Worldwide Bengali Panjika

তাল নবমী ব্রত নিয়ম ও ব্রতকথা – Tal Navami Vrat


তাল নবমী ব্রত (Tal Navami Vrat): তালগাছ আমাদের কাছে খুবই পরিচিত, গ্রাম বাংলা থেকে শুরু করে এখন বিভিন্ন জায়গায় তাল গাছ লক্ষ্য করা যায়। তবে গ্রামাঞ্চলে বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাল কাঁচা অথবা পাকা, দুইভাবে কিন্তু মানুষ খেয়ে থাকেন এবং দুভাবেই খুবই সুস্বাদু লাগে।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

ভাদ্র মাসের তাল পাকা গরমে তাল নিয়ে মানুষের অনেক রকমের আগ্রহ থাকে, বিভিন্ন ধরনের পদ রান্না করা হয় পাকা তাল দিয়ে। তালের বড়া থেকে তালের পোড়া পিঠে এবং আরো অন্যান্য আইটেম রান্না করা হয়। তালের কাত বের করে তার রুটিও খাওয়া হয়ে থাকে।

তালগাছ সম্পর্কে সকলেই কমবেশি জানেন তাছাড়া এই কবিতাটা তো অনেকেরই মনে থাকার কথা, তাই না ! “তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে” অর্থাৎ তালগাছ সব গাছের তুলনায় একটু বেশি লম্বা হয়।

তালগাছে যখন কচি তাল ধরে তখন সেই তালের শাঁস হিসেবে খাওয়া হয়। আর যখন পেকে যায় তখন সেই তাল ও ভীষণ সুস্বাদু, এছাড়া তালের আটি থেকেও সুন্দর ফোফোলও (ফুল) পাওয়া যায় যা খেতে খুবই সুস্বাদু।

পাকা তালের রস দিয়ে যা যা তৈরি করা যেতে পারে:

তালের বড়া থেকে শুরু করে আরো অন্যান্য সব খাবার তৈরি করা হয় তালের রস বা কাঁত অথবা কাই দিয়ে। তালের মিষ্টি তাই এর সাথে চালের গুড়া এবং গমের আটা মিশিয়ে বানানো হয় তালের বড়া, চালের গুড়া মিশিয়ে বানানো হয় পিঠে, দুধের সঙ্গে তাল এর কাই মিশিয়ে বানানো হয় তাল ক্ষীর।

এছাড়া কোথাও কোথাও খাওয়া হয় তালের রুমালি রুটি। ময়দা আটার সঙ্গে মেখে পরোটা, তালের সরু চাকলি, মানে তাওয়ার উপর রেখে বানানো হলদে সাদা রঙের ফিনফিনে দোসা, খিরে ডুবিয়ে খাওয়া হয়। এছাড়াও রয়েছে কলাপাতায় তালের পোড়া পিঠে, স্পঞ্জ কেক এবং আরো অন্যান্য খাবার।

তালের স্বাস্থ্য গুণ:

ভাদ্র মাসের সময় এই খাবার বিশেষভাবে প্রচলিত, জন্মাষ্টমী থেকে শুরু করে নন্দ উৎসব এবং ভাদ্র মাসের শুক্লা নবমীতে তাল নবমী ব্রত হিন্দু সম্প্রদায়ের এই তিন পূজা পার্বণে মূল উপাদান হল তাল এবং তাল দিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার।

এছাড়া তালের ভেষজ গুণ রয়েছে প্রচুর। বলা হয়ে থাকে পাকা তাল খেলে ঘুম ভালো হয়, মূত্র পরিষ্কার হয়, রক্ত বাড়ে, কফ কমে যায় এবং পিত্তবর্ধক বলে মনে করা হয়।

তাল নবমী ব্রত:

ভাদ্র মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে তাল নবমী পালিত হয়। এই দিনের আগে রাধা অষ্টমী এবং এর ১৫ দিন পূর্বে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়। এই ব্রত সাধারণত পূর্ব ভারতের পালন করতে দেখা যায়।

কিন্তু পূর্ব ভারত ছাড়াও ভারতবর্ষের আরও অন্যান্য জায়গায় এই ব্রত অনুষ্ঠিত হয় খুবই ধুমধাম ভাবে। যেখানে খাওয়া-দাওয়া সাথে আশেপাশের পাড়া-প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনদের ডেকে এই তাল নবমী উৎসবে মেতে ওঠেন গৃহস্থ বাড়ির সকলেই।

