Worldwide Bengali Panjika

শ্রী হরি পূজা বিধি বা বিষ্ণু পূজা বিধি – Vishnu Puja Vidhi


শ্রী হরির পূজা (Hari Puja) বা বিষ্ণু পূজা বিধি (Vishnu Puja Vidhi): ভগবান বিষ্ণু, বিষ্ণুর উপাসনা করে মানুষ পরপারে গিয়ে ভালো থাকেন। শাস্ত্র অনুসারে ভগবান বিষ্ণুর সবথেকে উপাসনার শুভদিন হলো বৃহস্পতিবার।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

তাই সেদিন সকালে উঠে ডাল, গুড় এবং লাড্ডু নিবেদন করে যদি ভগবান বিষ্ণুর পূজা করা হয় তাহলে তিনি খুবই প্রসন্ন হন এবং ভক্তদের মনের ছোট থেকে বড় সকল ইচ্ছা পূরণ করে দেন।

মানব জীবনে বেঁচে থাকতে টাকা-পয়সা, ধন-সম্পত্তি, সৌভাগ্য, বাড়িতে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি সব কিছুরই প্রয়োজন থাকে, একটি সুখী জীবন পেতে ঈশ্বরের কাছে প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করা হয়। তবে আপনি যদি নিষ্ঠা ভরে সমস্ত নিয়ম মেনে বিষ্ণুর আরাধনা করে থাকেন তাহলে আপনার সংসারেও সর্বদাই সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করবে।

ভগবান বিষ্ণুর আরাধনায় সংসার জীবনে পার্থিব এবং অপার্থিব লাভ হয়, আর সবশেষে মোক্ষ লাভ করা যায় শাস্ত্র অনুসারে ভগবান বিষ্ণুর বিভিন্ন অবতারের আরাধনায় এক একটি গ্রহের শুভ ফল লাভ করা যেতে পারে। মৎস্য অবতারের আরাধনা করলে কেতুর শুভ ফল লাভ করা যায় বলে জানা যায়। এছাড়া গুপ্ত জ্ঞান, আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করতে সফল ভক্তরা বিষ্ণু পূজা করে থাকেন।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বিষ্ণু পূজার বিশেষ কিছু বিষয় সম্পর্কে:

বেদ ও পুরাণ অনুসারে বৃহস্পতিবার এর উপবাস অত্যন্ত শুভ ফলদায়ক। এই বিষ্ণু উপাসনার জন্য বৃহস্পতিবার উপবাস পালন করলে ভক্তরা সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্তি পান এবং তাঁদের কুন্ডলীতে বৃহস্পতি গ্রহের সমস্ত দোষ দূর হয়ে যায়। ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় ভক্তরা সর্বদাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারেন।

বিষ্ণু পূজার ব্রত কথা:

বহু প্রাচীনকাল আগে এক নগরে এক প্রভাবশালী ও ধনী রাজা রাজত্ব করতেন, তিনি বৃহস্পতিবার উপবাস রাখতেন এবং গরীব দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করতেন, দান করতেন এবং তাদের কোনরকম কষ্ট তিনি দেখতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর স্ত্রী এইসব কিছুতেই পছন্দ করতেন না। একদিন রাজা শিকার করতে গেলে বৃহস্পতি দেব সন্ন্যাসী বেশে তাঁর বাড়িতে আসেন। তখন রানী সেই ঋষিকে বললেন যে তিনি রাজার দান এর প্রতি ভীষণভাবে বিরক্ত। তাই এমন কিছু প্রতিকারের পরামর্শ দিতে হবে যার দ্বারা ঘরে রাখা সমস্ত অর্থ নষ্ট হয়ে যায়।

রানীর এমন কথা শোনার পর বৃহস্পতি দেব বললেন, “তুমি এই টাকা ভালো কাজে ব্যবহার করো যাতে তোমাদের উন্নতি হয়।” কিন্তু রানী বলেছিলেন যে তাঁর এই অর্থের কোন প্রয়োজন নেই। রানীর এই সমস্ত কথা শুনে বৃহস্পতি দেব বললেন, “তুমি যদি তাই চাও তাহলে প্রতি বৃহস্পতিবার গোবর দিয়ে তোমার ঘর মোছো, রাজা কে বৃহস্পতিবার চুল দাড়ি কাটতে বলো, তোমার চুল ধুয়ে দাও, বৃহস্পতিবার তোমার যা কাপড় আছে তা ধোপাকে দাও।” আর সন্ন্যাসীর কথা শুনে রানী প্রতিদিন এই সমস্ত কাজ করতে লাগলেন এবং শীঘ্রই তার সমস্ত ধন-সম্পদ ধ্বংস হতে শুরু করল এবং একসময় তা ধ্বংস হয়ে গেল।

