Worldwide Bengali Panjika

শ্রীকৃষ্ণের রাসযাত্রা পূজা বিধি – Rash Yatra Puja Vidhi


শ্রীকৃষ্ণের রাস পূর্ণিমা পূজা বিধি (Rash Purnima Puja Vidhi) রাসযাত্রা পূজা বিধি (Rash Yatra Puja Vidhi): প্রতিবছর শ্রীকৃষ্ণের রাস পূর্ণিমা অথবা রাসযাত্রা এই উৎসব সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি বিশেষ উৎসব। আর যাঁরা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত তাঁরাও কিন্তু এই পূজায় বিশেষভাবে আনন্দ উপভোগ করে থাকেন।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রী রাধা এই দিনটিতে বিশেষভাবে পূজা পেয়ে থাকেন। বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র ও বিভিন্ন কৃষ্ণ মন্দির গুলিতে মহাসমারোহে রাস পূর্ণিমার এই রাস উৎসব (Rash Festival) পালন করা হয়। এই উৎসবটি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে অন্যতম একটি প্রধান উৎসব বলা যায়।

পুরান অনুসারে জানা যায় বৃন্দাবনে থাকাকালীন শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি তাঁদের মনের সব ইচ্ছে পূর্ণ করবেন এবং তাঁদের সঙ্গে রাসলীলা (Rasa lila) করবেন। এই প্রতিজ্ঞা রাখতেই কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে রাধা ও গোপিনীদের সঙ্গে রাস লীলা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ, সেই থেকে শুরু হয় প্রেমের উৎসব রাস উৎসব।

শ্রীকৃষ্ণের রাসযাত্রা পূজার প্রয়োজনীয় উপকরণ:

শ্রীকৃষ্ণের রাস পূর্ণিমা উৎসবে পূজা পালনে পূজার প্রয়োজনীয় উপকরণ:

  • পঞ্চগব্য,
  • পঞ্চগুঁড়ি,
  • রাসমঞ্চ,
  • তিল,
  • ফুল,
  • হরিতকি,
  • দুর্বা ঘাস,
  • তুলসী পাতা,
  • বেলপাতা,
  • ধুপ,
  • প্রদীপ,
  • ধূনা,
  • আসনঅঙ্গরীয়ক দুটি,
  • বরন ডালা,
  • মধুপর্কের বাটি দুটি,
  • ঘি,
  • দই,
  • মধু,
  • বড় নৈবেদ্য দুটি,
  • মাঝারি নৈবেদ্য ৮ টি,
  • কুচানো নৈবেদ্য একটি,
  • কৃষ্ণের ধুতি একটি,
  • রাধার শাড়ি,
  • অষ্টগোপিদের দশ উপাচারে পূজা,
  • ফুলের মালা দুটি,
  • থালা একটি,
  • ঘটি একটি,
  • পান,
  • পানের মশলা,
  • কাঠ,
  • বালি,
  • খোড়কে,
  • চন্দন,
  • করবী ফুল ১০৮ টি,
  • পূর্ণপাত্র একটি,
  • হোমের দ্রব্য,
  • দক্ষিণা।

রাস পূর্ণিমার পূজা বিধি:

রাস পূর্ণিমার দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা করার বিধান রয়েছে, এছাড়া অনেকেই সত্যনারায়ণের পূজা করে থাকেন। এই শুভদিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানীকে সন্তুষ্ট করার জন্য তথা পূজো করার সময় হলো মধ্যরাতে। এর কারণ হলো রাত্রিবেলায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ১৬১০৮ জন গোপিনী দের নিয়ে রাসলীলায় মেতেছিলেন।

তাই মধ্যরাতেই রাসলীলা হয়, সেই সময় পূজা করাটাই শুভ বলে মনে করা হয়। আর যাঁরা মধ্যরাতে পূজা করতে পারবেন না তাঁরা সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেও পূজা করতে পারেন।

১) প্রথমত খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সমস্ত কাজকর্ম সেরে নিয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে অর্থাৎ স্নান সেরে পরিষ্কার বস্ত্র ধারণ করে রাস পূর্ণিমার ব্রত পালন করতে হয়।

২) রাস পূর্ণিমার দিন গঙ্গা স্নান বা নদীতে স্নানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, তাই যদি পারেন তাহলে গঙ্গাস্নান করতে পারেন।

