Worldwide Bengali Panjika

দুর্গা নবমী ব্রত পালন ও নিয়ম – Durga Navami Vrat


দুর্গা নবমী ব্রত (Durga Navami Vrat): দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবচেয়ে বড় পূজা, এই পূজায় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান পালন করার সাথে সাথে মহানবমী অথবা দুর্গা নবমীতে বিশেষ কিছু রীতি ও প্রথা মেনে চলতে হয়। দুর্গাপূজা (Durga Puja) এবং নবরাত্রি (Navaratri) একে অপরের পরিপূরক, শরৎকালে ভারত একমাত্র যখন শারদীয়া (Sharadiya) অথবা দেবী দুর্গার আরাধনায় মেতে ওঠে তখন ভারতের অন্য আরো যে প্রান্ত রয়েছে সেখানকার মানুষজন মেতে ওঠেন নবরাত্রি পালন করতে।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

বিভিন্ন ব্রত পালনে যেমন বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করতে হয়, তেমনি এই দুর্গা নবমীতে বিশেষ কিছু নিয়ম আপনাকে অবশ্যই পালন করতে হবে। যদি আপনি উপবাস রেখে ব্রত পালন করে থাকেন। মা দুর্গার নয়টি রূপ, যা নয়টি শক্তির উৎস। প্রত্যেকটি রূপ আলাদা আলাদা অর্থ বহন করে। এই সময় বিপুল সংখ্যক মানুষ ব্রত পালন করেন, ঘট স্থাপন করেন এবং কিছু বিষয় মেনে চলেন।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক দুর্গা নবমী অথবা নবরাত্রীর ব্রত সম্পর্কে:

ব্রত করার অর্থ কেবলমাত্র খাবার না খেয়ে উপবাসে থাকা নয় বা অন্ন গ্রহণ করা নয়, এর অর্থ হল মন ও শরীর দুটোই শুদ্ধ করে রাখা। ব্রত চলাকালীন মানুষের সমস্ত মনোযোগ, নিষ্ঠা সহকারে এবং নিয়ম অনুসারে উপবাস পালন করে ও ঈশ্বরের উপাসনা করলে ব্রত সম্পন্ন হয় বলে জানা যায়।

দুর্গা নবমী ব্রত ঘট স্থাপন করুন:

নবরাত্রি অথবা দুর্গা নবমীর এই শুভ দিন চলাকালীন রোজ সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পড়ে তারপর পূজায় বসতে হয়। পূজার সংকল্প গ্রহণ করতে হয়, এরপর প্রতিদিন নিয়ম মেনে পূজা করতে হয়, সকাল ছাড়াও সন্ধ্যা বেলাতেও ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবীর আরাধনা করতে হয়।

আর যদি এগুলি করার পাশাপাশি অখন্ড জ্যোতি জ্বালিয়ে রাখেন তাহলে নয় দিনের জন্য ২৪ ঘন্টা জ্বালিয়ে রাখার যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। শেষ দিন পুজোর পর এটি নিভিয়ে ফেলবেন না বরং এটি নিজে থেকেই নিভে যেতে দিন।

সপ্তসতী পাঠ করুন:

এই ব্রত চলাকালীন দিনে যখনই আপনি সময় পাবেন দুর্গা সপ্তসতী পাঠ করতে হবে এবং মন্ত্র জপ করবেন। এর পাশাপাশি আপনি উপবাস রেখে ফল আহার করতে পারেন, কিন্তু ভুলেও আমিষ জাতীয় কোন খাবার গ্রহণ করা যাবে না। শুদ্ধ মনে মায়ের পূজা করতে হবে, মা দুর্গা তাঁদের উপরেই কৃপা করেন যাঁদের মন শুদ্ধ এবং পবিত্র, কারো কোনো ক্ষতি করার মানসিকতা রাখে না, তাই ব্রতের সময় রাগ না করে, কারোর প্রতি কোন বাজে ধারণা না রেখে শুধুমাত্র নিজের ভক্তি ও নিষ্ঠা দিয়ে দেবী দুর্গাকে আরাধনা করুন, দেখবেন আপনার মন মত ফল পাবেন।