এরপর রাজা খাবারের ব্যবস্থা করতে অন্য দেশে গেলেন, তখন অন্য দেশের রাজা বন থেকে কাঠ কেটে শহরে বিক্রি করতে লাগলেন। এমন এক পরিস্থিতিতে তাঁরা পড়েছিলেন যখন রানী এবং তাঁর দাসীকে সাত দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছিল, তখন রানী তার দাসীকে তাঁর বোনের কাছে পাঠিয়ে তাঁকে সাহায্য চাইতে বললেন। রানীর কথা শুনে দাসী তাঁর বোনের কাছে গেল বৃহস্পতিবার দাসী রাণীর বোনের বাড়িতে পৌঁছলেন, যখন রানীর বোন বৃহস্পতিবার এর ব্রতকথা শুনছিলেন যার কারণে তিনি দাসীর কথার উত্তর দিতে পারেননি। দাসী বাড়ি ফিরে এসে রানীকে সব বললে রানী খুব রেগে গেলেন।

পুজো শেষ করে রানীর বোন তাঁর বাড়িতে এসে বলতে লাগলেন বৃহস্পতিবারের ব্রত কথা শুনছিলেন তাই উত্তর দিতে পারেননি। তারপর রানী তাঁর বোনকে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা খুলে বললেন। তারপর রানীর সেই বোন বললেন বৃহস্পতি দেব প্রতিটি মানুষের মনের ইচ্ছা পূরণ করেন। এরপর রানীর বোন জানালেন বৃহস্পতিবার উপবাস রাখার পদ্ধতি। তাঁর বোনের নির্দেশ করা সেই পদ্ধতি অনুযায়ী রানী ও তাঁর দাসী বৃহস্পতিবার উপবাস রাখেন, তার ফলে ভগবান বৃহস্পতি দেব তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং তাঁদের আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশীর্বাদ প্রদান করেন।

বিষ্ণু পূজার উপকরণ:

এই পূজার জন্য যে নৈবেদ্য আপনি সাজাবেন তার জন্য কিছু ও উপকরণ প্রয়োজন পড়বে সেগুলির মধ্যে রয়েছে:-

  • সিঁদুর,
  • ঘট একটি,
  • জল চৌকি অথবা কাঠের পিড়ি একটি,
  • পাতন বস্ত্র একটি,
  • তীর চারটি,
  • পান ২৫ টি,
  • সুপারি ২৫ টি,
  • কলা ৩২ টা,
  • তিল,
  • হরিতকি,
  • ফল,
  • ফুল,
  • তুলসী পাতা,
  • দুর্বা ঘাস,
  • বেলপাতা,
  • প্রদীপ,
  • ধুপ,
  • ধুনা,
  • নৈবেদ্য একটি,
  • ঘি,
  • গঙ্গাজল,
  • পূজার বস্ত্র দুইটি,
  • আসন অঙ্গুরিয়ক একটি,
  • মধু পর্কের বাটি একটি,
  • দই,
  • মধু,
  • চিনি,
  • সিন্নি তৈরি করার জন্য ময়দা,
  • বাতাসা,
  • ফুলের মালা ইত্যাদি।

শ্রী হরির পূজা (বিষ্ণু পূজা) করার নিয়ম:

১) বৃহস্পতিবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে বিষ্ণু পূজার সংকল্প গ্রহণ করুন মনে মনে।

২) ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তি অথবা ছবি স্থাপন করুন আপনার মন্দির অথবা ঠাকুর ঘরে, সুন্দর একটি জায়গায় চৌকির উপরে পবিত্র কাপড় পেতে।

৩) গঙ্গাজল দিয়ে সমস্ত জায়গেরি পবিত্র করে নিন এবং আচমন করে নিন, এরপর ভগবান বিষ্ণুকে হলুদ বস্ত্র, হলুদ ফুল ও হলুদ নিবেদন করুন।

