Worldwide Bengali Panjika

ভাতৃদ্বিতীয়া পালনের নিয়ম – Bhai Phota


ভাতৃদ্বিতীয়া (Bhatri Dwitiya) – ভাইফোঁটা (Bhai Phota): পৃথিবীতে মানবজাতির মধ্যে পরিবারের সম্পর্ক এবং বন্ধন খুবই বড় ভূমিকা পালন করে। তেমনি একটি সম্পর্ক হল ভাই বোনের সম্পর্ক। এই ভাই বোনের ভালবাসা চিরন্তন সত্য এবং ভাই বোনকে রক্ষা করবে এবং বোন ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করবে এই নিয়েই কিন্তু রাখি বন্ধন থেকে শুরু করে ভাইফোঁটা পর্যন্ত ভাইদের মঙ্গল কামনায় দিদিরা ও বোনেরা ব্রত পালন করেন।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

পশ্চিমবঙ্গের বাইরে এই উৎসবটি ভাই দুজ (Bhai Dooj) অথবা ভাইবীজ (Bhai Beej) নামে পরিচিত হলেও আমাদের গ্রাম বাংলায় এটি ভাইফোঁটা নামে পরিচিত সকলের কাছে। যে নামেই হোক না কেন ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করা এবং জীবনে উন্নতি কামনা করাই হলো এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য।

ভাইফোঁটা অথবা ভাতৃদ্বিতীয়ার পৌরাণিক কাহিনী:

ভাতৃদ্বিতিয়া যমদ্বীতিয়া (Yama Dwitiya) নামেও পরিচিত, পুরাণে উল্লেখ আছে যে কার্তিকের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে যমুনা দেবী তার ভাই যমের মঙ্গল কামনায় গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে পূজা করে, তারই পূণ্য প্রভাবে যমদেব অমরত্ব লাভ করেন।

তারপর থেকেই ভাইদের দীর্ঘায়ু কামানোর জন্য বোনেরাও ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেন এবং যমরাজের প্রকোপ থেকে বাঁচিয়ে তাদের জীবনকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করেন। আবার অন্য মত অনুসারে নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন শ্রীকৃষ্ণ তার বোন সুভদ্রার কাছে আসেন তখন সুভদ্রা তার কপালে ফোঁটা দিয়ে তাকে মিষ্টি খেতে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে ভাইফোঁটা উৎসব প্রচলিত হয় সর্ব জায়গায়।

এই শুভদিনে বোনেরা উপবাস রেখে ভাইয়ের কপালে বাঁ হাতের কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে চন্দন, ঘি, কাজল, মধু, শিশির, গোমূত্র দিয়ে তৈরি করা মিশ্রণের ফোঁটা দিয়ে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে থাকেন।

ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় ভাই ফোঁটা উৎসব:

শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে বিবাহিত বোন এবং দিদিদের পক্ষ থেকে। তাছাড়া যে সমস্ত বোন অথবা দিদিদের বিবাহ হয়নি, তাঁরা বাড়িতেই সকালবেলা শিশির কুড়িয়ে এনে তাতে চন্দন বেটে ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় ভাইফোঁটা উৎসব পালন করতে উপবাস পালন করেন এবং ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে ভাইয়ের জীবনে উন্নতি কামনা করেন।

ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনায় বোনেরা সারা বছরের বিভিন্ন সময়ে নানান উৎসব পালন করে থাকলেও এই দিনে যমরাজের নজর থেকে ভাইয়ের জীবন সুন্দর এবং সুরক্ষাময় করে রাখতে ভাই ফোঁটা উৎসব পালন করা হয়। শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি উপলক্ষে এই দিন সকাল বেলা উপস্থিতি ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা এবং মাথায় ফুল, চন্দন, দুর্বা ঘাস, ধান, সর্ষের তেল অথবা জলন্ত প্রদীপের তেল দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়।

ভাইফোঁটা পালনের নিয়ম:

বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে এই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন রকমের রীতি রেওয়াজ রয়েছে, অনেক অঞ্চলে এমন নিয়মও আছে চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা এঁকে তার মাঝখানে ভাইকে সুন্দর আসনে বসিয়ে কৃষ্ণ জ্ঞানে পূজা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে অনেকেই প্রতিপদে ফোঁটার নিয়ম পালন করে থাকেন। তারপরেও বেশিরভাগ উৎসব পালিত হয় দ্বিতীয়ার দিন, সেই কারণেই তো এই উৎসবের নাম ভাতৃদ্বিতীয়া।

