Worldwide Bengali Panjika

শ্রাবণী পূর্ণিমার ব্রত পালন – Shravani Purnima Vrat


শ্রাবণী পূর্ণিমার ব্রত ও ব্রতাঙ্গ উপবাস পালন (Shravani Purnima Vrat): সারা বছর ধরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন ব্রত উপবাস পালন করতে হয় বিভিন্ন পূজার মধ্যে। এই উপবাস পালন করাটা খুবই সাধারণ একটি বিষয় হলেও এটি পালন করতে পারলে নিজেকে খুবই সুখী বলে মনে করা হয় এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়ার একটি অবসরও বলা যেতে পারে। তেমনি একটি ব্রত ও উপবাস পালন করার দিন হলো শ্রাবণী পূর্ণিমা (Shravani Purnima)।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

যদিও প্রতি পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান সত্যনারায়ণ, দেবী লক্ষ্মী ও চন্দ্রদেবের আরাধনা করার রীতি রয়েছে। কিন্তু পুরুষোত্তম মাস ভগবান বিষ্ণুর কাছে অত্যন্ত প্রিয় হওয়ার জন্য এই মাসের পূর্ণিমার গুরুত্ব আরো বেশি বেড়ে যায়।

শাস্ত্র অনুসারে এই দিনে লক্ষ্মী নারায়ণ ব্রত পালন করার বিধান রয়েছে, যে চান্দ্র বছরে সূর্য সংক্রান্তি পড়ে না তাকে বলা হয় মলমাস, অধিক মাস অথবা পুরুষোত্তম মাস। পুরুষোত্তম মাসে বিবাহ, গৃহপ্রবেশ, যজ্ঞ ও প্রভৃতি অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবে জরুরী পরিস্থিতিতে সকল আচার অনুষ্ঠান জীবন রক্ষাকারী মন্ত্রের সফল জপ এবং সমাজসেবা সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্ত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য করা যেতেই পারে।

শ্রাবণী পূর্ণিমার ব্রত পালন করার তাৎপর্য:

শ্রাবণী পূর্ণিমায় এই উপবাস সুখ ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি করে, তার পাশাপাশি সমস্ত মনের ইচ্ছা পূর্ণ করে। আর ধনসম্পদ, সুখ, বৈভব, ঐশ্বর্য, শান্তি বৃদ্ধি করে প্রতিটি সংসারে। অবিবাহিত মেয়েরা যদি এই উপবাস পালন করে থাকেন তবে শ্রী হরি ও মা লক্ষ্মীর কৃপায় তাঁরা উপযুক্ত বর পেয়ে থাকেন এবং যুবকরা যদি এটি পালন করে থাকেন তবে তাঁরা নিজেদের মনের মতো স্ত্রী পেয়ে থাকেন। মনের সঙ্গে চাঁদের সম্পর্কের কারণে মনের পবিত্রতা ও মানসিক শান্তির জন্যও এই উপবাস পালন করা হয়।

এই উপবাস জীবনে ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার করে বলে মনে করা হয় এবং আধ্যাত্মিকতার বিকাশ ঘটায়। এই পূর্ণিমা তিথিতে স্নান, অর্ঘ্য, তর্পণ, পূজো, জপ, তর্পণ, কীর্তন ও দান করলে জীবনকে ব্রম্ভ ঘট ও অন্যান্য কর্মের পাপ থেকে মুক্ত করে আত্মাকে শুদ্ধ করেন স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু। শাস্ত্রে এই মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান বিষ্ণুর পূজা খুবই ফলদায়ক বলে মনে করা হয়।

শ্রাবণী পূর্ণিমা ব্রত পালন করার নিয়ম:

এই শুভদিনে স্নান সেরে পুজোর স্থানে পূর্ব দিকে মুখ করে বসতে হবে। তারপর ঈশান কোণে একটি চৌকিতে লাল অথবা হলুদ বস্ত্র বিছিয়ে ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর ছবি অথবা মূর্তি স্থাপন করতে হবে। তারপর গঙ্গাজল, কুমকুম, হলুদ, গোটা চাল, রোলি, সিঁদুর, অষ্ট গন্ধ, চন্দন, ফল, ফুল, মিষ্টি, হলুদ দিয়ে পূজা করতে হবে।

