Worldwide Bengali Panjika

জগদ্ধাত্রী পূজা বিধি – Jagaddhatri Puja Vidhi


জগদ্ধাত্রী পূজা বিধি (Jagaddhatri Puja Vidhi): বিভিন্ন পূজা পার্বণ এর মধ্যে দিয়ে প্রতিটি দিন অতিবাহিত হয় সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। এছাড়া বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ, এই কথাটা তো নিশ্চয়ই অজানা নয়। দুর্গাপূজা (Durga Puja) চলে যাওয়ার পরেই লক্ষ্মী পূজা (Lakshmi Puja), কালীপূজা (Kali Puja) এক এক করে যখন সমাপ্ত হয় তখন মন খারাপের পর্ব ঘুচিয়ে জগদ্ধাত্রী পূজা (Jagaddhatri Puja) অনুষ্ঠিত হয়।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

জগদ্ধাত্রী হল দেবী দুর্গার আরো একটি রূপ। পার্বতীর অপর রূপ দেবী জগদ্ধাত্রী, তাই দেবীকে দুর্গা হিসেবে আরাধনা করা হয়, জগতের ধাত্রী অর্থাৎ ধারণ কত্রী। উপনিষদে জগদ্ধাত্রীর নাম উমা হৈমবতি বলে উল্লেখ রয়েছে। দেবী জগদ্ধাত্রী চতুর্ভুজা, এই দেবীর চার হাতে থাকে শঙ্খ, চক্র, ধনুক এবং বাণ। দেবী দুর্গার মতো জগদ্ধাত্রীর বাহন হল সিংহ, যা করিন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তিরূপী অসুরের পিঠে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কার্তিক মাসের শুক্লা নবমীতে হয় জগদ্ধাত্রী পূজা।

এই প্রথায় এই পুজো করার প্রচলন রয়েছে, কেউ দুর্গা পূজার ধাঁচে পূজা করে থাকেন সপ্তমী থেকে নবম পর্যন্ত। আবার অনেকেই নবমীর দিনই তিনবার পূজা করার আয়োজন করে থাকেন, এই পূজার অনেক প্রথা দুর্গা পূজার একেবারে অনুরূপ।

জগদ্ধাত্রী পূজার প্রয়োজনীয় উপকরণ:

জগদ্ধাত্রী পূজায় যে উপকরণ গুলি প্রয়োজন পড়বে সেগুলি বেশিরভাগ দূর্গা পূজার উপকরণের সাথে মিল রয়েছে। যেমন ধরুন:-

সিঁদুর, গুরু, পুজক ও তন্ত্র ধারক, বরন তিনটি, বরন আঙ্গুরীয় তিনটি, যজ্ঞ পবিত তিনটি, হরিতকী, বরণডালা, তিল, পঞ্চগুড়ি, পঞ্চগব্য, পঞ্চরত্ন, পঞ্চ শস্য, পঞ্চ পল্লব, ঘট একটি, শিষযুক্ত ডাব একটি, একসরা আতপ চাল, কুন্ড হাড়ি একটি, তেকাঠা একটি, তীরকাটি চারটি, সিংহের ধুতি, বিষ্ণুর ধুতি, জগদ্ধাত্রীর পূজার শাড়ি, ঘট আচ্ছাদন গামছা, ফুলের মালা, ফুল, ফল, মধু পার্কের বাটি, নৈবেদ্য ১০ রকম, কুছানো নৈবেদ্য একরকম, বেল পাতার মালা তিনটি, থালা একটি, লোহা, নথ, সিঁদুরচুবড়ি, পট্টবস্ত্র, দই, মধু, চিনি, শঙ্খ এক জোড়া, যজ্ঞের জন্য কাঠ, খড়কে, ঘি, হোমের জন্য ১০৮ টি অথবা ২৮ টি বেলপাতা, পদ্মফুল, ভোগের দ্রব্য, পান, পানের মসলা, বলি দেওয়ার জন্য ছাগল, পূর্ণ পাত্র, দক্ষিণা।

জগদ্ধাত্রী পূজা বিধি:

