Worldwide Bengali Panjika

বৈকুণ্ঠ চতুর্দশী ব্রত – Vaikunth Chaturdashi Vrat


বৈকুণ্ঠ চতুর্দশী ব্রত (Vaikunth Chaturdashi Vrat): সম্পূর্ণ কার্তিক মাস জুড়ে বিভিন্ন ব্রত পালন করা হয়ে থাকে। আর এই মাসে উপবাস ও ব্রত রেখে বাড়ির গৃহিণীরা সংসারের মঙ্গল কামনা করে থাকেন ঈশ্বরের কাছে। কার্তিক পূর্ণিমার একদিন আগে বৈকুন্ঠ চতুর্দশী ব্রত পালন করা হয়।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্দশী তিথির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। আর এটিকে বৈকুন্ঠ চতুর্দশী (Vaikunth Chaturdashi) হিসেবে অনেকেই জানবেন। কার্তিক মাস অথবা দামোদর মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্দশী ভগবান বিষ্ণু এবং ভগবান শিবের ভক্তদের জন্য পবিত্র বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ বৈকুন্ঠ চতুর্দশীর দিনে শ্রী হরি, বিষ্ণু এবং ভগবান শিব উভয়েরই পূজা করা হয়ে থাকে খুবই ভক্তির সাথে।

বৈকুন্ঠ চতুর্দশী ব্রত:

পৌরাণিক কাহিনী এবং ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা করলে সাধক বৈকুন্ঠ ধাম লাভ করেন এবং শিবের কৃপায় সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হতে পারেন।

বারানসির বেশিরভাগ মন্দির বৈকুন্ঠ চতুর্দশী উদযাপন করে এবং এটি দেব দীপাবলীর মতো আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব অনুষ্ঠান বলা যেতে পারে। এছাড়া বারানসি ছাড়াও বৈকন্ঠ চতুর্দশী গয়া, ঋষিকেশ, মহারাষ্ট্রের অনেক শহরেও খুবই ধুমধাম ভাবে পালিত হয়।

বৈকুণ্ঠ চতুর্দশীর ব্রতকথা:

ব্রহ্মা নারদ কে এই ব্রত পালনের মাহাত্ম্য বলেন, তিনি বলেন যে, সত্য যুগে কার্তিক মাসের শুক্লা চতুর্দশীর দিন শ্রীবিষ্ণু স্বয়ং বৈকুন্ঠ থেকে কাশিতে যান এবং সেখানে সেই রাতের শেষ অর্থাৎ চতুর্থ প্রহরে মণিকর্ণিকায় স্নান করেন, আর সেখান থেকে ১০০০ সোনার পদ্ম নিয়ে শিব পূজার জন্য তৈরি হন।

তারপর তিনি যখন এক একটা ফুল দিয়ে শিবের এক একটা নামে পূজা করতে শুরু করেন তখন শিব বিষ্ণু কে পরীক্ষা করার জন্য একটি কাজ করেন, তাই নিঃশব্দে ওই এক হাজার পদ্মফুল থেকে একটা পদ্ম ফুল সরিয়ে রাখেন। পূজার সময় একটা পদ্মফুল কম দেখে বিষ্ণু অবাক হয়ে যান এবং তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন।

কিছু সময় পর তার মনে হল যে তাকে তো সবাই পদ্মলোচন বলে ডাকে। আর এই কথা মনে হওয়া মাত্রই বিষ্ণু নিজের আঙ্গুল দিয়ে নিজের পদ্মের মতো একটা চোখ তুলে ফুলের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করেন। তার সঙ্গে সঙ্গে পরম ভক্তি সহকারে শিব পূজা সম্পন্ন করেন।

বিষ্ণুর এইভাবে ভক্তি ও নিষ্ঠা দিয়ে পূজাতে সন্তুষ্ট হয়ে শিব তাকে ত্রৈলোক্য উপাধিতে ভূষিত করেন। এর পাশাপাশি বিষ্ণুকে তার শ্রেষ্ঠ ভক্ত হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে তাকে বর চাইতে বললেন। বিষ্ণু চোখ ফিরে পেলেন, তারপর বিষ্ণু শিব এর কাছে কিভাবে তিনি দৈত্য দানবদের বধ করবেন তার উপায় জানতে চাইলেন। তখন মহাদেব বিষ্ণুকে সুদর্শন চক্র দান করলেন এবং বললেন যে, যে কোনো মহাপরাক্রমশীল দানবকে এই চক্র দিয়ে বধ করা সম্ভব।

