Worldwide Bengali Panjika

কৌশিকী অমাবস্যার ব্রত পালন – Kaushiki Amavasya Vrat


কৌশিকী অমাবস্যার ব্রত পালন – (Kaushiki Amavasya Vrat): বিভিন্ন অমাবশ্যার সাথে সাথে ভাদ্র মাসের অমাবস্যা তিথিকে ‘কৌশিকী অমাবস্যা’ (Kaushiki Amavasya) যেমন বলা হয় তেমনি এই পুণ্য তিথিকে ‘অলকা অমাবস্যা’ (Alka Amavasya) ব্রত পালনেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এবং এই রীতি চলে আসছে বহুদিন আগে থেকে। শুধু কালী ঠাকুরই নয়, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে শ্রী হরি এবং দেবী লক্ষ্মীরও পূজা করা হয়ে থাকে।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

কৌশিকী অমাবস্যার ব্রত হল ভাদ্র মাসের এক অনন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ শুভক্ষণ। একটানা ছয় বছর ধরে পালন করার নিয়ম রয়েছে এই কৌশিকী অমাবস্যার। ব্রত পালনের জন্য যিনি ব্রত পালন করবেন সেই ব্যক্তি অথবা সেই মহিলাকে প্রতিবছর লক্ষ্মী-নারায়ণের পুজো করার পাশাপাশি দুটি ঘি এর প্রদীপ ও চারটি তিলের তেলের প্রদীপ জ্বালিয়ে ব্রত পালন করতে হয়।

কৌশিকী অমাবস্যা ব্রত পালনের কিছু নিয়ম ও রীতি:

আগেই তো জানলাম যে ছয় বছর টানা এই ব্রত পালন করে আসতে হয়, পাশাপাশি দুই বছর টানা হবিশ্যির অন্ন ও এক বছর শুধু ফল আহার করে থাকার নিয়ম রয়েছে। ব্রত পালন করার শেষে ব্রাহ্মণ ভোজন করাতে হয় এবং সেই ব্রাহ্মণদের দক্ষিণা দান করতে হয়, ভাদ্র মাসের এই পূর্ণ তিথিকে ‘তারা নিশি’ ও বলে থাকেন অনেকেই। দশমহাবিদ্যার অন্যতম দেবী তারা কে এই দিন বিশেষভাবে পূজা অর্চনা করা হয়ে থাকে।

কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, এই কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতেই তারা মায়ের একনিষ্ঠ ভক্ত তথা সাধক বামাক্ষ্যাপা মহাশ্মশানে শ্বেত শিমুল গাছের নিচে উগ্র তারা সাধনা করে তারা মায়ের দর্শন পেয়েছিলেন, সাধনার মাধ্যমে পেয়েছিলেন সিদ্ধিলাভও। তারা সাধনায় তুষ্ট হয়ে দেবী তারা বামাক্ষ্যাপা কে দর্শন দিয়েছিলেন, মহাশ্মশানও নাকি এক মহাজাগতিক আলোয় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল সেই দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শিরাও এই আলোর শোভায় প্রভাবিত হয়েছিল।

এই সময় তারাপীঠের মহাশ্মশানে ভিড় করে থাকেন দেশ-বিদেশের সাধু সন্ন্যাসীরাও। তন্ত্রসাধকদের কাছে এক পবিত্র ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তিথি হিসেবে এই কৌশিকী অমাবস্যা আজও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, এই তিথিতে শুভক্ষণে স্বর্গ ও নরকের দরজা খুলে যায়। এই দিনেই সাধক কুণ্ডলিনী চক্র কে জয় করতে পারেন।

এর পাশাপাশি এই শুভ দিনে তন্ত্র সাধনা ও বৈদিক মতে ইষ্ট দেবতা ও নবগ্রহকে পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে, শ্মশানে যজ্ঞ করার মাধ্যমে তুষ্ট করারও রীতি প্রচলিত রয়েছে, সারারাত ধরে মহাশ্মশানে চলে সাধনা এবং যজ্ঞ। কৌশিকী অমাবস্যার শুরু বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই তারাপীঠের মহাশ্মশানে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক সাধু সন্ন্যাসী। তবে জানা যায় যে, এই শুভদিনে তারা মায়ের পূজা করলে ও দ্বারকা নদীতে স্নান করলে পূণ্য লাভ করা যায়, তেমনি কুম্ভ স্নানের সমান ফল পাওয়া যায়। তারা মায়ের পাশাপাশি এই দিন শ্মশানকালীর ও পূজা করা হয়ে থাকে, মহাশ্মশানে রয়েছে তারা মায়ের আসল শিলা পাদুকা, তার পাশেই রয়েছে বামাক্ষ্যাপার সমাধি।

কৌশিকী অমাবস্যার রাতে কি করবেন জেনে নিন:

শাস্ত্র মতে কৌশিকী অমাবস্যার মাহাত্ম্য অন্যান্য অমাবস্যা তিথির থেকে অনেকটাই আলাদা। তন্ত্র মতে যাঁরা দেবীর সাধনা করেন তাঁদের জন্য এই রাতের বিশেষ গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য রয়েছে। তবে তো চলুন জানা যাক কৌশিকী অমাবস্যার রাতে কি এমন কাজ করলে সংসার থেকে সমস্ত অশুভ শক্তি দূর হয়ে যাবে এবং মা তারার আশীর্বাদ লাভ করতে পারবেন:-

  • জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে কৌশিকী অমাবসায় সংযম পালন করা খুবই জরুরী, তাই এই শুভদিনে উপবাস পালন করতে পারলে খুবই ভালো এবং সম্পূর্ণ রূপ উপবাস করতে না পারলে নিরামিষ আহার গ্রহণ করতে ভুলবেন না।
  • কৌশিকী অমাবস্যায় মা তারার পায়ে রক্ত জবা ফুল ও লাল সিঁদুর নিবেদন করে ভক্তি ভরে মায়ের কাছে প্রার্থনা করাটা জরুরী। এর ফলে মা তারার আশীর্বাদে আপনার জীবন থেকে অমাবস্যার কালো ছায়া দূর হয়ে যাবে এবং জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
  • কৌশিকী অমাবশ্যার সন্ধের সময় বাড়ির মূল প্রবেশ পথ অর্থাৎ সদর দরজার সামনে দুপাশে দুটো তিলের তেলের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখবেন, এর ফলে আপনার সংসার থেকে সব অশুভ শক্তি দূর হবে এবং শুভ শক্তির আগমন ঘটবে।
  • কৌশিকী অমাবস্যায় সন্ধের সময় বাড়ির কাছাকাছি কোন কুয়ায় এক চামচ দুধ ঢালতে পারেন। কুয়া না থাকলে কোন গর্ত তে দুধ ঢালতে পারেন এর ফলে মা তারার আশীর্বাদে জীবনের সমস্ত বাধা বিপদ দূর হয়ে যায়। যা শাস্ত্র অনুসারে জানা যায়।
  • এই অমাবস্যা তিথিতে আপনার বাড়িঘর খুবই ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে কোথাও কোন নোংরা আবর্জনা থাকা চলবে না। তবে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বিশেষভাবে বাড়ির সামনে উঠোন থাকলে সেটিও ভালো করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখুন। কেননা সবাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই পছন্দ করে, নোংরা আবর্জনাতে কোন শুভ শক্তি থাকতে পারে না।
  • এই অমাবস্যার দিনে কোনরকম এঁটো-বাসন, থালা ফেলে রাখবেন না। নোংরা জামা কাপড় এক জায়গায় জড়ো করে রাখবেন না এবং যদি কোন অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, কাপড় জমা থাকে সেগুলি কাউকে দান করে দিতে পারেন অথবা যদি খুবই খারাপ হয়ে যায় ফেলে দিতে পারেন।
  • কৌশিকী অমাবস্যার রাতে ভুলেও বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে যাত্রা করবেন না, এই দিন যাত্রায় অশুভ প্রভাব আসতে পারে, পথে দুর্ঘটনা ঘটার বিপুল সম্ভাবনা থেকে যায়।
  • এই দিন উপোস রাখতে পারলে খুবই ভালো আর যদি না রাখতে পারেন তাহলে আমিষ খাবার খাবেন কেননা এর ফলে শরীরে নেগেটিভ এনার্জি বৃদ্ধি পায় সহজেই জীবনে অমাবস্যার কালো ছায়া অথবা অশুভ প্রভাব পড়তে পারে তাই সাবধান হয়ে যান আর আমিষ খাওয়া এই দিন ছেড়ে দিন।
  • হিন্দু সংস্কার অনুযায়ী অমাবস্যার গর্ভধারণ করা খুবই অশুভ। অমাবস্যা ছাড়াও পূর্ণিমা, চতুর্থী, ষষ্ঠী, অষ্টমী এবং চতুর্দশী তিথিতে গর্ভধারণ অশুভ বলে মনে করা হয়। তাই এই দিন শারীরিক সঙ্গম একেবারেই উচিত নয়। এই দিন সমস্ত রকমের শারীরিক সম্পর্ক থেকে এড়িয়ে চলুন। যাঁরা ঘরে গর্ভবতী মহিলা আছেন তাঁরা যেন এই দিন বাড়ি থেকে কোথাও বের না হন।
  • যদি কোন একান্তই জরুরী কাজে বাড়ির বাইরে বের হতেই হয় সঙ্গে অবশ্যই তুলসী পাতা রাখুন। তবে অমাবস্যার দিন তুলসী পাতা তুলতে নেই, কাজেই আগে থেকে তুলে রাখতে পারেন।
  • সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো কৌশিকী অমাবস্যার রাতে বাড়ির সদর দরজার সামনের দুটি পাশে তিলের তেলের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখুন, এই তেলের গন্ধে কোন তন্ত্রের প্রভাব আপনার জীবনে পড়বে না। তন্ত্রসাধক দের জন্য এই দিনটি অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ তাই এই দিন অনেকেই অনেক কিছু করে থাকতে পারেন। আর এই ধরনের বিদ্যাও ব্যবহার করতে পারেন অনেকে, তাই যাঁরা আপনার ক্ষতি চাইতে পারেন বলে আপনার মনে হয় তাঁদের থেকে এড়িয়ে চলুন এবং অবশ্যই সদর দরজায় এই প্রদীপ জ্বালাতে একেবারেই ভুলবেন না।

কৌশিকী অমাবশ্যার পূজা করার নিয়ম:

কৌশিকী অমাবশ্যার কালীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এবং এই পূজা বিশেষভাবে করা হয়। এই বিশেষ দিনটিতে অনেকেই বাড়িতে কালীপুজো করে থাকেন তবে উপাচারে কোন ত্রুটি করা যাবে না। কারণ এই পূজার আয়োজন এ সামান্য ভুল ত্রুটি হলেই নাকি মা কালী খুবই রুষ্ট হন।

বাড়িতে যদি কেউ পুজো করতে চান, তাহলে সারা দিন রাত একটা ঘিয়ের প্রদীপ ঠাকুরের আসনের সামনে জ্বালিয়ে রাখুন। সেটা যেন কিছুতেই নিভে না যায়, সে দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। তবে চিন্তা করার কিছু নেই খুব বেশি আয়োজন লাগে না এই পূজায়, সামান্য আতপ চাল, একটা নারকেল, ১০৮ টি জবা ফুলের মালা এবং ঘি দিয়ে পূজা করতে হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!