  • খুব ভরে স্নান সেরে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে জগদ্ধাত্রী পূজার ব্রত (Jagaddhatri Puja Vrat) পালনে সংকল্প গ্রহণ করতে হবে।
  • এরপর ঘরের ঠাকুর ঘরে অথবা মন্দির ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে সেখানে একটি চৌকি পাতুন তার উপরে লাল কাপড় বিছিয়ে ফুল বিছিয়ে দিন।
  • এরপর সেই চৌকিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর মূর্তি অথবা ছবি স্থাপন করুন। চৌকির উপরে যখন ফুল ছড়াবেন তখন তার সাথে অবশ্যই কিছু আতপ চাল ছড়িয়ে দিতে ভুলবেন না।
  • পূজাতে বসার আগে যিনি এই পূজার ব্রতী হয়েছেন তিনি নিজের মাথা এবং পূজার আশেপাশে গঙ্গাজল ছিটিয়ে পবিত্র করে নিন।
  • এরপর বিভিন্ন পূজার সামগ্রীতে এবং ফুলের মালায় চন্দন, গঙ্গাজল, লাল চন্দন, এগুলি লাগিয়ে নিতে হবে।
  • প্রথমে হাতে গঙ্গা জল নিয়ে আচমণ করে নিতে হবে। সাথে বিষ্ণুর স্মরণ করতে হবে।
  • এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে যদি আপনার বাড়িতে দেবী জগদ্ধাত্রী কোন মূর্তি অথবা চিত্রপট না থাকে তাহলে দেবী দুর্গার যে কোন রূপের মূর্তি অথবা ছবি দিয়ে আপনি এই জগদ্ধাত্রী পূজা সম্পন্ন করতে পারবেন।
  • এরপর প্রদীপ জ্বালাতে হবে সেটা সর্ষের তেলের প্রদীপ হতে পারে অথবা গাওয়া ঘি এর প্রদীপ হতে পারে। প্রদীপের মধ্যে সামান্য কর্পূর দিতে পারেন।

সুগন্ধি জল প্রস্তুত করা:

দেবী জগদ্ধাত্রী স্নানের জন্য সুগন্ধি জল প্রস্তুত করতে হবে:

ঘট এর মধ্যে প্রথমে দিয়ে দিতে হবে সামান্য গোলাপজল, এরপর অল্প একটু অগরু। এরপর এই জলে সামান্য লাল চন্দন দিয়ে এরপর এখানে জাফরান দিতে হবে। জাফরান না দিতে পারলেও কোন অসুবিধা নেই।

এবার দিতে হবে অষ্টগন্ধা, এবার সবটা একসঙ্গে মিশিয়ে নিন, একটি পরিষ্কার শুকনো কাপড়ে সুগন্ধি জলটি সামান্য পরিমাণে নিয়ে কাপড়টি দিয়ে মায়ের চিত্রপটটি সুন্দর করে মুছে নিন।

মা জগদ্ধাত্রী এবং মায়ের সিংহ বাহনকে লাল চন্দনের তিলক পরিয়ে মাকে আর মায়ের বাহনকে সিঁদুরের তিলক পরিয়ে দিতে হবে।

এবার মঙ্গল ঘট স্থাপন করতে হবে:

  • এখানে তামার একটা জলপূর্ণ ঘট নিন, ঘটে সিঁদুর দিয়ে মঙ্গল চিহ্ন বা স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে দিন এবং পাঁচটা সিঁদুরের ফোটা দিয়ে দেবেন।
  • তামার পরিবর্তে পিতল বা মাটির ঘটও নেওয়া যেতে পারে, ঘটের জলে প্রথমে কিছুটা গোটা আতপ চাল দিয়ে দিন।
  • মঙ্গল ঘটের জলে গোটা আতপ চাল, হলুদের একটি টুকরো এবং একটি টাকার কয়েন, তার সাথে একটি সুপারিও দিন।
  • ঘট স্থাপন করার পর দেবী জগদ্ধাত্রীকে দেবী দুর্গার মতোই আরাধনা করতে হবে। জগদ্ধাত্রী পূজা তান্ত্রিক পূজা, সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী এই তিন দিন জগদ্ধাত্রী পূজা হয়ে থাকে। তবে অনেকে নবমীর দিন তিনবার এই পূজা করে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পূজা সম্পন্ন করেন।

কোথাও কোথাও প্রথম অথবা দ্বিতীয় পূজার দিন কুমারী পূজার (Kumari Puja) আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজার মতোই জগদ্ধাত্রী পূজাতেও বিসর্জন বিজয়া নামেই পরিচিত। এই পূজায় পুষ্পাঞ্জলি যেমন রয়েছে তেমনি আরতির সাথে দেবী জগদ্ধাত্রী কে দেবী দুর্গার মতোই আরাধনা করা হয়ে থাকে।

ভোগ এবং নৈবেদ্য তে বিভিন্ন ধরনের ফল, মিষ্টি এমনকি লুচি, সুজি এগুলি দেওয়া হয়ে থাকে যা পরবর্তীতে প্রসাদ হিসেবে সকল ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এই জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় খুব বড় ধরনের মেলা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে দূর দূরান্তর থেকে মানুষজন পূজা দেখার পাশাপাশি মেলার আনন্দ উপভোগ করতে ছুটে আসেন।

তাছাড়া কৃষ্ণনগর, চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পূজার কথা আর নাইবা বললাম, এখানকার সবথেকে জনপ্রিয় এবং বড় পূজা হল জগদ্ধাত্রী পূজা। এখানে সব থেকে বেশি আলোর মেলা দেখা যায় জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে, বিশাল বড় মেলা বসে এই পূজা কে কেন্দ্র করেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!