জীবিত পূত্রিকা ব্রত (Jivitputrika Vrat Puja)- জিতিয়া ব্রত (Jitiya Vrat): হিন্দু ধর্ম অনুসারে বিভিন্ন ব্রত ও উপবাস পালন করে থাকেন সকল নর নারী, তার সাথে সাথে বিবাহিত ও অবিবাহিতরাও সকলেই ব্রত ও উপবাস পালন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। হিন্দু ধর্মের ব্রত এবং উৎসবের আলাদা আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। আর এইসবের মধ্যে একটি বিশেষ ব্রত হল জীবিত পূত্রিকা ব্রত। যেটি জিতিয়া ব্রত নামেও পরিচিত।
প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)
এই ব্রত পালন করতে বিবাহিত মহিলারা তাঁদের সন্তানদের দীর্ঘায়ু ও সমৃদ্ধির জন্য উপবাস পালন করেন। এছাড়া হিন্দু ক্যালেন্ডার (Hindu Calendar) অনুসারে এই ব্রত প্রতি বছর আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালন করা হয়। তিন দিন ধরে চলে এই উৎসব অনুষ্ঠান। প্রথমদিন স্নান পর্ব সারা হয়, দ্বিতীয় দিন নির্জলা উপবাস রাখা হয় এবং তৃতীয় দিন সেই উপবাস ভঙ্গ করে এই ব্রত পালন করতে হয়।
জীবিত পূত্রিকা ব্রত ও পূজা পদ্ধতি:
- প্রথমত খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে গোবর দিয়ে পুজোর স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে।
- তারপর সেখানে একটি ছোট্ট পুকুর তৈরি করতে হবে।
- পুকুরের কাছাকাছি একটি পাকা ডাল এনে দাঁড় করিয়ে দিতে হবে।
- এবার একটি জলের পাত্রে রাজা শালিবাহনের পুত্র ধর্মাত্মা জিমুতবাহনের নির্মিত সুন্দর মূর্তি টি স্থাপন করতে হবে।
- এরপর প্রদীপ, ধুপ এগুলো জ্বালিয়ে চাল, সিঁদুর এবং লাল, হলুদ সুতো দিয়ে পূজার জায়গাটি সাজিয়ে তুলুন।
- এবার কাদামাটি অথবা গোবর দিয়ে মেয়ে ঈগল ও মেয়ে শিয়ালের মূর্তি তৈরি করতে হবে।
- আর উভয়কেই লাল সিঁদুর নিবেদন করতে হবে।
- এরপর সন্তানের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে প্রার্থনা করতে হবে ঈশ্বরের কাছে।
আবার অনেকেই এই ব্রত পালনের প্রথম পর্যায়ে বেলগাছ, কলা গাছ, ভিজে ছোলা, ফল ও মটরের বিভিন্ন নৈবেদ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাড়ির উঠোনে ছোট পুকুর কেটে বেল গাছ, কলা গাছ, প্রভৃতি পুঁতে এই পূজা সম্পন্ন করা হয়। এই শুভদিনে বাড়ির উঠানে গর্ত করে বটগাছের ডাল, ধান, আঁখ প্রভৃতি গাছকে পূজা করার নিয়ম রয়েছে যা জিমুত বাহনের প্রতিক রূপ।
জীবিত পূত্রিকা ব্রত পালনের মাহাত্ম্য:
পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে অনেক আচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এই উপবাস পালন করলে বিবাহিত মহিলারা পূণ্য অর্জন করার পাশাপাশি গৌরব অর্জন করেন এবং তাঁদের সন্তানদের দীর্ঘায়ু লাভ হয়। এই ব্রতর ফলে শিশুরা উজ্জ্বল এবং বুদ্ধিমান হয়ে জীবনে উন্নতি সাধন করে। একটি ধর্মীয় বিশ্বাস আছে যে, মহিলারা এই উপবাস যদি পালন করে থাকেন তাহলে তাঁদের সন্তানদের রক্ষা করেন স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ।
পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে আরো জানা যায় যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অভিমন্যুর স্ত্রী উত্তরার গর্ভের সন্তান কে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং তাকে জীবিত করেছিলেন। এই কারণে অভিমন্যুর স্ত্রী উত্তরার পুত্রকে জীবিত পূত্রিকা বলা হয়। এর ফলে প্রতিবছর আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে জীবিত পূত্রিকা উপবাস পালন করে থাকেন সকল মায়েরা।
উপবাসের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তামসিক খাবার যেমন ধরুন পেঁয়াজ, রসুন, আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্তানের মঙ্গল কামনায় শুধুমাত্র দেবী ষষ্ঠীকেই পূজা করা হয় না, তার সাথে সাথে এই ব্রতও পালন করা হয়ে থাকে।