এইভাবে মহাদেব শ্রী হরি কে সুদর্শন চক্র দান করে আরো বলেন যে, তিনি বিষ্ণুর পূজাতে খুবই সন্তুষ্ট তাই যে বা যারা শিব ভক্ত হয়ে বিষ্ণুকে অবহেলা করবে সে বা তারা হবে তার (শিবের) সবচেয়ে বড় শত্রু। আর সেই কারণে এই ব্রত পালনে প্রথমে বিষ্ণু পূজা করতে হবে তারপর শিবের পূজা করতে হবে না হলে কিন্তু শিব পূজা গ্রহণ করবেন না।এই ব্রত বৈকুন্ঠ চতুর্দশী ব্রত নামে পরিচিত আর এই ব্রত পালনে বৈকুন্ঠ ধামে স্থান পাওয়া যায়।

বৈকুন্ঠ চতুর্দশী ব্রত পালনে পূজার উপকরণ:

  • বিভিন্ন ধরনের ফল,
  • বিভিন্ন ধরনের ফুল,
  • গঙ্গার পবিত্র জল,
  • ধূপ,
  • প্রদীপ,
  • কর্পূর,
  • চন্দন,
  • অক্ষত,
  • নৈবেদ্য,
  • ঘি,
  • বিষ্ণু ও শিবের মূর্তি অথবা ছবি ইত্যাদি।

বৈকুন্ঠ চতুর্দশীর ব্রত পূজা বিধি:

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, বৈকুন্ঠ চতুর্দশীর ব্রত পালনে পূজা বিধি সম্পর্কে:

১) সবার প্রথমে চতুর্দশীর দিন খুব ভোরে অথবা ব্রহ্ম মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করে এই উপবাসের অথবা ব্রত পালনের সংকল্প গ্রহণ করুন।

২) এরপর ১০৮ টি পদ্ম ফুল দিয়ে শ্রী হরি বিষ্ণুকে ও ভগবান শিব কে পূজা করতে হবে।

৩) বিষ্ণু শিব কে পবিত্র তুলসী পাতা অর্পণ করতে হবে এবং পরিবর্তে বিষ্ণুকে বেলপাতা অর্পণ করবেন।

৪) ভক্তরা স্নান করে সারাদিন উপবাস থেকে উভয় দেবতাকে অক্ষত, চন্দন পিণ্ড, গঙ্গার পবিত্র জল, ফুল, কর্পূর, ধুপ নিবেদনের করে পূজা শুরু করবেন।

৫) তারপর একটি বিশেষ নৈবেদ্য হিসেবে মাটির প্রদীপ ঘি দিয়ে জ্বালাতে হবে।

৬) এরপর এই দিন সারাদিন ধরে বিষ্ণু ও শিবের নাম জপ করতে থাকুন।

বৈকুণ্ঠ চতুর্দশী ব্রত পালনের তাৎপর্য:

প্রতিটি ব্রত প্রতিটি উপবাস কোন না কোন তাৎপর্য বহন করে, আর সেই তাৎপর্য কে কেন্দ্র করেই সকলেই এই ব্রত পালন করার জন্য একেবারে অধীর আগ্রহে থাকেন। বৈকুণ্ঠ চতুর্দশীর দিনটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

এই দিনটি বিশেষ কারণ এই যে, এই দিনে ভগবান বিষ্ণু এবং ভগবান শিবের আরাধনা করা হয়ে থাকে। শিব পুরাণ অনুসারে বৈকুণ্ঠ চতুর্দশীর এই শুভদিনে ভগবান শিব, ভগবান বিষ্ণুকে সুদর্শন চক্র দিয়েছিলেন।

ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এই দিনে যদি কোন ভক্ত এক হাজারটি পদ্ম ফুল দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করেন তবে তিনি বৈকুণ্ঠ ধামে স্থান পাবেন এবং পৃথিবীতে করা সকল পাপ এবং জেনে না জেনে করা ভুলগুলো থেকেও মাফ হয়ে যাবে, পূণ্য অর্জন করতে পারবেন।

এই ব্রত পালনে যে সমস্ত নারী ভক্তি সহকারে উপবাস রেখে ব্রত পালন করবেন তাঁরা খুব ভাগ্যবতী হয়ে থাকেন। এছাড়াও তাঁরা ছেলে, নাতি-পুতি সকলকে নিয়ে আনন্দে জীবন কাটিয়ে শেষ বয়সে শান্তিতে মৃত্যুবরণ করেন এবং আলোকরথে করে বৈকুন্ঠ ধামে যাত্রা করেন। এরপর পরপারে অর্থাৎ মৃত্যুর পর বৈকুন্ঠ ধামে পরম সুখে থাকতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!