বট সাবিত্রী পূর্ণিমা ব্রত (Vat Savitri Purnima Vrat), সৌভাগ্য লাভ করতে জেনে নিন পূজা পদ্ধতি: পূর্ণিমাতে উপবাস পালন করে থাকেন অনেকেই, আবার অনেকেই অন্ন গ্রহণ করেন না। তবে এর পাশাপাশি এমন অনেক পূর্ণিমা রয়েছে যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং শুভ বলে মনে করা হয়। এই যেমন ধরুন বট সাবিত্রী পূর্ণিমা ব্রত ও উপবাস।
প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)
এই উপবাস সৌভাগ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। বট সাবিত্রী পূর্ণিমার পূজা পদ্ধতি জেনে নিন এবং জীবনে নিয়ে আসুন সৌভাগ্য।
বট সাবিত্রী পূর্ণিমা ব্রত ও উপবাস:
সাধারণত বছরের দুবার পালিত হয় বট সাবিত্রী ব্রত উভয় উপবাসের পদ্ধতি, কাহিনী, নিয়ম ও গুরুত্ব কিন্তু একই রকমের। মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশে জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার দিনে বট সাবিত্রী ব্রত পালন করা হয়।
এই শুভদিনে সূর্য উদয় থেকে বিবাহিত মহিলারা তাঁদের স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করে থাকেন এবং সেই উপলক্ষে উপবাস পালন করেন এবং ব্রত রেখে বট বৃক্ষের পূজা করে থাকেন।
বট সাবিত্রী পূর্ণিমার উপবাস পালনের পৌরাণিক কাহিনী:
পৌরাণিক কাহিনী এবং বিশ্বাস অনুসারে দেবী সাবিত্রী তাঁর স্বামী সত্যবাণ এর জীবন রক্ষার জন্য টানা তিন দিন উপবাস করেছিলেন এই কারণে কিছু জায়গায় বট সাবিত্রী ব্রত শুরু হয় এবং তিনদিন যাবত এই পূজার অনুষ্ঠান চলতে থাকে। এই উপবাস ত্রয়দর্শী তিথি থেকে শুরু হয় এবং অমাবস্যার দিনে বটবৃক্ষের পূজো ও প্রদক্ষিণ করে সৌভাগ্য কামনা করে সম্পন্ন করা হয়।
ব্রত পালনে প্রয়োজনীয় উপকরণ:
প্রতিটি পূজায় যেমন বিশেষ কিছু উপকরণ ছাড়া সেই পূজা সম্পন্ন করা যায় না, তেমনি বট সাবিত্রী পূর্ণিমার উপবাস ও ব্রত পালন করতে গেলে আপনাকে যে সমস্ত উপকরণ গুলি যোগাড় করতে হবে সেগুলি নিচে দেওয়া হল:-
- দুটি বাঁশের ঝুড়ি,
- সাবিত্রী ও সত্যবান এর মূর্তি,
- বাঁশের পাখা,
- লাল সুতো,
- জল ভর্তি মাটির পাত্র,
- কাঁচা তুলো,
- ধূপকাঠি,
- গঙ্গাজল,
- প্রদীপ,
- বাতাসা,
- দেড় মিটার কাপড়,
- ফল,
- সাত ধরনের শস্য,
- ফুল এবং ঢেঁড়স,
- মাটির প্রদীপ,
- রোলি,
- আতর,
- পান,
- সিঁদুর,
- চাল,
- সুপারি,
- নারকেল এবং বটগাছ,
- ভেজানো কালো ছোলা,
- মিষ্টি, ঘরে তৈরি করা মিষ্টি খাবার,
- যাঁরা প্রথমবারের মতো বট সাবিত্রী ব্রত পালন করছেন তাঁদের জন্য কাপড়ের তৈরি বর ও কনের জুটি প্রয়োজন পড়বে।
বট সাবিত্রী পূর্ণিমার উপবাস ও পূজা পদ্ধতি:
বটগাছ আমরা সকলেই দেখে থাকি যা বিশাল আকার ধারণ করে এবং অনেকটা জায়গা জুড়ে মানুষকে ছায়া প্রদান করে। হিন্দু ধর্মে বলা আছে বট বৃক্ষে ব্রহ্মা-বিষ্ণু ও মহেশ্বর এর বসবাস রয়েছে। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে বটবৃক্ষের পূজা করলে স্বামীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হয়।
তাই সকল বিবাহিত মহিলারা এটাই চাইবেন যে তাঁদের স্বামীর দীর্ঘায়ু হোক। স্বামীর উপর আসা সমস্ত সমস্যা, বিপদ, ঝামেলা যেন নষ্ট হয়ে যায়। এই দিনে মহিলারা বটগাছ কে প্রদক্ষিণ করেন এবং এর চারপাশে সুতো বেঁধে দেন নিজের মনের কথা জানিয়ে। এটি করলে স্বামীর দীর্ঘায়ু লাভ হয় এবং সন্তান লাভের ইচ্ছা পূর্ণ হয়।
বট সাবিত্রী পূর্ণিমার ব্রত পালন করার নিয়ম:
প্রতিটি পূজার মতো এই ব্রত পালন করার ক্ষেত্রে বিবাহিত মহিলাদের কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে চলতে হয়। তাহলে জানা যাক কিভাবে এই ব্রত পালন করবেন:-
- এই শুভদিনে বিবাহিত মহিলাদের কালো অথবা নীল রঙের পোশাক পরা একেবারেই উচিত নয়। এক্ষেত্রে লাল, হলুদ অথবা উজ্জ্বল কোনো রঙের পোশাক পরবেন যা শুভ বলে মনে করা হয়।
- বট গাছের চারপাশে এমন ভাবে ঘোরাঘুরি করুন যাতে প্রদক্ষিণের সময় নিজের পা অন্য কারো পা এবং অন্য কারো শরীর অথবা বটগাছকে স্পর্শ না করে।
- বট গাছের ডাল এই দিন একেবারেই ভাঙ্গা উচিত নয়, এই দিনে ডাল ভাঙলে আপনার জীবনে সমস্যা আসতে পারে তাই এই দিকটা বিশেষভাবে খেয়াল রাখা জরুরী।
- এই শুভদিনে আপনার স্বামী/স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া এড়িয়ে চলুন এবং বড়দের আশীর্বাদ নিন।
বট সাবিত্রী ব্রত পালন করার গুরুত্ব:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে, যে সমস্ত নারীরা উপবাস পালন করে থাকেন তাঁদের স্বামী, সন্তান আর সবাই খুবই সুখে শান্তিতে থাকেন এবং সেই সমস্ত নারীরা পুত্র, পৌত্র, ধন প্রাপ্ত হন এবং পৃথিবীর সমস্ত সুখ চিরকাল ভোগ করে থাকেন এবং স্বামীসহ ব্রহ্মলোকে স্থান পান।
এই উপবাস বিবাহিত মহিলাদের জন্য অত্যন্ত শুভ মানা হয়। তাছাড়া করবা চৌথ এর উপবাসের মতোই এর ফলাফল পাওয়া যায় বলেই জানা যায়। সংসারে সুখ, শান্তি সমৃদ্ধি বজায় রাখতে এই উপবাস বিবাহিত নারীদের জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ স্বরূপ।