Worldwide Bengali Panjika

উত্তর বাহিনী মাতার পূজা – Uttar Bahini Puja


উত্তর বাহিনী মাতার পূজা (হুগলি জেলার শিয়াখালা) – Uttar Bahini Puja: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিভিন্ন পূজা-অর্চনা থাকলেও এমন কিছু অঞ্চল এবং জায়গা রয়েছে সেখানকার এক একটি পূজা সেই জায়গার ঐতিহ্য এবং পরম্পরা ধরে রাখে। তবে এই উত্তর বাহিনী এই দেবীর কথা রূপরামের ধর্মমঙ্গল এর দিকবন্দনা কাব্যে উল্লেখ রয়েছে।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

দেবী উত্তর বাহিনী মাতা (Devi Uttar Bahini Mata) হুগলি জেলার এক ছোট্ট জনপদ শিয়াখালা এই অঞ্চলের প্রাচীন লৌকিক দেবী হলেন উত্তর বাহিনী। বহু প্রাচীন এই দেবীর খ্যাতি এই জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা রাজ্য তথা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এই দেবীর মূর্তি খুবই বিরল। এই রাজ্যে কোন লৌকিক দেবতার এত বড় মূর্তি নেই বললেই চলে। উত্তর বাহিনী দেবী বিশালাক্ষীর আরেকটি রূপ দেবী উত্তর বাহিনীর মূর্তি প্রায় সাত ফুট উঁচু বলে জানা যায়।

উত্তর বাহিনী দেবীর স্বরূপ:

এই দেবীর মূর্তি এবং রুপ অনেকটাই বিরল, উত্তর বাহিনীর মূর্তি খুব দীর্ঘি ও বিশেষ বলীষ্ট্য দেবীর গায়ের রং হলুদের ভেতর থেকে লাল আভাযুক্ত অর্থাৎ রক্তাক্ত হরিদ্রা, মাথার চুল আলুলায়িত ও তার উপরে মুকুট দেওয়া। ত্রিনেত্র, নাকে নথ রয়েছে, গলায় মুক্তমালা রয়েছে, তার সাথে বিভিন্ন অলংকারে অলংকৃত রয়েছেন।

দেবী দ্বিভূজা অর্থাৎ দেবীর দুটি হাত রয়েছে, তাঁর ডান হাতে রয়েছে খড়গ আর বাম হাতে রয়েছে রুপার পাত্র। উত্তর বাহিনী দেবী উলঙ্গিনী নন, তাঁর পোশাক বিচিত্র রক্তাম্বর বিভিন্ন বর্ণের শাড়ি কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে এবং শুধুমাত্র বক্ষযুগল পাঁচুলি বা বক্ষবন্ধনি দিয়ে ঢাকা রয়েছে।

এক কথায় বলতে গেলে হিন্দুস্থানী নারীরা যে ধরনের পোশাক পরেন লেহেঙ্গা চোলি ধরনের পোশাক পরে রয়েছেন এবং যে ধরনের হার, চুড়ি, পায়ের নূপুর, পলা পড়ে থাকেন তাঁরা সেই ধরনেরই অলংকার দিয়ে সজ্জিত হয়ে রয়েছেন দেবী উত্তর বাহিনী। দেবী মহাদেবের বুকের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁর দুই চরণের মধ্যে বাম পা জোড়হাতে উপবিষ্ট নীল বর্ণের বটুক ভৈরবের মাথায় আর ডান পা শায়িত কাল রুপী শিবের বুকের উপরে। দেবীর দুই চরণের মধ্যে শিবের নাভি দেশে দৈত্য নিশুম্ভ এর একটি চিত্র মুন্ডু ও গলায় আছে দুটি সাপের মূর্তি।

উত্তরবাহিনী দেবীর বিগ্রহ মন্দিরে স্থাপিত হওয়ার ঘটনা:

সাধারণত এই উত্তর বাহিনী দেবীর মন্দির (Uttar Bahini Temple) এবং মূর্তি যে অনেকটাই প্রাচীন তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে বর্তমান যে বিগ্রহটি মন্দিরে স্থাপিত রয়েছে সেটির বয়স ৯০ বছর, ১৩৪০ বঙ্গাব্দের ১৬ আষাঢ় এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে ১৪৩০ এর আগে দেবী ছিলেন মৃন্ময়ী। লোকমুখে শোনা কথা অনুযায়ী এবং মন্দিরের গায়ে লাগানো ফলক অনুসারে শিয়াখালার পাশ দিয়ে বয়ে চলা কৌশিকী নদীর গর্ভ থেকে শিয়াখালার শান্ডিল্য গোত্রের ভট্টনারায়ণ বংশের এক সাধক দেবীর পাষাণ মূর্তি প্রাপ্ত হন।

কিন্তু সে মূর্তি ছিল অপরিসর মাত্র ৬ ইঞ্চি, দেবী মূর্তি খুবই ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে গ্রামের বিশিষ্ট বর্গ ও গ্রামবাসি মিলে দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি স্থাপন করেন এবং পাষাণ মূর্তিটি সোনার সাজে মন্দিরে পুজো হতে থাকে, আর একে বলা হত ‘ভোগ মূর্তি’। পরবর্তীতে সময় বদলানোর সাথে সাথে এই পাষাণ মূর্তি খোয়া গেলে অর্থাৎ হারিয়ে গেলে কাশির ভাস্করদের দ্বারা বর্তমান এই বিগ্রহটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই বিগ্রহ নির্মাণে স্থানীয় চিকিৎসক যামিনী কান্ত রায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন।

উত্তরবাহিনী দেবীর পূজা অর্চনা:

দেবীর পূজা অর্চনা খুবই জাকজমকপূর্ণ ভাবে হয়ে থাকে। দেবীর ঘট অথবা নবঘট প্রতিষ্ঠিত হয় শারদীয়া শুক্ল একাদশী তিথিতে। তবে প্রত্যেক বছর ১৬ আষাঢ় পালিত হয় দেবীর বার্ষিক উৎসব। ১৬ ও ১৭ তারিখ দুই দিন পুজো উপলক্ষে ভক্ত সমাগম চোখে পড়ার মতো মন্দির প্রাঙ্গণে। আকর্ষণীয় উত্তর বাহিনীর ভোগ আয়োজনের সারা গ্রামের মানুষ একত্রিত তো হনই, তার সাথে দূর দূরান্তর থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ ভিড় জমান এখানে পূজায় অংশগ্রহণ করার জন্য এবং ভোগ ও প্রসাদ গ্রহণ করার জন্য।

এছাড়া এই পূজা উপলক্ষে মন্দির চত্বরে মেলাও বসে। আলো-মালায় সেজে ওঠে মন্দির আর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে উত্তর বাহিনী দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পুরোহিত আরতির মধ্যে দিয়ে দেবীকে আরাধনা করেন এবং সেই আরতিতে অংশগ্রহণ করেন অনেক ভক্তগণ। দেবীকে শাড়ি নিবেদন করা হয় এবং শঙ্খ ধ্বনি, ঘন্টা ধ্বনি সহযোগে ফল, ফুল দিয়ে ভক্তি সহকারে পূজা সম্পন্ন করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!