তাল নবমী ব্রত কথা:

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীদের মধ্যে অন্যতম দুইজন স্ত্রী হলেন সত্যভামা এবং রুক্মিণী। শ্রীকৃষ্ণের কাছে কে বেশি প্রিয় এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে সবসময় দ্বন্দ্ব লেগেই থাকত। সত্যভামা ছিলেন দুর্ভাগ্যবতী আর রুক্মিণী ছিলেন সৌভাগ্যবতী।

একদিন সত্যভামা কৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করলেন তাঁর এই দুর্ভাগ্যের কারণ কি ? তিনি উত্তরে জানিয়েছিলেন, “এই দুর্ভাগ্যের জন্য তুমি নিজেই দায়ী, তুমি তোমার নিজের দোষে কষ্ট পাচ্ছ”। এরপর সত্যভামা মনের দুঃখে তপোবনে মুনির আশ্রমে গিয়ে উপস্থিত হলেন।

সেই মুনিকে সব খুলে বললেন, তারপর সেই মুনি সত্যভামার ঘটনা শুনে খুবই দুঃখ পেলেন, আর সত্যভামার দুঃখ দূর করার জন্য একটি কাহিনী বললেন।

তাল নবমীকাহিনী:

ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে ভক্তি সহকারে লক্ষ্মী – নারায়ণের পূজা করবে। মাটির উপরে মন্ড প্রস্তুত করবে, তার উপরে ঘট বসাবে, ঘট এর উপরে চন্দন, ফুল ও নৈবেদ্য দিয়ে পূজা করবে। লক্ষ্মী-নারায়ন কে পৃষ্ঠক নিবেদন করবে। প্রথমে নারায়ণ কে পরে লক্ষ্মীর পূজা করতে হবে। এই ব্রত পালন করলে নয় রকম ফল নিবেদন করতে হয়। তার মধ্যে তাল ফল হলো প্রধান এবং অবশ্যই এই ফল দিতে হবে। প্রথমে স্বামীকে খেতে দিয়ে তারপর ব্রাহ্মণ কে পৃষ্ঠক ভোজন করাতে হবে। স্বামীর খাওয়ার পরেই স্ত্রী আহার গ্রহণ করবে।

এই প্রকারে নয় বছর এই ব্রত পালন করতে হয়। তারপর সত্যভামা বন থেকে বাড়িতে ফিরে এলেন এবং মুনির পরামর্শ মতো ব্রত পালন করতে শুরু করলেন। ব্রত যখন নয় বছর সমাপ্ত হলো তখন স্বয়ং নারায়ণ সেখানে উপস্থিত হলেন।

সত্যভামা কে বরদান দিলেন, “তাল নবমীর ব্রতর ফলে তোমার সব দুর্ভাগ্য দূর হলো। খুব তাড়াতাড়ি তুমি সৌভাগ্য শালিনী হবে”। এরপর থেকে তাল নবমী ব্রত পালন করে থাকেন আমাদের গ্রাম বাংলা থেকে শুরু করে সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীগণ।

তাল নবমী ব্রত পালন করার নিয়ম:

অন্যান্য ব্রত পালনের মতো সারাদিন উপোস থেকে সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার পর এই উপবাস ভঙ্গ করতে হয়। যে সমস্ত নারীরা এই তাল নবমী ব্রত পালন করে থাকেন সেই নারীরা জন্ম জন্মান্তরে সধবা থাকেন, সৌভাগ্যবতী হন এবং মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পেয়ে থাকেন।

এই ব্রত নববর্ষ আচরণ করে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তার সাথে প্রতিবছর নয় রকম ফল দেবতাকে নিবেদন করতে হয় এই ব্রত উপলক্ষে। নৈবেদ্য হিসেবে ফল মুলের সাথে তালের লুচি, তালের পিঠা, তালের ফুলুরি, তালের বড়া, তালের ক্ষীর ইত্যাদি নিবেদন করতে হয়।

সাধারণত লক্ষ্মী-নারায়ণের পূজা ও তাল ফলটি নারায়ণকে দান করে তবেই তাল খাবার রীতি রয়েছে বলে মনে করা হয়। এছাড়া এর আগে কখনোই পূজা না দিয়ে তাল খাওয়া যায় না বলে মনে করেন অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। তালের পিঠা, তাল ক্ষীর, ইত্যাদি নিবেদন করার প্রথা আজও প্রচলিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!