Worldwide Bengali Panjika

গোবর্ধন পূজার বিধি ও পদ্ধতি – Govardhan Puja


গোবর্ধন পূজা (Govardhan Puja): নিয়ে অনেকের অনেক কৌতুহল থাকলেও শ্রীকৃষ্ণকে উদ্দেশ্য করে এই পূজা উৎসর্গ করা হয়। এই পূজা উপলক্ষে এই শুভদিনে শ্রীকৃষ্ণকে ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার (Hindu Calendar) অনুসারে কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের প্রতিপদ তিথিতে গোবর্ধন পূজা অনুষ্ঠিত হয় যা স্বাধারণত দীপাবলীর (Diwali) পরের দিন এই উৎসব পালন করা হয় বলে জানা যায়।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

গোবর্ধন পূজা আবার অন্নকূট পূজা (Annakoot Puja) নামেও পরিচিত। এই দিন মহিলারা তাঁদের বাড়িতে এবং উঠানে গোবর দিয়ে গোবর্ধন পর্বতের আকৃতি তৈরি করে পূজা করে থাকেন আবার যাঁদের পাশাপাশি গোবর্ধন পর্বত রয়েছে তাহলে তো তাঁদের ক্ষেত্রে খুবই ভাগ্যের বিষয় যে সেখানে গিয়ে পূজা দিতে পারবেন।

গোবর্ধন পূজা ভারতের উত্তর ও মধ্যাঞ্চল জুড়ে উদযাপিত হয় যার মধ্যে রয়েছে বিহার, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং গুজরাট। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের কিছু জায়গায় এই পূজা অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা যায়। গোবর্ধন পূজার একটি পৌরাণিক সম্পর্ক রয়েছে এবং গোবর্ধন পূজার সাথে শ্রী কৃষ্ণের পূজা (Shri Krishna Puja) খুবই ধুমধাম ভাবেই পালন করা হয়।

গোবর্ধন পূজার ইতিহাস:

গোবর্ধন পূজার ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় ভগবান কৃষ্ণকে উৎসর্গীকৃত একটি ধর্মীয় উৎসব হলো গোবর্ধন পূজা। গোবর্ধন পূজা হলো ভগবান ইন্দ্রের বিরুদ্ধে শ্রী কৃষ্ণের বিজয়ের উদযাপন।

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে ভগবান ইন্দ্রের ক্রোধ থেকে, গ্রামবাসীকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সমগ্র গোবর্ধন পাহাড়টাকে তাঁর হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে তুলে ধরেছিলেন।

যিনি বৃষ্টির মাধ্যমে তাঁদের ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন তিনি হলেন ইন্দ্র আর সেই ঝড় বৃষ্টির হাত থেকে গোবর্ধন পাহাড়ের নিচে আশ্রয় দিয়েছিলেন শ্রী কৃষ্ণ সকল বৃন্দাবনবাসীকে। ঝড় বৃষ্টির হাত থেকে গোবর্ধন পাহাড় সকলকে রক্ষা করেছিল এবং সকল পশু পাখিকেও জীবন দান করেছিল। সেই থেকেই গোবর্ধন পাহাড়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটি উদযাপন করে থাকেন এবং শ্রীকৃষ্ণকে পূজা করে থাকেন।

গোবর্ধন পূজার উপকরণ:

এই সময় যার যেমন সামর্থ্য সেই অনুযায়ী চাল, ডাল-গম, বেসন, শাক ইত্যাদি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ কে সন্তুষ্ট করতে হয়। ভক্তরা এই দিনে আন্তরিক উপাসনায় নিযুক্ত থাকেন এবং এই সমস্ত নৈবেদ্য গুলি ভগবান কৃষ্ণের কাছে ভক্তির প্রতিক হিসেবে অর্পণ করা হয়। গোবর্ধন পূজা করার জন্য ভক্তদের তাঁদের উঠানে গোবর ব্যবহার করে গোবর্ধন পর্বত তৈরি করতে হবে এবং এই পূজায় প্রদীপ জ্বালানো এবং চাল, ক্ষীর, বাতাসা, জল, দুধ, পান, কেশর এবং ফুলের মতো এই উপকরণ গুলি অবশ্যই প্রয়োজন পড়বে।

বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, ধূপকাঠি, তাজা ফল এবং তাজা ফুল দিয়ে তৈরি করা মালা প্রয়োজন পড়বে। চাল, রোলি, ৫৬ অথবা ১০৮ ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। মধু, দই এবং চিনি দিয়ে তৈরি পঞ্চামৃত এই পূজার বিশেষ অংশ। গোবর্ধন পূজার জন্য প্রয়োজনীয় পূজা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে গম, চাল, পঞ্চমৃত, বিভিন্ন শাকসবজি দিয়ে তৈরি অন্নকূট এবং বেসন ও শাক দিয়ে তৈরি তরকারি, ভগবান কৃষ্ণকে উৎসর্গ করা হয় এবং পঞ্চমৃত ভগবানের কাছে অর্পণ করার পরে তা প্রসাদ হিসেবে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