  • প্রথমত খুব ভোরে স্নান সেরে পরিষ্কার বস্ত্র ও শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে এই উৎসব পালন করার জন্য ব্রত নেওয়ার সংকল্প নিতে হয় বোন অথবা দিদিদের।
  • এরপর দূর্বা ঘাসের ডগা থেকে শিশির সংগ্রহ করে সেই শিশির দিয়ে চন্দন বেটে সেই চন্দন পূজার থালায় সাজিয়ে তুলতে হবে।
  • সুন্দর ফুল, দুর্বা ঘাস, কিছু ধান রাখতে হবে সেই পূজার থালায়। আরতির থালাতে সিঁদুর, চন্দন, সুপারি ও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি রাখতে পারেন।
  • ভাইয়ের পছন্দের মিষ্টি, পায়েস এবং রান্নাবান্না করতে হয় এই দিন। তবে ভাইফোঁটার জায়গাতে মিষ্টি ও পায়েস দিয়ে সাজিয়ে তুলতে হয় পূজার থালার পাশাপাশি।
  • এরপর প্রদীপ ও ধুপ জ্বালিয়ে শঙ্খ বাজিয়ে ঈশ্বরের কাছে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করতে হয়।
  • ভাই কে ফোঁটা দেওয়ার আগে অবশ্যই বাড়ির মন্দির অথবা ঠাকুর ঘরে পূজা সম্পন্ন করে সেই পূজার থালায় ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে আসতে হয়।
  • এরপর সুন্দর জায়গায় আলপনা করা জায়গাতে আসন পেতে ভাইকে বসাতে হয়।
  • তারপর ফুল, দুর্বা ঘাস, ধান এবং জ্বলন্ত প্রদীপের তেল বাম হাতে নিয়ে ভাইয়ের মাথার চারিদিকে ঘুরিয়ে মাথার উপরে রেখে ভাইকে আশীর্বাদ করতে হয়।
  • এরপর বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে চন্দন বাটা নিয়ে ভাইয়ের কপালে দেওয়ার সাথে সাথে এই মন্ত্র বলতে হয়:- “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পরলো কাঁটা, যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা”। ভাইদের মঙ্গল হোক, জীবনে উন্নতি হোক, সকল বিপদ, অসুখ বিসুখ থেকে দূরে থাকুক এই কামনা করে থাকেন সকল বোনেরা।
  • এরপর এই প্রক্রিয়া তিনবার করতে হয় অর্থাৎ কপালে চন্দনের ফোঁটা মন্ত্র উচ্চারণের সাথে সাথে তিনবার দিতে হয়।
  • এরপর মিষ্টিমুখ করিয়ে জল খাইয়ে ভাইকে তাঁর উপহার দিতে হবে।
  • ভাই অথবা দাদা তাঁরাও যদি মনে করেন তাহলে তাঁদের বোনকে সুন্দর উপহার দিয়ে এই শুভ দিনের শুভেচ্ছা জানাতে এবং তাঁদের মঙ্গল কামনা করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে উপহার প্রদান করতে পারেন।

কোন দিকে মুখ করে ফোঁটা নেওয়া শুভ?

শাস্ত্র অনুসারে কখনো দক্ষিণ দিকে মুখ করে ভাইফোঁটা নিতে নেই। এই দিক টিকে অশুভ বলে মনে করা হয়। এই কাজের ক্ষেত্রে তাই পূর্ব দিকে মুখ করে বসে ভাইফোঁটা নেওয়া উচিত। এছাড়া উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ করেও ফোটা নেওয়া যেতে পারে।

ভাইফোঁটার জায়গায় ঘি এর প্রদীপ জ্বালাতে ভুলবেন না এবং সাথে শঙ্খ রাখতেও ভোলেন না বোনেরা, শঙ্খ বাজানোর পাশাপাশি এই ভাইফোঁটা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর বাড়ির গুরুজন এবং বাবা-মায়ের আশীর্বাদ নিতে হবে। এরপর দিদি উপবাস ভঙ্গ করে একসাথে বসে খাবার খেয়ে এই শুভ দিনটি উদযাপন করবেন সকলে মিলে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!