বিহারের ক্ষেত্র মেলা (Kshetra Mela Bihar): বিভিন্ন জায়গা ভেদে সেখানকার স্থানীয় কিছু মেলা এবং উৎসব পার্বণ রয়েছে, যা খুবই নামকরা এবং বহুদূর থেকে অনেক মানুষ সেখানে সেই বিশেষ মেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য ভিড় জমিয়ে থাকেন।
প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)
তবে এটা জানা যায় যে এশিয়ার বৃহত্তম গবাদি পশুর মেলা হল এই ক্ষেত্র মেলা অর্থাৎ বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সোনপুর গ্রামের এই মেলাটি বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এটি সোনপুর মেলা, হরিহর মেলা, ছত্তার মেলা বা ক্ষেত্র মেলা নামেও পরিচিত।
এই মেলাটি প্রতিবছর নভেম্বর মাসে হরিহর ক্ষেত্রের পবিত্র নদী গঙ্গা ও গণ্ডক এর সঙ্গমে অনুষ্ঠিত হয়। কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় মেলার সূচনা হয় এবং এই মেলা সম্পূর্ণ একমাস ধরে চলতে থাকে।
বিহারের ক্ষেত্র মেলার বৈশিষ্ট্য:
এই মেলাটি শুরু হয় বৈদিক যুগ থেকে, শুরুর প্রথম দিক থেকে এখনো পর্যন্ত মেলার অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং লোকমুখে শোনা কথা অনুসারে মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্র গুপ্ত মৌর্য তার সেনাবাহিনীর সমস্ত ঘোড়া ও হাতি এই মেলা থেকেই কিনতেন।
একসময় এই মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল ঘোড়া ও হাতি কেনাবেচা। ঘোড়া, হাতি ছাড়াও গরু, ষাঁড়, খরগোশ, সহ নানা ধরনের পাখি ও গবাদি পশু পাওয়া যায়। তাছাড়া গবাদি পশুদের উপরে আইন জারি হওয়ার পর থেকে ২০০৪ সালের পর থেকে বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইন জারি হওয়ায় এই সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়।
তারপর থেকে শুধুমাত্র গবাদি পশু কেনাবেচা করা হয় অর্থাৎ গরু, ছাগল, মহিষ আরো অন্যান্য গবাদি পশু। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মেলাটি হয়ে ওঠে এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম। নব্বই দশক থেকে বিহার সরকার মেলার আয়োজনের দায়িত্ব নিয়ে আসছে।
বিহারের ক্ষেত্র মেলার অনুষ্ঠান:
১৯ শতকের শেষের দিকে এই মেলায় বিভিন্ন ধরনের খেলা যেমন ধরুন ক্রিকেট, পোলো, জিমন্যাস্টিক, এমনকি নৃত্য অনুষ্ঠান লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু একটার পর একটা বছর যাওয়ার সাথে সাথে মানুষের বিনোদনের জায়গা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে থিয়েটার গুলিও পাল্টেছে তাদের বিনোদনের রূপ। বিনোদনের জন্য থিয়েটার গুলিতে এসেছে অশ্লীল অথবা বোল্ড বিষয়বস্তু।
যে মেলাটি আগে শুধুমাত্র হাতি, ঘোড়া, গরু, মহিষ এর কেনার জন্য বিশেষ মেলা হিসেবে চেনা হতো সেটা আর বর্তমানে গবাদি পশু কেনাবেচার মেলা বলে মনে করা হয় না। সোনপুর অথবা ক্ষেত্র মেলার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে তার প্রধান আকর্ষণ “শোভা সম্রাট থিয়েটার” অর্থাৎ এখানে রাত্রি নামার সাথে সাথেই স্বল্পবসনা নারীরা নৃত্য অনুষ্ঠান করে আর সেই অনুষ্ঠানে সকলে বেশিরভাগ সময়টা কাটিয়ে থাকেন।
বিহারের ক্ষেত্র মেলার ইতিহাস:
কাহিনী অনুসারে জানা যায় এবং বিশ্বাস করা হয় যে, একসময় সোনাপুর গজ ও গ্রহ অর্থাৎ হাতি বা কুমিরের অন্তহীন লড়াইয়ের একটি রণক্ষেত্র ছিল। গল্প অনুসারে হাতিটি হ্রদে স্নান করতে এসেছিল এবং এমন সময় একটি কুমির যেটি এতক্ষণ জলে লুকিয়ে ছিল হাতির একটি পা ধরেছিল।
কথিত আছে কুমিরের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার লড়াই বছরের পর বছর ধরে চলেছিল। আর কুমিরের দুর্বল মুহুর্তে হাতিটি তাকে রক্ষা করার জন্য ভগবান বিষ্ণুর কাছে প্রার্থনা করেছিল। অনেক প্রার্থনা এবং ভক্তির পরেই ভগবান বিষ্ণু নিজেই হাতিকে রক্ষা করেছিলেন।
ঐতিহাসিকভাবে এই মেলার উৎস রাজা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনকালে খুঁজে পাওয়া যায়। আর এই কারণেই এইটি পবিত্র নদীর গঙ্গার উপরে হাতি এবং ঘোড়া কিনতেন, কাহিনী অনুসারে জানা যায় সেই নির্দিষ্ট সময়ে সোনাপুর শুধু একটি ধর্মীয় স্থান ছিল এবং হাজীপুরে মেলা বসতো। যাইহোক ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে এর সবই পরিবর্তিত হয় এবং তখন থেকে এই স্থানটি এই মেলার স্থান হয়ে ওঠে।
বিহারের ক্ষেত্র মেলার উদ্দেশ্যে পর্যটকদের আনাগোনা:
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় যেখানে বিশেষ আকর্ষণ থাকে সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা তো থাকবেই। সোনাপুর মেলা পর্যটকদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র গবাদি পশু কেনাবেচা করার প্রতিশ্রুতি দেয় না, এই মেলা বরং মজার ক্রিয়াকলাপের একটি সুন্দর মিশ্রণও বটে।
অনেক ভক্তগণ শক্তিশালী গঙ্গায় পবিত্র ডুব দিতে আসেন, কারণ এই সময়টিকে আত্মশুদ্ধির জন্য বেশ শুভ বলে মনে করা হয়। এই মেলাতে অনেকে বিভিন্ন জাতির কুকুর, বিড়াল, পাখি, গবাদি পশু এই সমস্ত কেনার জন্য অথবা বিক্রি করার জন্য এসে ভিড় জমান।