Worldwide Bengali Panjika

শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা পূজা পদ্ধতি – Vishwakarma Puja


শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা পূজা (Vishwakarma Puja Vidhi): হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিভিন্ন পূজা অর্চনার মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পূজা হলো বিশ্বকর্মা পূজা, তিনি বিভিন্ন জায়গাতে পূজিত হয়ে থাকেন। বাড়িতেও অনেকে পূজা করে থাকেন তাছাড়া যেখানে কোন কিছু সৃষ্টি হয়, তৈরি হয় অথবা কোন কলকারখানা, মেশিনপত্র সবকিছুতেই তিনি পূজিত হয়ে আসছেন।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

বিশ্বাস করা হয় যে, ভগবান বিশ্বকর্মা সত্য যুগের স্বর্গ, ত্রেতা যুগের লঙ্কা, দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী এবং কলিযুগের হস্তিনাপুর সৃষ্টি করেছিলেন এমনকি সুদামাপুরিও ভগবান বিশ্বকর্মার হাতেই নির্মাণ হয়েছিল।

বিশ্বকর্মা পূজা:

যেকোনো সৃষ্টি মানে সেখানেই বিশ্বকর্মা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কেননা তিনি হলেন দেবতাদের কর্মকার অর্থাৎ বিশ্বের নির্মাণকর্তা। সেই কারণেই তাঁকে বিশ্বকর্মা বলা হয়। তাছাড়া অনেকের কাছে বিশ্বকর্মা কে স্বর্গের কারিগর হিসেবেও পরিচিত। শিল্পী ও নির্মাতাদের দেবতা হলেন বিশ্বকর্মা।

কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেছিলেন শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা (Shri Shri Vishwakarma)। এই পূজার দিন কলকারখানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতিরও পূজা করা হয়, মহাভারত অনুযায়ী বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পকলার দেবতা।

শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মার স্বরূপ:

তিনি হলেন সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, সকল দেবতার প্রাসাদ তৈরি করা থেকে সকল প্রকার অলংকারের নির্মাতাও তিনিই করেছিলেন, বিশ্বকর্মার স্বরূপ হিসেবে জানা যায় যে, তাঁর চারটি হাত, মাথায় রাজার মুকুট, হাতে জলের কলস, বই, দড়ির ফাঁস ও অপর হাতে থাকে একটি যন্ত্র। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী বিশ্বকর্মা হলেন দেবতাদের শিল্পী। তাই তিনি দেব শিল্পী নামেও পরিচিত। বৃহস্পতির ভগিনী যোগসিদ্ধা তাঁর মাতা এবং অষ্টম বসু প্রভাস হলেন তাঁর পিতা। আর বিশ্বকর্মা ঠাকুরের বাহন হল হাতি।

শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা, তিনি তৈরি করেছিলেন বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশুল, কুবেরের যন্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকের শক্তি প্রভৃতি। এছাড়া শ্রী ক্ষেত্রের প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মূর্তিও কিন্তু নির্মাণ করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। তবে এখনকার ভাষায় এক কথায় বলা যেতে পারে তিনি হলেন দেবতাদের ইঞ্জিনিয়ার। বিশ্বকর্মা পূজা হিন্দুদের একটি বেশ বড় ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান। নতুন কিছু তৈরীর কারখানাতে অথবা কোন যন্ত্রপাতিতে বিশ্বকর্মা পূজা করে তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে সেই শিল্পকলাকে এবং সেই সৃষ্টিকে আরও বাড়িয়ে তোলার প্রার্থনা করা হয়।

বিশ্বকর্মা পূজার উপকরণ:

যদি পুরোহিত দিয়ে পূজা করতে চান তাহলে পুরোহিত বরণ ১, সিঁদুর, তিল, হরিতকি, পঞ্চগুড়ি, পঞ্চগব্য, পঞ্চরত্ন, ঘট ১, পঞ্চ পল্লব, কুণ্ড হাড়ি ১ টি, তেকাঠা ১ টি, দর্পণ, ৪ টি তীর, ঘট, গামছা, বরণ ডালা, শীষযুক্ত ডাব ১ টি, একসারা আতপ চাল, পুষ্প অথবা ফুল, দুর্বা ঘাস, তুলসী পাতা, ধুপ, ধুনা, প্রদীপ, বিশ্বকর্মার ধুতি ১ টি, আসন আঙ্গুরিয়ক ১ টি, মধুপর্কের বাটি, ঘি, দই, মধু, নৈবেদ্য ১ টি, কোচা ফলের নৈবেদ্য ১ টি, চন্দ্র মালা ১ টি, ফুলের মালা ১ টি, থালা ১ টি, ঘটি ১ টি, পান, পানের মশলা, খোড়কে, বালি, কাঠ, গাওয়া ঘি ১ পোয়া, পূর্ণ পাত্র ১ টি, আরতী এবং দক্ষিণা।

শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা পূজার পদ্ধতি:

অনেকেই ঘরোয়া ভাবে পূজা করে থাকেন আবার অনেকেই পুরোহিত ডেকে থাকেন। আবার অনেকেই পুরোহিত ডাকেন না তবে সে ক্ষেত্রে আপনি নিজেই ভক্তিভরে নিষ্ঠা ভরে এই পূজা করতে পারেন। বিশ্বকর্মা পূজার দিন দেবতাদের শিল্পী বিশ্বকর্মা কে পূজা করার জন্য আপনাকে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চললেই এই পূজা সম্পন্ন করতে পারবেন।

  • এই দিনে কল-কারখানার মেশিন গুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে এবং লোহার তৈরি বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার না করায় শুভ।
  • খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে ভগবান বিষ্ণু ও বিশ্বকর্মার মূর্তির পূজা করতে হয়।
  • সবার প্রথমে স্নান সেরে পরিষ্কার এবং শুদ্ধ কাপড় পরতে হবে, তারপর ঠাকুর ঘরে ঢুকতে হবে এরপরে বিশ্বকর্মা পূজার উপকরণ গুলি একে একে সাজিয়ে নিতে হবে।
  • সেই উপকরণ গুলির মধ্যে রয়েছে যেমন ধরুন গঙ্গা জল দিয়ে ঘর ভরা এবং ঘটের উপরে আমের পাতা সহ শীষযুক্ত ডাব রাখতে হবে, তারপর ঘট পাত্রটি যদি মাটির হয় তবে ঘট পাত্রটিকে পাটের দড়ির বেড়ের উপরে রাখতে হবে।
  • এরপর খড়ি মাটি দিয়ে পুজোর স্থানে আলপনা আঁকতে হবে, যদি পারেন তাহলে চালের গুঁড়োর আলপনাও দিতে পারেন।
  • তারপরে আতপ চালের নৈবেদ্য সাজিয়ে রাখুন, এরপর ফুল, বেল পাতা দিয়ে বিশ্বকর্মা পূজার বই পড়ে পূজা শুরু করতে হবে।
  • বিশ্বকর্মা পূজার দিন বিষ্ণু এবং বিশ্বকর্মা উভয়কেই পূজা করলে পঞ্চমেধ ও পঞ্চামৃত এবং মিষ্টি নিবেদন করুন।
  • বিশ্বকর্মা পূজার নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বকর্মা পূজা পদ্ধতি ও মন্ত্র উচ্চারণ জানতে হবে সঠিকভাবে।
  • হোম যজ্ঞ করার পর আরতী করতে হয়, ধুপ, প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি করতে হয়। পূজা সম্পন্ন হলে পূজার প্রসাদ বিতরণ করতে পারেন সকলের মধ্যে, সেখানে আগত সকল ভক্ত গণের মধ্যে।

শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা পূজা করলে কি শুভ ফল লাভ করা যায়:

প্রতিটি পূজার যেমন গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য রয়েছে তেমনি শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা পূজারও রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব এবং মাহাত্ম্য। বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান বিশ্বকর্মা সত্য যুগের থেকে শুরু করে কলিযুগ পর্যন্ত সত্য যুগে স্বর্গ, ত্রেতা যুগে লঙ্কা, দ্বাপর যুগে দ্বারকা নগরী এবং কলি যুগে হস্তিনাপুর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন শিল্পের সাথে জড়িত। যেমন ধরুন কারিগর, ব্যবসায়ী হিসেবে সকলেই এই দেবতাকে পূজা করে থাকেন। তাঁর কাছে প্রার্থনা চেয়ে থাকেন, তাঁর ব্যবসার উন্নতির জন্য।

সকল মেশিনপত্র, যন্ত্রপাতি ভালো থাকে সেই ভাবে প্রার্থনা করা হয়। ভগবান বিশ্বকর্মা কে বিশ্বের প্রথম প্রকৌশলী এবং স্থপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই কারণেই বিশ্বকর্মা পূজার দিনে শিল্প ও কারখানায় মেশিনের পূজা করা হয়। এর ফলে মেশিন থেকে উৎপন্ন যে কোন সৃষ্টি অথবা কোন কিছু তৈরি করাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আপনি যদি এই ধরনের কোন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পূজা করতে হবে। এর ফলে আপনার কর্মজীবন খুবই সুন্দর হবে বলে মনে করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!