Worldwide Bengali Panjika

শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা ও উৎসব – Santiniketan Poush Mela


শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা (Santiniketan Poush Mela): যেকোনো মেলা এবং উৎসব মানুষের মনে আনন্দের সঞ্চার ঘটায়, তেমনি শীতকালে এই মেলার উৎসব গুলি বেশি পরিমাণে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন জায়গায়। তার মধ্যে একটি অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ মেলা হলো শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

এখানে উৎসব উদযাপন করার পাশাপাশি বিশাল বড় মেলা বসে। পৌষ মেলা হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে (Santiniketan) অনুষ্ঠিত একটি বার্ষিক মেলা ও উৎসব। প্রতিবছর এখানে ৭ পৌষ মেলা শুরু হয় আর তিন দিন ধরে চলে।

তবে এই তিন দিন যাবত প্রচুর পরিমাণে দোকানীরা তাঁদের দোকান নিয়ে বেচাকেনা করেন, তার সাথে সাথে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো এই মেলাতে। তবে দোকানে না কিন্তু সারা পৌষ মাস ধরেই এই মেলা প্রাঙ্গণে দোকান দিতে পারেন। তাছাড়া শান্তিনিকেতন এক অনন্য জায়গা, এখানকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বাংলা লোকসংগীত এর অনুষ্ঠান, বিশেষ করে বাউল গান।

শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার শুভ আরম্ভ:

প্রতিটি মেলা কোন না কোন এক সময় শুরু হয়েছিল কারো না কারো হাত ধরে। তবে ১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর অর্থাৎ বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে ১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (Devendranath Tagore) কুড়ি জন অনুগামী কে নিয়ে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের থেকে ব্রহ্মধর্ম গ্রহণ করেন আর এটিই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা (Santiniketan Poush Mela) এবং উৎসবের মূল ভিত্তি।

শান্তিনিকেতনের একটি ব্রাহ্ম মন্দির (Brahma temple) স্থাপিত হয় সেটি ১৮৯১ সালে ২১ ডিসেম্বর, সেটাও কিন্তু ১২৯৮ বঙ্গাব্দে ৭ পৌষ তারিখে। এখানে ব্রহ্মা মন্দির প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে মন্দিরের আশেপাশে এবং উল্টো দিকের মাঠে একটি ছোট মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে সেটি ধীরে ধীরে বড় আকার নিতে থাকে এবং শান্তিনিকেতনের সেই পৌষ মেলা শুধুমাত্র বীরভূম জেলায় নয়, অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটকদের কাছেও এক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

পৌষ মেলার উদ্বোধন:

এই মেলাতে দূর দূরান্তর থেকে অনেক পর্যটকরা মেলায় বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের জিনিস দেখতে, কিনতে এবং মেলা ঘুরে দেখতে ছুটে আসেন। ভোরবেলায় সানাই বাজার সাথে সাথে এই মেলা শুরু হয় এবং গান গাইতে গাইতে এই জায়গাটি পরিক্রমা করা হয়। এরপর উপস্থিত সবাই গান গাইতে গাইতে উপস্থিত হন।

মেলার অন্যান্য দিন আয়োজন করা হয় লোকসংগীত, বিশেষ করে বাউল গানের আয়োজন করা হয় খুবই বড় আকারে। লোকসঙ্গীতের সঙ্গে লোকনৃত্য ও লোকক্রীড়ারও অনুষ্ঠান হয়। এই মেলায় পশ্চিমবঙ্গের সকল অঞ্চলের সাংস্কৃতিক নিদর্শন এর প্রদর্শনী হয় যা দেখতে খুবই মনোমুগ্ধকর। শান্তিনিকেতনের ছাত্র-ছাত্রীরা নাচ, গান ও নাটকের আয়োজন করেন এবং এই মেলা ক’দিন তাঁদের সেই সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার মত।

পৌষমেলার জাঁকজমক:

প্রতিটি মেলায় মানুষের ভিড় যত বেশি হবে ততই সেই মেলা যেন ভরে ওঠে এবং সেখানে আগত যাঁরা দোকান দিয়েছেন তাঁদেরও বেচাকেনা খুবই ভালো হয়। তবে এই শান্তিনিকেতনের পৌষমেলায় প্রায় ১৫০০ দোকান অথবা স্টল দেওয়া হয়। মেলা উপলক্ষে তিন দিনে ১০,০০০ পর্যটক এর সমাবেশ হয় বলে জানা যায়। তবে যাঁরা দূর থেকে শান্তিনিকেতনে ঘুরতে যান তাঁদের জন্য থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা জরুরী যে, শান্তিনিকেতনে পর্যটক নিবাসের সংখ্যা মাত্র ৮৫ এবং তাতে সর্বাধিক ১,৬৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেই কারণে সবাই শান্তিনিকেতনে গেলেও সেখানে থাকতে পারেন না। যদিও এখানে বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে ভাড়ায় ঘর পাওয়া যায়, সেটাকেই কেন্দ্র করে অনেকেই এখানে তিন দিন যাবত মেলা উপভোগ করেন। তবে এক সময় এই মেলা “ভুবনডাঙ্গার মেলা” হিসেবে পরিচিত ছিল সকলের কাছে।

পৌষ মেলায় যে জিনিসগুলি দেখতে পাবেন:

বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে দোকানিরা তাঁদের দোকান সাজিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র আপনি দেখতে পাবেন এই মেলায়। বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তরকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই মেলাতে। থাকে মৃৎশিল্প অর্থাৎ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ও ডুকরা শিল্প, ডুগডুগি, একতারা, এছাড়া বিশ্বভারতী ও শ্রীনিকেতনের স্টলে পাওয়া যায় বই, বস্ত্র ও চর্মজাত সামগ্রী।

বহু ভিনদেশী পর্যটক মেলা উপলক্ষে শান্তিনিকেতনে অস্থায়ী বাসা বাঁধেন। আপনিও যদি এখানে ভাড়া ঘর নিয়ে থেকে তিন দিন যাবত এই পৌষ মেলার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন তাহলে চলে যেতেই পারেন শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলাতে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!