Worldwide Bengali Panjika

জ্ঞান পঞ্চমী ব্রত (লাভ পাচম ব্রত): Jain Gyan Panchami Vrata


জ্ঞান পঞ্চমী ব্রত (Gyan Panchami Vrata) লাভ পাচম ব্রত (Labh Pancham Vrata): বিভিন্ন ধরনের ব্রত পালন করার মধ্যে যেমন একটা শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়, তেমনি এমন অনেক ধর্মে অনেক রকমের ব্রত পালন করা হয় সেগুলি সেই ধর্মের সবথেকে জনপ্রিয় এবং আনন্দদায়ক এবং মনের শান্তি প্রদানকারী ব্রত হিসাবেই পরিচিত সকলের কাছে।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

জৈন ধর্মে অর্থাৎ সমস্ত জৈন উৎসব (Jain Festival) গুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মাহাত্ম্যপূর্ণ একটি এই ব্রত হল “জ্ঞান পঞ্চমী ব্রত” যা “লাভ পাচম” এবং জ্ঞান পঞ্চমী এই দুটি নামেই সকলের কাছে পরিচিত।

জ্ঞান পঞ্চমী ব্রত অথবা লাভ পাচম ব্রত:

এই শুভ দিনটি জয়া পঞ্চমী, পাণ্ডব পঞ্চমী এবং শ্রী গুরু গোবিন্দ সিং এর জন্মদিন, সৌভাগ্য পঞ্চমী এবং লাভ পঞ্চমী হিসেবেও পালিত হয়ে থাকে সমগ্র জৈন ধর্মের মানুষের মধ্যে। দীপাবলি অর্থাৎ কালী পূজার পরে পঞ্চম দিনে উদযাপিত হয় এই উৎসবটি, যা সম্পূর্ণ রূপে আরো জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে পালন করা হয় বলে ধারণা করা হয়।

জ্ঞান হলো অন্তর আত্মার স্বাভাবিক আলো যা মানুষকে সঠিক পথে চালিত করতে সাহায্য করে এবং জীবনে উন্নতি করতে সাহায্য করে, সঠিক ভুল নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। এই আলোয় কিন্তু আমাদের ভালো এবং খারাপের মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করে বলে বিশ্বাস করা হয়। যে মানুষের মধ্যে যত বেশি জ্ঞান থাকবে সেই মানুষ তত বেশি উন্নত এবং তত বেশি সংযত। সেই কারণেই জ্ঞানকে তৃতীয় নয়ন বা দ্বিতীয় সূর্যও বলা হয়ে থাকে।

এই জ্ঞান মনের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও তা কঠিন পরিস্থিতি থেকে মানুষকে ভালোভাবে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে, আর এই জ্ঞানের মধ্যে দিয়েই মানুষ জীবনে অনেক সহজভাবেই চলাচল করতে পারে। এই প্রাকৃতিক অভ্যন্তরীণ আলোকে অর্থাৎ জ্ঞানকে অজ্ঞতা দূর করতে এবং কর্মের জ্ঞান প্রকাশ করার জন্য প্রার্থনা করা হয়। এইভাবে জ্ঞান পঞ্চমী ব্রত অজ্ঞান, অজ্ঞতা বা মূর্খতাকে প্রতিস্থাপন করে। এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে অথবা এই ব্রত পালন করার মধ্য দিয়ে মনে জ্ঞানের অর্জন করার প্রার্থনা করা হয়, যা মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

জ্ঞান পঞ্চমী অথবা লাভ পাচম ব্রত পালন করার নিয়ম:

আমরা আগেই জেনেছি যে, দীপাবলীর তিনদিন পর ছট পূজার মধ্যে যে পঞ্চমী পড়ে তা লাভ পঞ্চমী বা সৌভাগ্য পঞ্চমী হিসেবে গুজরাত ও অন্য কিছু রাজ্যে পালিত হয়ে থাকে। এই দিনটি খুবই মঙ্গলময় এবং সৌভাগ্যদায়ক দিন হিসেবে সকলের কাছে খুবই পরিচিত। বিশেষ করে জৈন ধর্মের মানুষের কাছে এটি খুবই পরিচিত। মনে করা হয় এই দিন গণেশের দুই স্ত্রীর ঋদ্ধি ও সিদ্ধির দুই পুত্র শুভ ও লাভের পূজা করলে সৌভাগ্য ফিরে আসে সংসারে।

গুজরাটে সমস্ত ব্যবসায়ীরা এই দিন থেকে ব্যবসা শুরু করেন অথবা নতুন খাতা বা হালখাতা করেন। এই নতুন খাতা কে ‘খাতু’ বলে যার বাম দিকে শুভ এবং ডানদিকে লাভ লেখা হয়। জৈনরা এই শুভদিনে বইয়ের পূজা করে থাকেন, এইটা অনেকটা আমাদের বসন্ত পঞ্চমী অর্থাৎ সরস্বতী পূজার মতোই মনে করা হয়ে থাকে, এদিন জৈন ধর্মাবলম্বীরা জ্ঞানের উপাসনা করেন। সেই কারণে এই ব্রতর আরেক নাম জ্ঞান পঞ্চমী ব্রত। হালখাতার মাঝে আঁকা হয় স্বস্তিক চিহ্ন যা জ্ঞান ও সিদ্ধি দেবতা গণেশের প্রতীক। আর স্বস্তিক চিহ্নের দুপাশে দুটি করে লাইন গণেশের দুই স্ত্রী ঋদ্ধি ও সিদ্ধির প্রতীক।

গণেশের সাথে ঋদ্ধি, বুদ্ধি ও পদ্ধতি এর মিলনে শুভ অর্থাৎ মঙ্গলের জন্ম। আর গণেশের সাথে সিদ্ধি অর্থাৎ আত্মশক্তির মিলনে লাভ অর্থাৎ মুনাফা বা বলা যেতে পারে ব্যবসায় যে উন্নতি ঘটে তার জন্ম। আর এই ভাবেই ব্যবসার উন্নতি সাধনে জৈন ধর্মের মানুষেরা এই জ্ঞান পঞ্চমী ব্রত পালন করে থাকেন। সমৃদ্ধির দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায় যেমন ফুল, ফল, ধূপ, প্রদীপের প্রয়োজন পড়ে, তেমনি এই ব্রত পালন করতেও সেইসব পূজা সামগ্রী প্রয়োজন হয়। আর সেগুলোর মধ্যে দিয়ে আরাধনা করা হয় এই সৌভাগ্যের দেব দেবীকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!