইত্যাদি অর্পণ করা থেকে বিরত থাকুন। শুধুমাত্র পুরুষরাই এই সামগ্রী গুলি অর্পণ করতে পারবেন। এই বিধি নিষেধ গুলো মেনে চললে এবং দূর থেকে নিষ্ঠা ভরে পূজা অর্চনা করলে এর শুভ ফল অবশ্যই পাবেন আপনি।
পূজার সময় যে রঙের পোশাক পরা উচিত নয়:
হনুমান পূজায় মহিলারা কালো অথবা সাদা রঙের কোন পোশাক পরবেন না। আর তা না হলে কিন্তু অশুভ ফলাফল লাভ করতে পারেন। তাছাড়া হনুমান পূজার সময়ে লাল, গোলাপি, হলুদ এই ধরনের রঙের পোশাক পরা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়।
এছাড়াও যদি এই পূজার উপবাস পালন করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ফল খেতে পারেন কিন্তু কোন লবণ জাতীয় খাবার বা নোনতা খাবার খাওয়া যাবেনা। এটি এড়িয়ে চলতে হবে আর এটাই সবচেয়ে শ্রেয় উপায় বলে মনে করা হয়।