৪) এর সাথে সাথে ভগবান বিষ্ণুকে গুড় ও ছোলা নিবেদন করুন। ফুলের মালা পরিয়ে দিন।

৫) বিষ্ণুর ১০৮ টি নাম জপ করুন, প্রভুকে ফুল নিবেদন করুন, প্রদীপ জ্বালিয়ে দিন, অবশ্যই সেটা ঘি এর প্রদীপ হলে ভালো হয়, ভোগ, প্রসাদ নিবেদন করুন।

৬) এরপর হলুদের জল মিশিয়ে ভগবানকে অভিষেক করুন এবং হাতে গুড় ও ছোলা নিয়ে বৃহস্পতিবার উপবাসের ব্রতকথা পাঠ করুন।

৭) সবশেষে প্রদীপ ও ধুপের ধোঁয়ায় আরতি করার পর আপনি পূজা সম্পন্ন করতে পারেন।

৮) প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে এই পূজার প্রসাদ ভাগ করে পূজা শেষ করুন এবং সকলের মধ্যে এই পূজার মাহাত্ম্য ছড়িয়ে দিন।

বিষ্ণু পূজার দিন এবং বিষ্ণু পূজার ব্রতী হলে আপনার যে বিষয়গুলি মেনে চলতে হবে:

১) ভগবান বিষ্ণুকে ভোগ নিবেদনের পর কলা দান করে দেওয়া উচিত, তবে উপবাসকারী ভক্ত বা যিনি ব্রত পালন করছেন বা বাড়ির অন্য কারও বৃহস্পতিবারে কলা খাওয়া উচিত নয়।

২) এই শুভদিনে খিচুড়ি খাবেন না অর্থাৎ বিষ্ণু পূজার হলুদ রঙের অনেক গুরুত্ব রয়েছে এবং বৃহস্পতিবার এর সাথে হলুদ রঙের একটা বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। তাই মসুর ডাল ও ভাত মিশিয়ে তৈরি করা খিচুড়ি ও হলুদ রঙের হয় তবে বৃহস্পতিবার ভুল করেও খিচুড়ি খাওয়া উচিত নয়।

৩) এই শুভদিনে চুল, দাড়ি, নখ কাটবেন না যা অশুভ লক্ষনের প্রতীক বলে জানা হয়।

শ্রী হরি অর্থাৎ বিষ্ণু কে সন্তুষ্ট করতে কি করবেন?

১) যেহেতু এই ব্রত বৃহস্পতিবারে পালন করা হয় সেহেতু পূজার সময় ছোলা, ডাল ও গুড়ে নৈবেদ্য দেওয়া হয় তাই সম্ভব হলে এই দিনে খাবারে ছোলা, ডাল ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া লবণও খাওয়া উচিত নয়। আর সম্ভব হলে এই দিনে একই সময় খাবার খাওয়া উচিত। বৃহস্পতিবার ছোলা, ডাল এগুলি গরীব মানুষের মধ্যে দান করাও শুভ বলে মনে করা হয়।

২) যেহেতু ভগবান বিষ্ণু বা শ্রী হরির পছন্দ রং হলুদ রং তাই এই পূজায় যখন ব্রত পালন করে নিজেই সংকল্প গ্রহণ করছেন তখন হলুদ রং বেশি বেশি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। যেমন ধরুন হলুদ ফুল, হলুদ চন্দন, ছোলার ডাল, জাফরান, বেসনের লাড্ডু এবং আপনি যে বস্ত্র পরিধান করে রয়েছেন সেটিও যেন হলুদ রঙের হয়। কৃষ্ণকে হলুদ বস্ত্র অর্পণ করুন এতেই কিন্তু খুব সহজেই আপনি শ্রী হরি কে সন্তুষ্ট করতে পারবেন।

৩) পূজার পর হলুদ রঙের জিনিস দান করলে ভগবান বিষ্ণু এতে খুবই প্রসন্ন হন এবং ঘরে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বিরাজ করে।

৪) বৃহস্পতিবার বিষ্ণুর পূজার পর বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ করা উচিত, এর ফলে শ্রী হরি কে সন্তুষ্ট করে আপনি আপনার মনের ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!