Worldwide Bengali Panjika

করম পূজা – Karam Puja


করম পূজা (Karam Puja) নিয়ম এবং এই পূজার ঐতিহ্য সম্পর্কে জানুন: বিভিন্ন রকমের পূজা পার্বন নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাঁদের জীবন অতিবাহিত করে থাকেন। তবে হিন্দু ধর্মে অনেক ক্ষেত্রে অনেক ভিন্ন জাতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পূজা অর্চনা সারা বছরটাকে মাতিয়ে রাখে।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশী অথবা পার্শ্ব একাদশীতে এই করম পূজা অথবা করম উৎসব পালিত হয়। টুসু গান, ভাদু গান, জিতা, ছাতা, আখান, সারহল, বাঁদনা এগুলি হল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উৎসব তবে যা প্রাচীন এর দিক থেকে জাওয়া অথবা করম উৎসবটি একটু ভিন্ন তৎপর্য বহন করে। এটি কে বলা হয় আদিম জনগোষ্ঠীর ধারক ও বাহক।

এর মধ্যে অন্যতম রয়েছে সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও, কামার, কুমোর, ডোম, ঘাসি, কুড়মি, ভূমিজ প্রকৃতি হল হড়মিতান জনগোষ্ঠী। তবে এখানে একটা কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, কুড়মি সমাজের মধ্যে এর স্বীকৃতি মান্যতারও কিন্তু ব্যাপকতা রয়েছে।

করম পূজা বা করম উৎসব:

গ্রাম বাংলার এক প্রাচীন পার্বন হল করম অথবা করম পূজা। এই উৎসবটি প্রধানত সৃষ্টির উৎসব কর্ম থেকে করমের উৎপত্তি। ঝাড়খণ্ডের কিছু জায়গায় এই উৎসব কোর্মা নামে পরিচিত, আবার ভালো করে দেখলে বোঝা যায় যে, এই উৎসবের মূল আচার অনুষ্ঠান হল জাওয়া পাতা, তার মধ্যেও লুকিয়ে আছে এক সিজনশীলতার ইঙ্গিত।

এই দিনে মা ও বোনেরা সারাদিন উপবাস করে এবং ভগবান কর্মের পূজা করেন এবং তাঁর কাছে তাঁদের ভাইদের দীর্ঘায়ু এবং সুখ ও সমৃদ্ধি আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। ঠিক যেমনটা রাখি বন্ধন এবং ভাইফোটার সময় বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বী মা বোনেরা পালন করে থাকেন।

করম পূজা বা করম উৎসবের নিয়ম এবং বিভিন্ন দিক:

এই পূজা উপলক্ষে আদিবাসীরা ঈশ্বরের কাছে ভালো ফসল কামনা করেন। করম উপলক্ষে পূজা প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে মানুষ ঢোল, মন্দার ও নাগরার তালে নাচতে থাকেন। এই উৎসবটি ঐতিহ্য রক্ষা করার পাশাপাশি সমস্ত মানুষের বিনোদনের একটি ভালো মাধ্যম, যেখানে পুরুষরা সারারাত পানীয় পান করেন, গান গাইতে থাকেন এবং নাচেন।

পূজার ৯ দিন আগে নদীর বালি ঝুড়িতে রাখা হয়, সাজানো হয় এবং সাত ধরনের শস্য রোপন করা হয় যা পুজোর দিন অঙ্কুরিত হয়, যাকে বলা হয় জাভা ফুল। পাতা ও ফুল দিয়ে সাজানো হয় পূজার জায়গা গুলি যে ভক্ত পূজায় অংশগ্রহণ করেন, তাঁকে স্নান করাতে হয়।

সন্ধ্যায় নতুন পোশাক পরে পূজায় অংশগ্রহণ করতে হয়। যুবকরা করম ডাল কেটে সন্ধ্যায় নিয়ে আসেন। পুরোহিত পূজার স্থানে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করেন। পূজার সঙ্গে সঙ্গে কর্ম, ধর্ম, কাহিনী বর্ণনা করা হয়।

করম গাছ কি?

করম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হল: Haldina Cordifolia, অর্থাৎ রবিআসি পরিবারের হালদিনা গনের পত্রমোচী সুপুষ্পক বৃক্ষ। এটি এই গণের একমাত্র বৃক্ষ। আর এই গাছ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচুর পরিমাণে জন্মায়।

করম উৎসব (Karam Utsav) হল সৃষ্টির একটি উৎসব এবং এটি ঝাড়খন্ড, ছত্রিশগড়, বিহার, মধ্যপ্রদেশ এবং আসামের আদিবাসীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এবং প্রিয় একটি উৎসব। এছাড়াও আরো অনেক আদিবাসী সম্প্রদায় এই উৎসব পালন করে থাকেন হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ভাদ্র মাসে।

করম উৎসব উদযাপন:

এ সময় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন লাল, হলুদ, বেগুনি শাড়ি আর খোপায় বাহারি ফুল গুঁজে ঢোল আর মাদলের তালে নাচে গানে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। বেশ জংলি সাজে নেচে গেয়ে তুলে ধরেন নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে।

দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে আসতে শুরু করেন ক্ষুদ্র নৃত্য গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দলবদ্ধ নারী পুরুষ। এরপর বিকেল হতেই সেই ক্ষুদ্র নৃত্য গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার গাওয়া গান আর ছন্দময় নাচে অংশগ্রহণ করেন তরুণ তরুণী সহ নানা বয়সী নারী পুরুষ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!