Worldwide Bengali Panjika

মহালয়া ও শ্রাদ্ধ – Mahalaya and Shraddha


মহালয়া (Mahalaya) পার্বণ শ্রাদ্ধ (Mahalaya Shraddha) এর গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের শেষ নেই। তবে তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হলো দুর্গাপূজার (Durga Puja) সাথে জড়িত মহালয়া এবং এই মহালয়ার দিন মহালয়া পার্বণ শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। তিথি অনুসারে মাসে দুটি পক্ষ সৌর আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথির নাম হলো মহালয়া।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

সূর্য যখন কন্যা রাশিতে প্রবেশ করে তখন পিতৃপক্ষ শুরু হয়। মহালয়ায় পিতৃপক্ষ শেষ করে দেবীপক্ষের দিকে যাত্রা করা শুরু হয় এবং সবচেয়ে বড় উৎসব বাঙালিদের দুর্গাপূজা চলে আসে।

মহালয়া পার্বন শ্রাদ্ধ সম্পর্কিত কাহিনী:

মহাভারতে (Mahabharat) উল্লেখ আছে যে, দাতা কর্ণের মৃত্যু হলে তাঁর আত্মা স্বর্গে গমন করে। সেখানে তাকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন কর্ণ সারা জীবন তো স্বর্ণই দান করেছেন, কোনো খাদ্য প্রদান করেননি, তাই সেই কারণে তাকে স্বর্ণ খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হবে এবং সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট হতে হবে।

কর্ণ বলেন তিনি যেহেতু তাঁর পিতৃগণের সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না, তাই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পিতৃ গণকে সোনা দান করেননি। এই কারণে কর্ণ কে ষোলো দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পিতৃ লোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। আর এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়ে যায় সকলের কাছে।

মহালয়া পার্বণ শ্রাদ্ধ তে যে কাজগুলি করা হয়:

যেহেতু কর্ণ মর্ত্যে আসেন, কিন্তু তাঁর মৃত পূর্বপুরুষদের আত্মা ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর থাকেন, পূর্বপুরুষদের হাতে একটু শ্রাদ্ধ আহার পেলেই তাঁরা পরম তৃপ্তি লাভ করবেন। জল দানের মাধ্যমে পিতৃ লোকের তৃপ্তি সাধনই হল তর্পণ। আর এই তর্পণ মহালয়ার দিনেই করা হয়, তর্পণ মানে হল খুশি করা। সনাতন ধর্মীয় কোন শুভ কাজ করতে গেলে, বিবাহ করতে গেলে, প্রয়াত অর্থাৎ মৃত পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করে তাঁদেরকে খুশি করে সেই শুভ কাজটি করতে হয় অথবা সেই শুভ কাজের সংকল্প নিতে হয়, ব্রতী হতে হয়।

যাঁদের পিতা-মাতা মারা গিয়েছেন তাঁদের পিতা-মাতার জন্য, তার সঙ্গে সমগ্র জীবজগতের জন্য তর্পণ করতে হয়, কার্যাদি অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। পিতৃ তর্পনের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে আমরা মানসিক ও আত্মিক সংযোগ স্থাপন করি। তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা (Shraddha) ও প্রণাম নিবেদন করে থাকি এবং আশীর্বাদ প্রার্থনা করে থাকি।

মহালয়া পিতৃ তর্পণে ব্রহ্ম লাভ করবেন কিভাবে?

পিতৃ তর্পণ (Pitri Tarpan) শুধুমাত্র বছরের একটা সময়ের জন্য নয়। শাস্ত্রীয় নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন পিতৃপুরুষদের আত্মার প্রত্যেক দিনের জন্য তর্পণ করা উচিত। সব সময় তর্পনের কারণে স্বর্গবাসী পিতৃপুরুষদের আশীর্বাদ লাভ করা যায়। সে ক্ষেত্রে সন্তান সন্ততিরা ভালো থাকে এবং কয়েক লক্ষ যোনি ভোগ করার পর মানব জন্ম লাভ করে পিতৃগণ, ঋষিগণ এবং দেবগন প্রতিটি পুত্রের যতটা সম্ভব শোধ করা একান্ত প্রয়োজন।

বায়ু পুরাণ অনুসারে জীবিত কালে পিতামাতার আদেশ পালন করা আর পরলোক গমনের পর বাৎসরিক মৃত্যু তিথিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন পূর্বক ব্রাহ্মণ ভোজন করানো এবং বিষ্ণুপাদ পদ্মে পিন্ডদান করলে পুত্রের কর্তব্য সিদ্ধ হয় বা পুত্র হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যায়। মুখ্য চান্দ্র ভাদ্র ও গৌণচন্দ্র আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষে পরলোকগত পিতৃপুরুষগণ কে জল তর্পণ করা অবশ্যই প্রয়োজন। এই পক্ষকে পিতৃপক্ষ, অপরপক্ষ বা প্রেতপক্ষ বলা হয়। শুধুমাত্র বছরের এই সময়টিতে পিতৃপুরুষ গণ জল পাওয়ার জন্য মর্ত্য লোকের কাছাকাছি আসেন। তাই তাঁরা বংশ তে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের কাছে তিল তর্পণ ও পার্বণ শ্রাদ্ধ পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে আসেন।

তিল তর্পণ ১৫ দিনের জন্য। তর্পণ শুরু করা হয় কৃষ্ণ প্রতিপদ তিথি থেকে শেষ হয় মহালয়া অমাবস্যায়। যে ব্যাক্তি ১৫ দিন তর্পণ করতে পারবেন না তিনি ষষ্ঠী তিথি থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত এই তর্পণ করতে পারবেন। এই রীতিতে যাঁদের অসুবিধা হবে তাঁদের জন্য অষ্টমী থেকে অমাবস্যা মোট আট দিন ধরা হয়। এইভাবে একাদশী তিথি থেকে অমাবস্যা মোট পাঁচ দিন তর্পণ করা যায়। আর একেবারেই অসমর্থ্য ব্যক্তির পক্ষে শুধুমাত্র একদিন অথবা অমাবস্যার দিন বা মহালয়ার দিন তর্পণ করা পুত্রের একমাত্র কর্তব্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!