Worldwide Bengali Panjika

শ্রীকৃষ্ণের নন্দ উৎসব পালন – Krishna Nandotsava


শ্রীকৃষ্ণের নন্দ উৎসব (Shri Krishna Nandotsava): জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করার সাথে সাথে নন্দ উৎসবের একটি বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে অর্থাৎ যেই দিন জন্মাষ্টমী ব্রত (Janmashtami Vrat) পালন করা হয় তার ঠিক পরের দিন নন্দ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাজা কংসের হাত থেকে তাঁর প্রজাদের রক্ষা করতে মাতা দেবকীর কোলে বিষ্ণুর অষ্টম অবতার রূপে জন্ম নেন শ্রীকৃষ্ণ। পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল রাতে, নন্দ রাজা সেই আনন্দ উৎসব উদযাপন করেছিলেন পরের দিন সকালে।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

সমস্ত বিধি মেনে মধ্যরাত্রে শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি পালন করা থেকে পরের দিন নন্দ উৎসব বাঙালি হিন্দুদের কাছে এক পরম আনন্দের উৎসব। শোনা যায় বাসুদেব কৃষ্ণ কে নন্দরাজের কাছে রেখে আসার পর গোকুলে কৃষ্ণের আবির্ভাব উপলক্ষে নন্দ উৎসবেই প্রথম খাওয়া হয়েছিল তালের বড়া।

কৃষ্ণের অতি প্রিয় এই খাবারটি ভালোবাসেন ছোট থেকে বড় সকলেই। ভাদ্র মাসের বর্ষার সাথে সাথে এই উৎসব যেমন আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে তেমনি খাদ্য রসিকদের কাছে এই উৎসব কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দুধের ক্ষীর থেকে শুরু করে তালের বড়া সমস্ত কিছুই ছোট্ট গোপালের প্রিয় খাবার হওয়ার পাশাপাশি সকলেরই খুবই পছন্দের।

জন্মাষ্টমীর পর নন্দ উৎসবের মাহাত্ম্য:

জন্মাষ্টমীর (Janmashtami) পরের দিন পালিত হয় নন্দ উৎসব। কৃষ্ণের জন্মের পরের দিন গোকুলবাসি মেতে উঠেছিল আনন্দে, আর সেই আনন্দ উৎসবকে নন্দ উৎসব বলা হয়। গোকুল রাজা নন্দ ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের পালক পিতা।

পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল মধ্যরাতে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির মধ্যে এবং নন্দ রাজা সেই আনন্দ উদযাপন করেছিলেন পরের দিন সকালে। কৃষ্ণের জন্মের খবর শুনে সমস্ত গোকুল বাসী উৎসব করেছিলেন। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয় জন্মাষ্টমী আর তারপরের দিন অর্থাৎ নবমী তিথিতে পালিত হয় নন্দ উৎসব।

তাছাড়া মথুরা ও বৃন্দাবনে এই দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়ে আসছে অনেকদিন আগে থেকে। কৃষ্ণের জন্ম উপলক্ষে এটি মূলত খাওয়া দাওয়ার একটি উৎসব। যেমন কোন ছোট্ট শিশু জন্ম নিলে আশেপাশের সকলকে মিষ্টি বিতরণ করা হয় ঠিক তেমনি। কারণ এদিন ঘরে সন্তান আগমনের খুশিতে গোকুলবাসীর মধ্যে মিষ্টি বিলি করেছিলেন নন্দরাজা এবং মা যশোদা।

শ্রীকৃষ্ণের ভোগ:

এর পাশাপাশি এই দিন শ্রীকৃষ্ণের জন্য ৫৬ ভোগ প্রস্তুত করা হয় ৫৬ ভোগ অর্থাৎ ৫৬ রকমের ভোগ ও নৈবেদ্য এদিন কৃষ্ণ কে নিবেদন করা হয়ে থাকে। নন্দ রাজার ঘরে দেবশিশুকে দর্শন করতে এদিন মানুষের ভিড় উপচে পড়েছিল, গোকুল বাসীরা সেখানে ভিড় জমিয়েছিলেন, বৃন্দাবনের বিভিন্ন মন্দিরে এই দিন ধুমধাম করে নন্দ উৎসব পালন করা হয়ে থাকে।

এর পাশাপাশি অনেক জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় যে উঁচু উঁচু জায়গায় বিল্ডিং এর সাথে দড়ি টাঙিয়ে মাঝখানে মাখন এর হাড়ি রাখা হয় এবং সেই মাখন এর হাড়ে নিচে একের পর এক মানুষের কাঁধের উপরে মানুষ ওঠে সেই হাড়ি ভাঙ্গা হয়।

ঠিক যেমনটা শ্রীকৃষ্ণ তার সখাদের নিয়ে হাড়ি চুরি করে মাখন খেতেন। আর সেই হাঁড়ি মা যশোদা থেকে শুরু করে গোকুল বাসীরা খুব উঁচুতে তুলে রাখতেন এই জন্য যে, যেন কোনোভাবেই শ্রীকৃষ্ণ এবং তার বন্ধুবান্ধবরা সেই হাঁড়ির নাগাল না পায়।

নন্দ উৎসব যেভাবে পালিত হয়:

সকালবেলা ছোট্ট গোপালকে মাথায় করে নিয়ে সকলে মিলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। আর সেই কৃষ্ণের রূপ হল ছোট্ট শিশুর মত এবং মাথায় রয়েছে সাপের ফনা যা ছোট্ট শিশুকে ঝড় বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করছে, এমন একটি মূর্তি নিয়ে সকলে মিলে নন্দ উৎসবে বেরিয়ে পড়েন।

প্রতি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন সকলে, সেখানে কাদা মাখামাখি থেকে শুরু করে, বৃষ্টি হলে তো আর আনন্দের শেষ নেই এবং এর পাশাপাশি মিষ্টি, প্রসাদ, আর তালের বড়া বিতরণ করা হয়। নন্দ উৎসবের গান ও রয়েছে, খোল কর্তাল এবং বাজনার সাথে সাথে সেই গান গেয়ে নন্দ উৎসবে হাজির হন বহু ভক্তগণ।

এইভাবে সারাদিন ঘুরতে ঘুরতে আবার সেই ছোট্ট শিশু গোপালকে নিয়ে ঘরে ফেরা হয়। আর এই উৎসবকেই নন্দ উৎসব হিসেবেই আমরা সকলেই জানি, যা প্রাচীনকাল থেকে আজও পর্যন্ত হয়ে আসছে, যা বাঙালি হিন্দুদের কাছে এক বিশেষ পূজা অনুষ্ঠান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!