৩) শাস্ত্র তে বলা হয়েছে যে এই শুভদিনে ভগবান স্বয়ং গঙ্গা স্নান করতে আসেন, সেই কারণে এই শুভ দিনে অনেক জায়গায় গঙ্গার ঘাটে প্রদীপের আলো জ্বালানো হয়।

৪) সন্ধ্যা বেলা শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে এই প্রদীপ নিবেদন করা হয়। নিজের গৃহে কৃষ্ণনাম স্মরণ করে স্নান করা উচিত, তারপর স্নান সেরে অবশ্যই গঙ্গাজল মাথায় ছেটাবেন।

৫) এই দিনে স্নানের পরে সবার প্রথমে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তারপর তুলসী তলায় অর্ঘ্য দিয়ে সাতবার তুলসী মন্দিরে বা তুলসী বেদিকে পরিক্রমা করতে হবে।

৬) পরিক্রমা করার সময় মনে মনে সংসারের মঙ্গল কামনা করতে হবে। রাস পূর্ণিমা দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা করার পদ্ধতি গুলি হল ফুল, তুলসী পাতা, চন্দন এবং তাকে ষোড়শ উপাচারে কিছু নৈবেদ্য অর্পণ করতে হবে।

৭) যখন পূজা করবেন সন্ধ্যা বেলায় শুদ্ধ বস্ত্র পরে মনকে পবিত্র করে পূজার আসনে বসবেন, তারপর তুলসী পাতা এবং ফুলগুলিতে চন্দন ছিটিয়ে দেবেন।

৮) তারপর তুলসী পাতার দুই পিঠে চন্দন লাগিয়ে নেবেন, এরপর তুলসী পাতার নিবেদন করতে হবে শ্রীকৃষ্ণের চরণে।

৯) এরপর চন্দন মিশ্রিত তুলসী পাতা রাধারানীর বুকে বা হাতে নিবেদন করতে হবে। যদি গোপাল থাকে তাহলে গোপালের চরণেও দিতে হবে এই চন্দন মেশানো তুলসী পাতা।

১০) শ্রীকৃষ্ণের ছবিতে অথবা মূর্তিতে মালা পরিয়ে দিতে হবে, আর কিছু সুগন্ধযুক্ত ফুল দিয়ে ভগবানকে পূজা করতে পারবেন আপনি নিজে থেকেই।

১১) এই দিনে পূজাতে দুধ দিয়ে তৈরি করা ভোগ নিবেদন অবশ্যই করতে হবে। কেননা দুধের তৈরি মিষ্টান্ন এবং বিভিন্ন ধরনের ভোগ, নৈবেদ্য শ্রী কৃষ্ণের খুবই পছন্দের। এই দিন যতটা সম্ভব কৃষ্ণ নাম জপ করতে হবে, স্মরণ করতে হবে।

১২) এই দিনে একবার কৃষ্ণ নাম জপ করলে তা হাজার বার করার সমান পূণ্য লাভ করা যায়। এই পূজার দিন শ্রীকৃষ্ণের অষ্টতর শতনাম পাঠ করলেও বিশেষ সুফল লাভ করতে পারবেন।

রাস পূর্ণিমা অথবা রাসযাত্রার তাৎপর্য:

এই পূর্ণিমা তিথি কার্তিক পূর্ণিমা নামেও পরিচিত এবং মনে করা হয় এই পূর্ণিমার দিন উপবাস করলে ১০০ অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান পূণ্য লাভ করা যায়। এই শুভদিনে সূর্যোদয়ের আগে ব্রহ্ম মুহূর্তে স্নান করা শুভ বলে ধর্মীয় বিশ্বাস চলে আসছে প্রাচীনকাল থেকে। হিন্দু ধর্মে এই পূর্ণিমার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এই শুভদিনে ভগবান শিব ত্রিপুরাসুর নামে এক রাক্ষস কে বধ করেন। আর তাই এই পূর্ণিমা ত্রিপুরী বা ত্রিপুরারী পূর্ণিমা নামেও অনেক জায়গায় পরিচিত। আবার অন্য একটি কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে এই শুভদিনে শ্রীকৃষ্ণ অথবা শ্রীবিষ্ণু মৎস্য অবতার ধারন করেছিলে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!