Worldwide Bengali Panjika

শ্রী শ্রী কার্তিক পূজার বিধি – Kartik Puja


শ্রী শ্রী কার্তিক পূজা (Kartik Puja): বিভিন্ন পূজা পার্বণের মধ্যে কার্তিক পূজা একটি উল্লেখযোগ্য পূজা পার্বণ। এই পূজা অনেক সময় সন্তান কামনায় অথবা সুন্দর স্বামী কামনায় পালন করা হয়ে থাকে। কার্তিক মাসের শেষ দিনে এই কার্তিক ঠাকুরের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। যিনি পুরাণে যোদ্ধা হিসেবে এবং দেব সেনাপতি হিসেবে পরিচিত।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

পুরাণের কাহিনী অনুসারে জানা যায় কার্তিক ছিলেন মহাপরাক্রমশালী একজন যোদ্ধা, তারকাসূরকে বধ করা দেবতাদের পক্ষে যখন সম্ভব হয়ে উঠছিল না তখনই দৈব বলে প্রাপ্ত অজেয় শক্তির অধিকারী কার্তিক ঠাকুর তারকাসুরকে বধ করেন। সেই থেকে তিনি দেব সেনাপতি হিসেবে সকলের কাছে পূজা পেয়ে থাকেন আর এই ঘটনা স্কন্দ পুরাণে সবিস্তারে উল্লেখ রয়েছে।

কার্তিক ঠাকুরের রূপ:

কার্তিক ঠাকুরের অনেক নাম আছে, যেমন ধরুন কৃতিকা সুত, কুমার, দেব সেনাপতি, গৌরী সুত, অম্বিকেয়, শক্তি পানি, ইত্যাদি ইত্যাদি। পুরাণ অনুসারে কার্তিক ঠাকুরের গায়ের রং হলুদ বর্ণের, কার্তিকের বাহন হল ময়ূর, তিনি সাধারণত বাংলায় চিরকুমার নামে পরিচিত, কার্তিকের নাকি ছয়টি মাথা, তাই তাকে আবার ষড়াননও বলা হয়।

কার্তিকের হাতে থাকে ধনুক, তীর এবং বর্ষা। কার্তিকের চেহারা অত্যন্ত সুন্দর এবং বলিষ্ঠ, সেই জন্য কার্তিক পূজা করে দম্পতিরা সুন্দর ও বলিষ্ঠ চেহারার সন্তান প্রার্থনা করে থাকেন। কার্তিককে চিরকুমার বলা হলেও কোন কোন জায়গায় কার্তিকের বিয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। ব্রহ্মা এবং সাবিত্রির মেয়ে দেবী ষষ্ঠী কার্তিকের স্ত্রী হিসেবে অনেকেই জানেন।

কার্তিক পূজার প্রয়োজনীয় উপকরণ:

কার্তিক পূজার জন্য যে সমস্ত উপকরণগুলোর প্রয়োজন সে গুলি হল:-

  • ছেলেদের জামা,
  • বাচ্চাদের খেলনা, ঘু, ব্যাট-বল, বাঁশি, গুলি ইত্যাদি,
  • শ্লেট, খড়ি, পেন্সিল,
  • বর্ণপরিচয় বই,
  • তীর-ধনুক,
  • ময়ূর পুচ্ছ বা ময়ূরের পালক প্রয়োজন পড়ে,
  • সিঁদুর,
  • বরণ আঙ্গুরিয়ক ৩ টি,
  • যজ্ঞ পবিত ১০ টি,
  • তিল,
  • হরিতকি ১ টি,
  • পঞ্চা গুড়ি,
  • পঞ্চ শস্য,
  • পঞ্চরত্ন,
  • পঞ্চ পল্লব,
  • একটি বরনডালা,
  • ঘট একটি,
  • কুণ্ড হাড়ি একটি,
  • একসরা আতপ চাল,
  • তেকাঠা,
  • শীষযুক্ত ডাব,
  • তীর,
  • ঘট আচ্ছাদন গামছা,
  • ফুল,
  • মধু পর্কের বাটি,
  • ঘি,
  • মধু,
  • দই,
  • নৈবেদ্য ও কুচানো নৈবেদ্য,
  • বিষ্ণু পূজার ধুতি,
  • কার্তিকের ধুতি,
  • ময়ূর পূজার ধুতি,
  • হোমের জন্য বেলপাতা ১০৮ টা অথবা ২৮ টি লাগবে,
  • ভোগের জন্য বিভিন্ন দ্রব্য,
  • ফুলের মালা,
  • হোমের জন্য কাঠ,
  • পূর্ণমাত্র এবং
  • ব্রাহ্মণের জন্য দক্ষিণা ইত্যাদি।

কার্তিক পূজার নিয়ম:

অনেকেই বাড়িতে কোনো রকম পুরোহিত ছাড়াই কার্তিক পূজা সম্পন্ন করে থাকেন, আর যদি পুরোহিত অথবা ব্রাহ্মণ দিয়ে কার্তিক পূজা সম্পন্ন করতে চান তাহলে নিশ্চিতভাবে সেই পথই গ্রহণ করাই শ্রেয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সেই পুরোহিত অথবা ব্রাহ্মণকে কিছু দক্ষিণা দান করতে হবে।