খাঁটি ঘি দিয়ে তৈরি করা ক্ষীর ও মিষ্টির নৈবেদ্য নিবেদন করুন এবং লক্ষ্মী নারায়ণ ব্রতের ব্রতকথা শুনে কর্পূর ও ঘি দিয়ে আরতি করতে পারেন। এর পাশাপাশি রাতে পূর্ণিমার পূজো করুন, ভগবান বিষ্ণুর উপবাসের নিয়ম হল:- সংযম, বাকশুদ্ধি, কর্ম ও আচারের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

এই পূর্ণিমার ব্রত পালনের সাথে সাথে ভগবান নারায়ণ ও দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পেতে যা করবেন:

  • উপবাস রেখে ব্রত পালন করার সাথে সাথে ভাগবত গীতা পাঠ করতে পারেন অথবা শ্রবণ করতে পারেন।
  • শ্রীবিষ্ণুর সহস্র নাম, শ্রী রাম রক্ষা স্তোত্র, পুরুষ স্তোত্র পাঠ, ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায় নমো, ওম নমো নারায়নায় মন্ত্র উচ্চারণ একজন মানুষকে পবিত্র করে তুলতে পারে।
  • এছাড়া শ্রী বিষ্ণুর কৃপায় নিঃস্বার্থভাবে করা জপ, তপস্যা, পুজো পাঠ, দান, পূণ্য, আচার- অনুষ্ঠান সমস্ত কিছুর গুরুত্ব রয়েছে সবচেয়ে বেশি।
  • এছাড়াও এই ব্রত পালন করার পাশাপাশি অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে পারেন, দাতব্য সেবা করতে পারেন, বয়স্কদের সেবা করতে পারেন, বৃদ্ধাশ্রমে খাদ্য, বস্ত্র ও ওষুধ দান করতে পারেন।
  • ছাত্রদের বই দান করুন, কথা সাধক ও মহাত্মাদের ধর্মীয় বই দান করাকে পূণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়।
  • এই সময় আপনি যে জপ করবেন, তপস্যা করবেন এবং দান করবেন তার সুফল জন্মের পর জন্ম পর্যন্ত দাতার কাছে থেকে যায়।
  • বাড়ির মন্দিরে রক্ষিত লাড্ডু (নাড়ু) গোপাল এবং বিষ্ণুর অন্যান্য রূপের প্রতীক তুলসী-মঞ্চেও আপনি ভোগ নিবেদন করতে পারেন অথবা প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে পারেন।
  • যদি সারা মাস জুড়ে এই কাজটি করতে না পারেন তবে এই মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দান করলে সবচেয়ে বেশি পূণ্য ফল পাওয়া যায়।

শাস্ত্র অনুসারে মনে করা হয় যে সমস্ত নিয়ম মেনে এবং নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে এই রীতি পালন করলে সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অর্থ সুখ আসে। সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি ঘটে। এছাড়া এই শুভ তিথিতে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পবিত্র নদীতে স্নান করার প্রচলন রয়েছে। মনে করা হয় এই পূণ্য স্নানে কেটে যায় সমস্ত বাধা বিপদ এবং জীবন হয়ে ওঠে সমৃদ্ধময়। পূণ্য তিথিতে স্নান করার সময় সূর্য প্রণাম করেন বিশ্বাসীরা, উপাসনা করা হয় ভগবান বিষ্ণুর। এছাড়া এই পূর্ণিমা তিথিতে ভক্তের বাড়িতে সত্যনারায়ণ ব্রত এবং পুজো পালন করা হয়।

সকল ভক্তগণ এই দিনে উপবাস রেখে ব্রত পালন করেন এবং পূজা, আরতি এবং ভোগ নিবেদনের পরে ব্রত সমাপনের সাথে সাথে উপবাসও ভঙ্গ করেন। উপবাস, ব্রত ভঙ্গ করার সময় গ্রহণ করতে হয় নিরামিষ আহার, ফল খেতে পারেন, শরবতও পান করতে পারেন। এই পূণ্য তিথিতে দান, ধ্যান করাও খুবই পবিত্র বলে আমরা আগেই জেনেছি। জীবনের সমস্ত বাধা বিপদ কাটিয়ে সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বজায় রাখতে এই ব্রত পালন করতে পারেন আপনিও।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!