বামন দ্বাদশী (Vamana Dwadashi) বা বামন জয়ন্তী (Vamana Jayanti): বিভিন্ন পূজা অর্চনা ব্রত পালনের মধ্যে দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতিটি দিন যেন সুন্দরভাবে কাটতে থাকে। বামন জয়ন্তী/দ্বাদশীও এমন একটি পূজা অনুষ্ঠান এবং ব্রত যা বাড়ির সদস্যদের মধ্যে অনেকেই এই ব্রত পালন করে থাকেন। বামন জয়ন্তী (Vamana Jayanti) পালন করা হয় ভগবান বিষ্ণুর পঞ্চম অবতার অর্থাৎ বামন অবতারকে স্মরণ করে তাঁকে পূজা করা হয়।
পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে জানা যায় যে, ভগবান বিষ্ণু বামন অবতারে অর্থাৎ বামন রূপে অবতরণ করেছিলেন এই মর্ত্যে (পৃথিবী)। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশীতে অভিজিৎ মুহূর্তে অর্থাৎ শ্রবণা নক্ষত্রে ভগবান বামন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঋষি-কাশ্যপ ও অদিতির পুত্র হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন।
বামন জয়ন্তীর গুরুত্ব:
প্রতিটি ব্রত পালন করার পিছনে রয়েছে কাহিনী এবং গুরুত্ব। বামন জয়ন্তী পালন করা হয় ভগবান বিষ্ণুর পঞ্চম অবতার অর্থাৎ বামন অবতারের জন্ম কে স্মরণ করে।
পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে এটা মনে করা হয় ভগবান বিষ্ণু ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষে দ্বাদশী তিথিতে রাজা বলির হাত থেকে স্বর্গ কে রক্ষা করতে জন্মগ্রহণ করেন। ভাগবত পুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভগবান বিষ্ণুর দশটি অবতারের মধ্যে বামন অবতার ছিল পঞ্চমতম অবতার।
বামন দ্বাদশী / বামন জয়ন্তী পূজা বিধি:
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, বামন দ্বাদশী অর্থাৎ বামন জয়ন্তীতে কিভাবে পূজা করবেন :
- এই দিনে ভগবান বিষ্ণুকে বামন রূপে পূজা করা হয়।
- উপাসককে সূর্য উদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে নিতে হবে।
- তারপর ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান করে উপবাসের সংকল্প নিতে হবে।
- পঞ্চ উপাচার ও ষোড়শ উপাচারে পুজোয় বামন দেবের মূর্তি পূজা করতে হবে।
- এই মূর্তির সামনে বসে বৈদিক আচার মেনে পূজা করতে হবে।
- ভগবান বামন দেবের উপবাসের ব্রতকথা পড়তে হবে বা পড়তে না পারলে শ্রবণ করা উচিত।
- পূজার পরে ভগবানকে ভোগ নিবেদন করতে হয় এবং প্রসাদ বিতরণ করতে হবে।
- বামন জয়ন্তীর দিন চাল, দই ও চিনি দান করাটাও খুবই শুভ বলে মনে করা হয়।
বামন দ্বাদশী উপবাস পালনের উপকারিতা:
পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে বামন দ্বাদশীর দিন ভগবান বিষ্ণুর পূজা করলে সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা দূর হয়ে যায় আর এই শুভদিনে বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ করা যে কোনো ব্যক্তির জন্য খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। এছাড়াও ভগবান বিষ্ণুর ১০৮ টি নাম জপ করতে পারেন।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী জানা যায় মূলত বিধবা এবং ব্রাহ্মণরা এই ব্রত পালন করেন। তবে শাস্ত্রে এরকম কোন কিছু নির্দিষ্ট করে বলা নেই। যে কেউ শ্রী বিষ্ণুর স্মরণ নিয়ে এই ব্রত পালন করতে পারবেন। মনে করা হয় একাদশী ব্রত পালন করলে যে কোন দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা করেন স্বয়ং নারায়ন।
ব্রত পালনের দিন কারো ক্ষতি করা বা ওই জাতীয় চিন্তা মনে আসলেও শুভফল লাভ করা যায় না। একই সঙ্গে এই শুভদিনে অবশ্যই পূজা করতে পারেন তুলসীর, কেননা নারায়ণের পূজায় অতি আবশ্যক এই গাছের পাতা।