এই ব্রত চলাকালীন চুল, দাড়ি, নখ এগুলি তো কাটতে নেই। তাছাড়া নিরামিষ ভোজন করতে হয়। নিরামিষ পদ বাড়িতে খাওয়া হয় এবং বাড়ির সকল সদস্যরা যদি ব্রত নাও রাখেন তবুও সকল সদস্যদের জন্য এই নিরামিষ ভোজন বাধ্যতামূলক থাকে। আবার কেউ কেউ নয় দিন ধরে নির্জলা উপবাস পালন করে থাকেন। এই সময় দেবী দুর্গার নয়টি রূপ এর পূজা করা হয়। শুদ্ধ মনে এই নয় দিন সব নিয়ম মেনে যদি পূজা করা হয়ে থাকে তবে মা দুর্গার আশীর্বাদ সর্বদাই আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের উপরে বর্ষিত হবে।

কন্যা পূজা, অর্থাৎ কুমারী পূজা এই পূজার সাথে বিশেষভাবে জড়িয়ে রয়েছে দুর্গা নবমী ব্রত পালনের একটি বিষয়। যেখানে দেবীর নয়টি রূপের অর্থ বহন করে নয়টি অল্পবয়সী মেয়ের পূজা করা হয়। সম্মান এবং আশীর্বাদের অঙ্গভঙ্গি হিসেবে তাদের সাধারণত নতুন পোশাক পরিয়ে নতুন নতুন খাবার সাজিয়ে দিতে হবে সামনে এবং উপহার প্রদান করে তাদেরকে খুশি করতে হবে। এর ফলে মনে করা হয় যে দেবী দুর্গা ওই ছোট ছোট মেয়েদের মধ্যেই বিরাজ করছেন, আর খুশি হয়ে ভক্তদের আশীর্বাদ প্রদান করছেন।

দুর্গা নবমী ব্রত পালনের পূজা নিয়ম:

প্রদীপ জ্বালান এবং ধুপকাঠি জ্বালিয়ে আরতি করুন। পূজার সময় ঘটটিকে শুদ্ধ করতে এবং পূজার সময় নয় দিনের জন্য ঘট স্থাপন করার প্রার্থনা করুন। সমস্ত দেবতাদের উপাসনা স্থলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করুন। সুগন্ধযুক্ত ফুল, ফল, ধুপের ধোঁয়া, কর্পূরের আলো এবং রান্না করা বিভিন্ন ধরনের খাবার অথবা ভোগ সহ পাঁচটি উপকরণ দিয়ে পূজা করুন।

দুর্গা নবমীতে যেগুলি করতে পারেন:

এই শুভদিনে বাড়িতে কুমারী মেয়েদের ডেকে এনে তাদের পছন্দমত খাবার খাওয়ান এবং উপহার প্রদান করুন। দুই বছর থেকে ১০ বছরের ৯ জন মেয়েদের বাড়িতে ডেকে এনে ভোজন করাতে পারেন আপনার সাধ্যমত অর্থাৎ মায়ের নয়টি রূপের প্রতিক হিসেবে এই নয়টি কুমারী মেয়েকে আপনি পূজা করতে পারেন দেবী জ্ঞানে। এর ফলে জীবনে প্রচুর সুখ, শান্তি, অর্জন করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করা হয়।

আর্থিক সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে গঙ্গাজল দিয়ে দুর্গা প্রতিমা স্নান করান, তারপর শ্রদ্ধা, ভক্তি ভরে দুর্গা রক্ষা স্তোত্র পাঠ করুন। এর ফলে ধনধান্যে ঘর ভরে উঠবে এবং আপনার ঘর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে থাকবে। নবমী তিথিতে উত্তর দিকে মুখ করে হলুদ আসনে বসে পূজা করতে হবে আপনাকে।

তারপর দুর্গার মূর্তি বা ছবির সামনে নয়টি প্রদীপ জ্বালাতে হবে। তারপর প্রদীপের সামনে লাল রঙের চাল বিছিয়ে দিতে হবে যাতে শ্রী যন্ত্র স্থাপন করা যায়। এরপর লক্ষ্মী মন্ত্র জপ করতে পারেন, তারপর বাড়ির মন্দিরে সেই যন্ত্র স্থাপন করুন, এর ফলে আপনার হঠাৎ করে লক্ষ্মী লাভ অথবা ধন লাভের পথ প্রশস্ত হবে।

দেবী দুর্গার ভোগ:

দুর্গা নবমী ব্রত পালন করতে দেবীকে ভোগ হিসেবে আপনি দিতে পারেন হালুয়া, লুচি, কালো ছোলা, ফল, পায়েস এবং নারকেলের বিভিন্ন ধরনের ভোগ যা আপনি বাড়িতেও তৈরি করতে পারেন। এই দিন বেগুনি অথবা পাকা জাম রঙের পোশাক পরতে পারেন, যা খুবই শুভ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!