Worldwide Bengali Panjika

শ্রীকৃষ্ণের শারদ রাসযাত্রা উৎসব – Sharad Rasa Yatra


শ্রীকৃষ্ণের শারদ রাসযাত্রা উৎসব (Sharad Rasa Yatra): হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মূলত বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীরা রাস উৎসব পালন করে থাকেন খুবই আরম্বরপূর্ণ ভাবে। বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় শ্রীকৃষ্ণের প্রকৃতির উৎসবই হল রাস উৎসব। যা শ্রীকৃষ্ণের শারদ রাসযাত্রা উৎসব নামে সকলের কাছে পরিচিত। এই বিশেষ উৎসবে গোপিনীদের সঙ্গে রাধা কৃষ্ণের প্রার্থনা করা হয়। পুরান অনুসারে রাস উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়, তবে এক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন মতভেদ, অনেকে মনে করেন ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মার মহামিলন হলো রাস উৎসব। আবার পুরান অনুসারে জানা যায় শারদ রাস ও বসন্ত রাসের উল্লেখ।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

এই উৎসব বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে অন্যতম প্রধান উৎসব। পুরাণ অনুসারে বৃন্দাবনে থাকাকালীন শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি তাঁদের মনের সব ইচ্ছে পূরণ করবেন এবং তাঁদের সঙ্গে রাসলীলা করবেন। সেই প্রতিজ্ঞা রাখতেই কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে রাধা ও অন্য গোপিনীদের সঙ্গে রাসলীলায় মেতে উঠেছিলেন শ্রী কৃষ্ণ। আর সেই থেকেই শুরু হয় প্রেমের উৎসব রাস উৎসব যা রাস যাত্রা নামেই অনেকেই জানেন।

শ্রীকৃষ্ণের শারদ রাসযাত্রা:

কাহিনী অনুসারে এবং লোককথা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণের সংস্পর্শ পেয়ে গোপিনীদের মনে অহং জন্ম নেয়। তখন শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্হিত হন, গোপিনীরা সেই ভুল বুঝতে পেরে স্তব স্তুতি শুরু করেন। ফলস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণ ফিরে আসেন এবং গোপিনীদের মানব জীবনের পরমার্থ বুঝিয়ে তাঁদের অন্তর আত্মা শুদ্ধ করে দেন। সকল মনের ইচ্ছা পূরণ করে জাগতিক কষ্ট থেকে মুক্ত করেন। বলা হয় এই ভাবেই রাস উৎসবের প্রচলন ঘটে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং গিরিশ চন্দ্রের পরবর্তী সময়কালে বাংলায় রাস উৎসবের বহুল প্রচলন ঘটে।

এছাড়াও মথুরা, বৃন্দাবন, ওড়িশা, মনিপুর, অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের মূলত নদিয়া, কুচবিহারের বিভিন্ন জায়গায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে রাস উৎসব পালিত হয় আজও। যেমন নদীয়ার শান্তিপুর ও নবদ্বীপে শুধু রাধা কৃষ্ণই নন, পূজিত হন আরও অনেক দেব দেবী।

প্রায় টানা তিন থেকে চারদিন পর্যন্ত মহাসমারোহে পালিত হয় এই রাস উৎসব। এমনকি উৎসবের শেষ দিন বের হয় শোভাযাত্রা যা আশেপাশের স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও বহু দূর দূরান্তর থেকে আগত ভক্তগনদের কাছে খুবই আনন্দের উৎসব।

রাস উৎসব উদযাপন:

প্রতিবছর প্রতিটি কৃষ্ণ মন্দিরে রাস উৎসব পালিত হয়। খুবই ধুমধাম ভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালি বৈষ্ণব মতাদর্শীদের প্রাণ এর উৎসব হল এই রাস পূর্ণিমার দিন রাস উৎসব। এছাড়া মনিপুরীদের প্রধান উৎসব এই রাস পূর্ণিমা, মন্দিরে গিয়ে রাধা কৃষ্ণের লীলা কীর্তন দেখার মত।

কীর্তন শেষে অনুষ্ঠিত হয় রাধাকৃষ্ণের পূজা, পূজা শেষে ভক্তরা রাধাকৃষ্ণের বিদ্রোহকে চক্রাকারে ঘুরতে থাকেন। যা মূলত রাধা কৃষ্ণ এবং গোপিনীদের মাটির মূর্তি দিয়ে তৈরি করা। আর এই সম্পূর্ণ বিগ্রহটি একটা চাকাযুক্ত চক্রাকার কাঠামোতে উপবিষ্ট করা থাকে যাকে সহজেই চক্রাকারে ঘোরানো যায়। যাতে এমনটা মনে হয় যে শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের সাথে ঘুরে ঘুরে রাস পূর্ণিমায় রাস উৎসবে মেতে উঠেছেন।

রাস পূর্ণিমা অথবা রাস উৎসবের (রাসযাত্রা) তাৎপর্য:

এই শুভদিনে কৃষ্ণের মূর্তিকে ঘিরে কুমারী মেয়েরা নৃত্য পরিবেশন করে থাকেন। এই পূর্ণিমা তিথি কার্তিক পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। মনে করা হয় এই পূর্ণিমায় উপবাস করলে ১০০ অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান পূণ্য ফল লাভ করা যায়। এই শুভদিনে সূর্য উদয়ের আগে ব্রহ্ম মুহূর্তে স্নান করা শুভ বলে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে প্রাচীনকাল থেকে মানুষ বিশ্বাস করে আসছে।

হিন্দু ধর্মে এই পূর্ণিমার বিশেষ গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য রয়েছে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এই দিনে ভগবান শিব ত্রিপুরাসুর নামে এক রাক্ষস কে বধ করেছিলেন। সেই কারণে এই পূর্ণিমা ত্রিপুরী অথবা ত্রিপুরারী পূর্ণিমা নামেও অনেক জায়গায় পরিচিত। এছাড়া অন্য একটি কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে এই শুভদিনে শ্রীবিষ্ণু মৎস্য অবতার গ্রহণ করেছিলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!