দশেরা পূজা উৎসব (Dussehra Puja): বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যে দশেরা অর্থাৎ দশহারা এই পূজা সকলেরই চেনা এবং এই পূজাতে অনেকেই এমন কিছু কাজ করে থাকেন যা জীবনে উন্নতি সাধনে সহায়তা করে। কথায় আছে যদি গঙ্গার নাম তিনবার মুখে আনা যায় তাহলে দেহ শুদ্ধ হয়ে যায় আর তাতে যদি গঙ্গা স্নান করা যায় কোন শুভ তিথি ও শুভ দিনে তাহলে তো আর কথাই নেই। শাস্ত্র অনুযায়ী কলি যুগে যদি কোন তীর্থ থাকে সেটা হল গঙ্গা। গঙ্গা পূজা (Ganga Puja) করা অত্যন্ত পূণ্য এবং কল্যাণকর কাজ বলে মনে করা হয়।
প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)
এই দিন দেবী গঙ্গাকে আরাধনা করা হয় এবং এই শুভদিনে উপবাস থেকে গঙ্গা পূজা করা অত্যন্ত পূণ্যের কাজ আর জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে দেবী গঙ্গার কাছে প্রার্থনা জানানো।
দশেরা অথবা দশহারা (Dussehra) এই কথাটির অর্থ হল দশ পাপহরা বা ১০ টি পাপ কাজ হরণ করা দশহরা একটি অত্যন্ত শুভ দিন এই তিথিতে দেবী গঙ্গা মর্ত্যে নেমে এসেছিলেন। এই তিথি অনুসারে দশটি পাপ হরণ করা হয় যেমন ধরুন পরের জিনিস হরণ করা, হিংসা, অযথা প্রাণী হত্যা, অবৈধ প্রণয় এগুলি হল দেহগত পাপ।
তাছাড়া পরের নিন্দা, অহংকারী কথা বলা, মিথ্যা কথা বলা এবং ভুল কথা বলা এগুলো হলো বাক্যগত পাপ, যা এই পাপ করে থাকে আমাদের জিহ্বা। এছাড়া পরের অনিষ্ট চিন্তা করা, পরের জিনিস কামনা করা এবং মিথ্যার প্রতি আসক্তি এই গুলি মানসিক পাপ। মানুষ জেনে না জেনে এবং কোন কিছু না বুঝেই এই পাপ কর্ম গুলো করে থাকেন। তবে একথাও ঠিক যে শুভ কর্মে অশুভর বিনাশ ঘটে। এছাড়া ব্রত পালন করার মধ্য দিয়েও অনেক পাপ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যায়।
দশেরার দিন যে নিয়মগুলি পালন করতে হবে:
- এই শুভদিনে অতি অবশ্যই গঙ্গাস্নান করতেই হবে যা খুবই পুণ্য কাজ, আপনার সমস্ত পাপ ক্ষয় করতে এটি অবশ্যই করতে হবে।
- এর পাশাপাশি ১০ টি ফুল, ১০ রকম ফল নৈবেদ্য হিসেবে গঙ্গা পূজাতে রাখতে হবে।
- দশটি প্রদীপ জ্বালাতে হবে গঙ্গা দেবীর সামনে।
- গঙ্গা স্নান করার পর গঙ্গা জলে কাঁচা দুধ অর্পণ করুন দেবীর উদ্দেশ্যে।
দশেরা রামলীলা (Ramleela):
রামায়ণের গল্প অনুসারে রাবণকে বধ করেছিলেন শ্রী রামচন্দ্র। আর সেই ঘটনা আজও সকলের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। নবরাত্রির নয় দিন পূর্ণ হওয়ার পর দশেরা উৎসব (Dussehra Festival) আসে এই উৎসব সব অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে সত্য এবং শুভ শক্তির জয় কে সূচিত করে।
যেদিন ভগবান রাম রাবণকে বধ করেছিলেন সেই দিনটি পরিচিত হয়ে রয়েছে দশেরা নামে। এই উপলক্ষে ভারতের প্রতিবছর সাধারণ মানুষ রাবনের একটি কুশপুতুল বা আকারে বড় একটি মূর্তি তৈরি করে সেই মূর্তিতে আগুন লাগিয়ে রাবণ বধ অথবা রাবণ দহন এই প্রথাটি উদযাপন করে থাকেন।
তবে উৎসবের আগে কোন বড় মেলায় রামলীলার মঞ্চ তৈরি করা হয়। সেখানে মঞ্চস্থ হয় ঈশ্বরের নানা ধরনের গল্প। এই ধরনের যাত্রাপালা দেখার জন্য বহুদূর থেকে অনেক ভক্তগণ এবং দর্শনার্থীরা এসে জেগে অপেক্ষা করে থাকেন এবং বহু দূর থেকে মানুষ এখানে এসে ভিড় জমান।
দশেরা অথবা রাবণ দহন পালন:
ভারতের নানা প্রান্তে অসংখ্য রাবণ দহন পালিত হলেও তার মধ্যে কয়েকটি খুবই বিখ্যাত যার মধ্যে দিল্লির লালকেল্লা, রামলীলা ময়দানের লব কুশ রামলীলা সর্বজন বিখ্যাত। এখানে বিভিন্ন বছর বিভিন্নভাবে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া খুবই বড় আকারে রাবণের কুশপুতুল তৈরি করা হয়।
এছাড়া রাবণের কুশপুতুলের পাশাপাশি কুম্ভকর্ণ ও মেঘনাদের কুশপুতুলও তৈরি করা হয়। এই পুতুল গুলিকে প্রতীকী হিসাবে ধরা হয় এবং তাদের উদ্দেশ্যে তীর নিক্ষেপ করা হয়, তবে তীরের আগায় জ্বলন্ত অগ্নিশিখা থাকে। আর সেই তীর তাদের গায়ে লাগার সাথে সাথে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। সেই সাথে আশে পাশে থাকা সকল ভক্তগণও ভীষণ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন।
কুশপুতুল গুলি বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ এবং বিভিন্ন ধরনের বাজি দিয়ে তৈরি করা হয়, যার ফলে আগুন লাগার সাথে সাথে চারিদিকে বিস্ফোরণ মতো একটা দৃশ্য চোখে পড়ে এবং চারিদিকে বাজি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে থাকে, সেটা বহুদূর থেকে দেখতে খুবই ভালো লাগে। রাবণ দহন দেখতে বহু মানুষের ভিড় জমে যায় দশেরার দিন বিকেল বেলা, রাত্রি নামার সাথে সাথে এই অনুষ্ঠান শুরু হয় আর যা দেখতে খুবই সুন্দর লাগে।