শ্রী শ্রী সূর্য পূজা পদ্ধতি (Surya Puja Vidhi): আমাদের এই পৃথিবীকে শস্য শ্যামলা করে রাখতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে সূর্য। তবে এই সূর্যকে দেবতা হিসেবে অথবা ভগবান রূপে পূজা করা হয়ে থাকে হিন্দু ধর্মে। বিশেষ করে সপ্তাহে রবিবারের এই দিনটি খুবই শুভ বলে মনে করা হয়, সূর্য দেবতার উপাসনা করার জন্য রবিবার সূর্য ভগবানের আরাধনা করলে সমস্ত মনোবাসনা পূর্ণ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। আর এই রবিবারটাই সূর্য দেবতার পূজার জন্য উৎসর্গীকৃত।
প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)
ভগবান সূর্যকে মহাবিশ্বের প্রাণশক্তি বলা হয়। পৃথিবীতে প্রাণ আছে শুধুমাত্র ভগবান সূর্যের কারণে, যিনি প্রতিদিন সরাসরি দর্শন দেন আবার অস্ত যাওয়ার সাথে সাথেই পৃথিবীতে নেমে আসে অন্ধকার। যে সূর্যের আরাধনা চিরন্তন ঐতিহ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় সেই একই সূর্য রশ্মির উপকারিতাও বিজ্ঞান খুবই প্রয়োজনীয় বিষয় বলে মনে করে। কেননা জীব জগতে সূর্য ছাড়া কোন কিছুই ভাবাই যায় না।
সবুজ গাছপালা থেকে মানব শরীরে সূর্যের ওই তাপ অথবা রোদ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সাহায্য করে এবং শরীরে ভিটামিন D প্রদান করে। সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে এই প্রকৃতি আমাদের ফল, ফুল উপহার দেয়।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সূর্য দেবতার পূজা নিয়ম সম্পর্কে:
বিশেষ করে রবিবারে যে সূর্য দেবতার আরাধনা করা হয় সেক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম পালন করতে হয়। সূর্য ভগবানের আরাধনা করলে সমস্ত মনোবাসনা পূর্ণ হয় সূর্য দেবতার পূজার জন্য বেশ কিছু নিয়ম আপনাকে পালন করতে হবে। যদি আপনার মনের অনেক ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা থাকে তবে আপনি অবশ্যই উপবাস রেখে ব্রত পালন করে সূর্যদেবের আরাধনা করতে পারেন।
সূর্য পূজার সময়:
ভারতের সূর্য উপাসনার জন্য প্রসিদ্ধ রয়েছে ছট পূজা অর্থাৎ এই ছট পূজা পার্বণ সূর্য পূজার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আর এই সূর্য দেবতার আরাধনা বছরে দুবার পালিত হয়, প্রথমবার চৈত্র মাসে চৈতি ছট পূজায় এবং দ্বিতীয়বার কার্তিক মাসের কার্তিকী ছট পূজায়।
শুক্ল পক্ষে রবিবারের সূর্যদেবের মন্ত্র জপ শুরু করতে হয়, মন্ত্র জপ করার সময় লাল আসনে বসা উচিত। পুজোর সময় ঘি এর প্রদীপ জ্বালাতে হয়, তবে প্রথমে গুরু, গণেশ, বিষ্ণু, শিবের উপাসনা করার পরেই শুরু করতে হয় সূর্য মন্ত্র জপ করা।
এইভাবে সূর্যদেবের উপাসনা করলে দেবতা ভক্তদের উপরে সন্তুষ্ট হন এবং শারীরিক ও মানসিক কষ্ট থেকে রেহাই দেন। সূর্যদেবকে সন্তুষ্ট করার জন্য রবিবার গুড় দান করা উচিত। এই দিন দান করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, ব্যক্তি নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী দান করতে পারেন এবং সাধ্য অনুযায়ী দান করতে পারেন। কমলা রং হলো সূর্যের প্রিয় রং, রবিবারের দিন তাই এই রঙের কাপড় পড়া উচিত অথবা সূর্য পূজায় বসার সময় কমলা রঙের পোশাক পরিধান করা খুবই শুভ।
সূর্যদেবের পূজার উপকরণ:
- ফল,
- ফুল,
- ধুপ,
- ধুনো,
- প্রদীপ,
- ঘি,
- লাল,
- চন্দন,
- লাল ফুল,
- গঙ্গাজল অথবা পবিত্র নদী বা জলাশয়ের জল,
- লাল সুতো,
- তামার মুদ্রা,
- বিভিন্ন নৈবেদ্য,
- তামার পাত্র,
- তামার ঘট ইত্যাদি
শ্রী শ্রী সূর্য পূজা পদ্ধতি:
১) সবার প্রথমে ব্রহ্ম মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করতে হবে।
২) সমস্ত প্রাত কাজ স্নানের আগে সম্পন্ন করতে হবে, সূর্য আরাধনা করার জন্য সংকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং প্রথমে সূর্যদেবকে তিনবার জলের অর্ঘ্য নিবেদন করতে হবে।
৩) সূর্যের সাধকের উচিত ভক্তি সহকারে তার শতনাম ও স্তোত্র বা সহস্রনাম পাঠ করা এবং প্রতিদিন তার মন্ত্র জপ করা।
৪) সূর্যদেবের ভক্তকে প্রতিদিন আদিত্য হৃদয় স্তোত্র পাঠ করতে হবে, এটি পাঠ করলে খুব শীঘ্রই সূর্যদেবের আশীর্বাদ পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হয়।
৫) সূর্য দেবতার বিশেষ আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য সূর্যের অন্বেষণকারী কে নিয়ম অনুযায়ী রবিবারে উপবাস পালন করা উচিত এবং রবিবারের তেল, লবণ ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা উচিত অর্থাৎ এগুলি খাওয়া যাবে না।
৬) যে সমস্ত ভক্তরা সূর্যদেবের উপাসনা করার জন্য যদি রবিবার উপবাস পালন করে থাকেন তাহলে তাঁদেরকে অবশ্যই ব্রহ্মচর্য পালন করতে হবে।
৭) সূর্য দেবতার আশীর্বাদ পেতে প্রতিদিন শ্রীখন্ড চন্দন বা রক্ত চন্দনের তিলক লাগানো উচিত।
৮) আর যদি কোন ভক্তের রাশিতে সূর্য অশুভ ফল দেয় তাহলে সূর্যের শুভ ফল পাওয়ার জন্য সেই ভক্তের গলায় একটি তামার মুদ্রা পরে থাকা উচিত, শুধুমাত্র একটি লাল সুতোয় একটি তামার মুদ্রা পরিধান করতে হবে।
৯) সূর্য পূজার জন্য তামার থালা ও তামার পাত্র ব্যবহার করতে হবে। একটি প্রদীপ নিন, একটি পাত্রে জল নিয়ে তাতে এক চিমটি লাল চন্দনের গুঁড়ো ও লাল ফুল অর্পণ করতে হবে।
১০) থালায় প্রদীপ ও ঘট রাখুন, এরপর সূর্য মন্ত্র জপ করতে করতে সূর্যদেবকে জল নিবেদন করতে হবে এবং নমস্কার করতে হবে।
১১) জলের অর্ঘ্য উৎসর্গ করার সময় পাত্র থেকে জলের স্রোতের দিকে চোখ রাখুন, জলের স্রোতে সূর্যের প্রতিচ্ছবি বিন্দু হিসেবে ফুটে উঠবে।
১২) জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে সূর্য দেবের উপাসনা করতে গম, তামা, ঘি, সোনা ও গুড় দান করার কথা বলা হয়েছে, যা সূর্যের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত এবং অশুভকে দূর করে শুভকে জীবনে ডেকে নিয়ে আসে।
১৩) সুস্থ চোখ পাওয়ার জন্য এবং চোখের কোন রোগ যদি থেকে থাকে তাহলে সেই রোগ তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে সূর্যদেবের আরাধনা করা উচিত। চোখের রোগ এড়াতে এবং রক্ষা করতে একজনকে প্রতিদিন ভক্তি সহকারে সূর্য আরাধনার সমস্ত নিয়ম পালন করতে হবে।
✨ পৌরাণিক বেদে সূর্যকে পৃথিবীর প্রাণ এবং ঈশ্বরের চক্ষু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সূর্যের উপাসনা জীবন শক্তি, মানসিক শক্তি, শক্তি এবং জীবনের সাফল্য বয়ে নিয়ে আসে। এই কারণেই মানুষ উদীয়মান সূর্য দেখা শুভ বলে বিবেচনা করে থাকেন এবং সূর্যকে অর্ঘ্য অর্পণ করে নিজের জীবনের শুভ শক্তির সঞ্চার করে থাকেন।
মৎস্য পুরাণ অনুসারে এই জল অর্পণ সম্পূর্ণরূপে ভগবান সূর্যদেবকে উৎসর্গ করা হয়। এই দিনে স্নান করা, দান করা, বাড়িতে পূজা করা ইত্যাদি কিন্তু হাজার গুণ বেশি শুভ ফল দান করে। তাছাড়া ভক্তরা এই দিন গঙ্গায় পূণ্য স্নান করতে যান। যা দ্বিগুণ পূণ্যলাভ হয়ে থাকে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, এই সময়ে পবিত্র স্নান করা একজন ব্যক্তিকে সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি দেয় এবং তাঁকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তোলে।