Worldwide Bengali Panjika

ছট পূজা বিধি ও পালন – Chhath Puja Vidhi


ছট পূজা বিধি (Chhath Puja Vidhi): বিহারের আরো অন্যান্য জনপ্রিয় উৎসব গুলির মধ্যে সবথেকে বেশি লোকপ্রিয় এবং জনপ্রিয় উৎসব হলো ছট পূজা (Chhath Puja), যা ছোটি মায়ের পূজা হিসেবে অনেকেই জানবেন। কার্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে হয় এই ছট পূজা।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

ছট পুজো হলো আদতে সূর্যদেব এবং তার পত্নী ঊষা ও প্রত্যুষা দেবীর পূজা। মোট চার দিন ধরে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বাড়ির সকল নারী ও পুরুষ এই পূজাতে অংশগ্রহণ করলেও এই ব্রত বেশি পালন করে থাকেন বাড়ির মহিলারাই।

লোক বিশ্বাস অনুযায়ী এই উৎসব চলে টানা চার দিন ধরে, সন্তানের স্বাস্থ্য, সাফল্য, দীর্ঘায়ুর জন্য এক কঠোর উপবাস পালন করা হয়। এই পূজায় শুধু মহিলারাই নন, পরিবারের সকল সদস্যরাই উপবাস পালন করে ব্রত পালন করতে পারেন। নারী পুরুষ উভয়েই উপবাস পালন করতে পারেন। সন্তানের মঙ্গল কামনায় টানা ৩৬ ঘন্টা উপবাস করার নিয়ম রয়েছে ছট পূজায়।

ছট পূজার পৌরাণিক কথা:

বৈদিক যুগ থেকে সূর্য দেবতার পূজার প্রচলন চলে আসছে, তাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে এই পৃথিবী শান্ত থাকবে এমনটাই বিশ্বাস করা হয়, আসলে ছয় কথাটাকে নেপাল বা উত্তর ভারতের অনেকে ‘ছট’ বলে মনে করেন। পুজাটি ষষ্ঠীর দিন শুরু হয় তাই সেখান থেকেই ছট শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। আর তা থেকে ছট পুজো।

ত্রেতা যুগে শ্রী রামচন্দ্র (Shri Ramchandra) ও সীতা দেবী (Devi Sita) শুক্ল ষষ্ঠীর দিনে সূর্যদেবের আরাধনা করেছিলেন। আবার দ্বাপর যুগে সূর্য পুত্র কর্ণ অঙ্গ দেশের রাজা ছিলেন, তিনিও কিন্তু তখন সূর্যদেবের আরাধনা করেন। ষষ্ঠীতে এই ছট পুজো অনুষ্ঠিত হয় সেই কারণেই চলতি ভাষায় এই পূজার নাম ছট পূজা।

আবার অন্য একটি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে সূর্যদেবের ছোট বউ ঊষাকে এই পূজায় ছোটি মাইয়া হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। সেখান থেকে ছট পূজার নামটি প্রচলন হয়েছে এবং ছোট মাইয়াকে আরাধনা করেন এই ছট পূজার মধ্যে দিয়ে সকল বিহারী। বিশ্বাস করা হয় বৈদিক যুগের আগে থেকেই ছট পূজা বা সূর্য উপাসনার প্রচলন ছিল। মহাভারতের পঞ্চপান্ডব এবং দ্রৌপদী ও পালন করেছিলেন এই উৎসব, এমনকি রামায়নেও আছে রাম সীতার ছট পূজার কথা।

যাঁরা এই ছট পূজা করে থাকেন, তাঁরা ভাই ফোটার পর থেকেই টানা নিরামিষ খাবার খেয়ে থাকেন। এই নিরামিষ খাবার খাওয়ার মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন কোনো জায়গা পায় না। পূজার ঠিক আগের দিন ‘খারনা’ নামের একটি প্রথা পালন করতে হয়। এই সময় সূর্য্য দেবতার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য হিসেবে পায়েস, লুচি, কলা, মিষ্টি অর্পণ করতে হয়।

ছট পূজার উপকরণ:

ছট পূজার ডালাতে বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে যেগুলি থাকে সেগুলি হল:-

  • আমের পল্লব,
  • হলুদ গাছ,
  • কলার কাঁদি,
  • নারকেল,
  • বিভিন্ন ফল,
  • ঠেকুয়া,
  • খাস্তা ও টিকরি,
  • ফুল,
  • ধূপ,
  • ধুনা,
  • প্রদীপ ইত্যাদি।

ছট পূজার নিয়ম:

১) প্রথমে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে ছট পূজার সমস্ত উপকরণ জোগাড় করে নিতে হবে।

২) এরপর নদীর ঘাটে বসে এক মনের সূর্যদেবের আরাধনা করার পর নামতে হয় কোমর সমান জলে।

৩) তারপর নদীর ঘাটে বসে এক মনে সূর্য দেবের আরাধনা করতে করতে নদীর জলে নেমে যেতে হবে। নদীর বুকে দাঁড়িয়ে পূজার ডালা সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে অর্পণ করে ধূপ, ধুনা দেখিয়ে আরতি করতে হবে।

৪) অবশেষে পরিবারের সকলের নাম করে একটা একটা করে প্রদীপ ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীর বুকে।

৫) ডালিতে যে প্রসাদ রাখা হয়েছে তা বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে, বাড়ি ফেরার পরও কিন্তু উপবাস ভাঙা যাবে না।

৬) পরের দিন ভোরে আরও একবার সূর্য পূজার জন্য নদীর ঘাটে যেতে হয়, যাঁরা মানত করেন তাঁরা বাড়ি থেকে নদীর ঘাট পর্যন্ত দণ্ডী কাটতে কাটতে যান।

৭) প্রণাম করা হয় উদয়গামী এবং অস্তগামী সূর্যকে এবং তার স্ত্রী ঊষা আর প্রত্যুষা কে। এরপরেই কিন্তু যাঁরা ব্রত রেখেছেন তাঁরা ব্রত ভঙ্গ করে উপবাস ভাঙ্গতে পারেন।

বাড়ির মহিলারা বিশ্বাস করেন যে, তাঁদের সকল মনের ইচ্ছা পূর্ণ করেন সূর্য্যদেব। সংসারের মঙ্গল কামনায় বাড়ির গৃহিনীরাই এই পূজা করে থাকেন।বিভিন্ন রকমের ফল, চালের লাড্ডু, ঠেকুয়া এগুলি হল পূজার মূল প্রসাদ। ছট পূজার শেষ দিনে ‘মৎস্যমুখী’ অনুষ্ঠান হয় অনেক পরিবারে। আর সেই অনুষ্ঠান কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো, আর বাড়ির সব সদস্যরা আনন্দ উপভোগ করে থাকেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!