গোবর্ধন পূজার উপকরণ:

গোবর্ধন পূজার সময় যে উপকরণ গুলি অবশ্যই প্রয়োজন পড়বে:

  • ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি অথবা ছবি,
  • ফুল, বিশেষ করে গাঁদা ফুল প্রয়োজন পড়ে,
  • গোবর অথবা কাদামাটি,
  • ফলের মধ্যে কমলালেবু, আপেল, কলা এবং নারকেলের মতো ফল প্রয়োজন পড়বে,
  • লাড্ডু, প্যারা ও ক্ষীরের মতো মিষ্টি,
  • ধুপকাঠি,
  • প্রদীপ,
  • কর্পূর,
  • গঙ্গা জল,
  • শঙ্খ,
  • বেলপাতা,
  • আরতির থালা,
  • রঙিন আবিরের গুঁড়ো,
  • চালের আটা,
  • ফুলের পাপড়ির মতো রঙ্গোলি প্রয়োজন পড়বে।

গোবর্ধন পূজার নিয়ম:

  • গোবর্ধন পূজার দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে নিতে হবে এবং পরিষ্কার কাপড় পড়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নিতে হবে।
  • এরপর শুভ সময়ে গোবর দিয়ে গিরিরাজ গোবর্ধন পর্বতের আকৃতি তৈরি করুন আপনারই বাড়ির উঠানে।
  • এরপর ধুপ, প্রদীপ প্রভৃতি দিয়ে যথাযথভাবে গোবর্ধন পর্বতের পূজা করতে হবে।
  • ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে তাঁর পূজা সম্পন্ন করুন।
  • এরপর শ্রীকৃষ্ণকে ৫৬ ভোগ দিয়ে অন্নকূট নিবেদন করুন।
  • প্রথমত আপনি যেখানে গোবর্ধন পূজা করতে চাইছেন সেই জায়গাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে পবিত্র করে নিন।
  • তারপর গোবর্ধন পাহাড় ফুল, ফল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি অথবা ছবি, গোবর অথবা কাদামাটি সহ পূজার সামগ্রী সাজিয়ে রাখুন।
  • মিষ্টি, ধূপকাঠি এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে দিন।
  • কর্পূর এবং চন্দন প্রয়োজন পড়বে।
  • গোবর্ধন পাহাড়ের একটি উপস্থাপনা তৈরি করতে হবে গোবর ব্যবহার করে।
  • এরপর ফুল, পাতা এবং আবির ও ফুলের রঙ্গোলি দিয়ে সেই জায়গাটি সাজিয়ে তুলুন।
  • ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভোগ নিবেদন হিসেবে নিরামিষ খাবার এবং মিষ্টি প্রস্তুত করে রাখুন।
  • অন্নকূট তৈরি করে গোবর্ধন পাহাড়ের চারিপাশে একটি বৃত্তাকার আকারে খাবার সামগ্রী সাজিয়ে তুলুন।
  • স্নান করার পর পরিষ্কার কাপড় পরিধান করুন এবং নিজেকে পবিত্র রাখার চেষ্টা করুন।
  • প্রদীপ এবং ধুপকাঠি জ্বালিয়ে আরতী করুন।
  • দেবতাকে ফুল, ফল এবং আরো অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী নৈবেদ্য অর্পণ করুন।
  • ভগবান কৃষ্ণের আরতি করুন, গোবর্ধন পাহাড়ের চারপাশে যাঁরা এই পূজার ব্রতী হয়েছেন তাঁরা প্রদক্ষিণ করুন।
  • ভগবানের আশীর্বাদের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
  • পূজা সম্পন্ন হয়ে গেলে পরিবারের সকল সদস্য, বন্ধু-বান্ধব এবং দূর থেকে আগত ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করুন।
  • জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রকৃতি আমাদের যা কিছু দেয় সেগুলোর জন্যই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান।

গোবর্ধন পূজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য:

প্রতিটি পূজার কোনো না কোনো গুরুত্ব ও তাৎপর্য তো থাকেই, বিশ্বাস অনুসারে জানা যায় গোবর্ধন পূজার সূচনা সর্বপ্রথম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ করেছিলেন এবং গোবর্ধন পর্বতকে আঙ্গুলে তুলে তিনি ইন্দ্র দেবের ক্রোধ থেকে বৃন্দাবনবাসী এবং পশু পাখিদের রক্ষা করেছিলেন।

এই কারণেই গোবর্ধন পূজায় গিরিরাজের (গোবর্ধন পর্বত) সাথে শ্রী কৃষ্ণের পূজা করার নিয়ম রয়েছে। এই দিনে অন্নকূট এর বিশেষ গুরুত্ব বলে মনে করা হয়। এক প্রকার ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে আজও পর্যন্ত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!