আর যদি ব্রাহ্মণ অথবা পুরোহিত না পাওয়া গিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি নিজেও বাড়িতে বসে এই কার্তিক পূজা সম্পন্ন করতে পারেন সমস্ত নিয়ম নিষ্ঠা মেনে। খুবই সহজ এবং সরল পদ্ধতিতে মন্ত্র উচ্চারণ করার মধ্য দিয়ে আপনি কার্তিক পূজা সম্পন্ন করতে পারবেন ঘরেতেই।

তো চলুন তাহলে জানা যাক পূজা পদ্ধতি:

১) সবার প্রথমে একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় একটি জল চৌকি রাখতে হবে অথবা একটি ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করার বেধি তৈরি করতে হবে।

২) এরপর সেই জলচৌকি অথবা বেদীর উপরে একটি লাল কাপড় পেতে দিন এবং তার উপর কিছু পরিমাণ আতপ চাল দুর্বা ঘাস এবং গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিন।

৩) এরপর কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি অথবা ছবি প্রতিষ্ঠা করুন। এরপর কার্তিক ঠাকুরের সামনে আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটি গোলাকার আলপনা আঁকুন সেটা চালের গুঁড়ো দিয়ে হতে পারে অথবা আবির দিয়ে।

৪) তারপর সেই আলপনাটির উপরে একটি ঘট স্থাপন করুন। ঘটটি পিতল, কাঁসা অথবা মাটির হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন।

৫) ঘটের উপর সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন অথবা নারায়ণ চিহ্ন এঁকে দিন এবং ঘটে গঙ্গাজল অথবা বিশুদ্ধ জল ভরে দিন।

৬) ঘটের উপরে পাঁচটি পাতাযুক্ত আম এর পল্লব অথবা সাতটি পাতাযুক্ত আম্রপল্লব দিতে পারেন।

৭) এরপর একটি শীষযুক্ত ডাব রাখুন ঘটের মুখে। এবং প্রতিটি আম পাতার উপরে সিঁদুর ও চন্দনের ফোটা দিয়ে দেবেন।

৮) এরপর সেই পাতার উপরে একটি ফল দিয়ে দেবেন সেটি হতে পারে ডাব বা কলা এবং তাতে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকতে ভুলবেন না।

৯) সবশেষে ওই ফলটির উপরে একটি লাল বস্ত্র বা লাল গামছা দেবেন।

১০) এরপর ধুপ, প্রদীপ, ফুল এই সমস্ত নৈবেদ্য যথাস্থানে রাখুন। এরপর হাতে সামান্য গঙ্গা জল নিয়ে আচমন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।

১১) তার সাথে সাথে ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ করে মন্ত্র পাঠ করতে হবে। কার্তিকের স্বরূপ স্মরণ করার পাশাপাশি “ওম কার্তিকেয় নমো” এই মন্ত্র জপ করে একটি ফুল ঘটে প্রদান করুন।

১২) এরপর সমস্ত দ্রব্য যা আপনি কার্তিক ঠাকুরকে নিবেদন করতে চান যেমন ধরুন নৈবেদ্য ও অন্যান্য যে সমস্ত উপকরণ রয়েছে সেগুলি ঠাকুরের সামনে অর্পণ করুন।

১৩) এরপর ঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রদীপ এবং ধুপ দেখান অর্থাৎ আরতি সম্পন্ন করুন।

কার্তিক পূজার মাহাত্ম্য:

হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে প্রাচীন দেবতার রূপে পরিচিত কার্তিক ঠাকুর শাস্ত্রে তার বিভিন্ন নামের উল্লেখ রয়েছে, তা তো আমরা আগেই জেনেছি। প্রচলিত ধারণা অনুসারে সন্তান লাভের জন্য কার্তিক পূজা করা হয় কিন্তু অনেকেই জানেন না যে সন্তান লাভ ছাড়াও একাধিক কারণে কার্তিক পূজা করা হয়ে থাকে।

কার্তিক ঠাকুর হলেন যুদ্ধের দেবতা, তাই তাঁর পূজা করলে যে কোন যুদ্ধ জয় করা যায় সেটা জীবন যুদ্ধ হোক অথবা কোন রাজ রাজাদের যুদ্ধ। শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতে কার্তিকের পুজো করতে পারেন এমনটাই বলা হয় শাস্ত্র অনুসারে।

পূজার নিয়ম অনুসারে সমস্ত নৈবেদ্য জোগাড় করে কার্তিক ঠাকুরের সামনে অর্পণ করে মন্ত্র উচ্চারণের পাশাপাশি ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে, ফুল নিবেদন করে, জপ করে, অঞ্জলি প্রদান করে, আরতী করতে হবে। সঠিক নিয়ম মেনে কার্তিক পূজা করতে পারলে আপনি শুভ ফল লাভ করতে পারবেন।

এছাড়া পুরোহিতের সহযোগিতা ছাড়াও আপনি নিজেই বাড়িতে এই পূজা পালন করতে পারবেন। সঠিক নিয়ম মেনে পূজা করলে মিলবে দেবতার কৃপা, জীবনের সকল জটিলতা থেকে মিলবে মুক্তি, কার্তিকের কৃপায় ঘটবে জীবনে উন্নতি। সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বজায় রাখতে কার্তিকের পূজা করুন ভক্তি ও নিষ্ঠা ভরে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!