শ্মশান কালী মায়ের পূজা বিধি (Smashan Kali Maa Puja Vidhi): হিন্দু ধর্মে মা কালী কে বিভিন্ন রূপে এবং বিভিন্নভাবে পূজা করা হয়। মা কালীর (Maa Kali) বিভিন্ন রূপ বাড়ি, মন্ডপ, মন্দির অথবা শ্মশান যেকোনো জায়গাতে পূজা করার জন্য আলাদা আলাদা রূপের বর্ণনাও রয়েছে।
প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)
শ্মশান কালী দশমহাবিদ্যার প্রথম বিদ্যা, কালী অথবা কালিকার একটি রূপ। শাস্ত্রমতে দেবী কালিকা ব্রহ্মময়ী। মা কালী নিরাকার ও সাকার উভয় রূপেই কিন্তু অবস্থান করেন এবং উভয় রূপেই মর্ত্যবাসীর কাছে পূজা পেয়ে থাকেন।
শ্মশান কথাটির অর্থ হল মৃতদের স্থান, চলতি কথায় যেখানে শব দাহ করা হয়। আবার অন্য দিক থেকে মা কালী কে ধ্বংসের দেবী বলে। এই ধ্বংস মানে সর্বনাশ করা নয়, এর অর্থ তিনি নিজেই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড রচনা করেছেন আবার তিনি নিজেই গুটিয়ে নেন। এখানে কালীপুজো করার অর্থ হলো মানুষ তার শেষ জীবনে মায়ের কোলে আশ্রয় পায় এবং তাতে সে অসীম শান্তি ও আনন্দ পায়।
শ্মশান কালী মায়ের রূপের বর্ণনা:
মা কালীর বিভিন্ন রূপের মধ্যে শ্মশান কালী (Smashan Kali) হল একটি রূপ, আর এই দেবী অঞ্জনা পর্বতের মতো কৃষ্ণবর্ণা, শুষ্ক শরীর বিশিষ্টা। চক্ষু রক্তিম আভায় ভূষিতা, আর এই দেবীর কেশ আলুলায়িত।
দেবীর ডান হাতে থাকে সদ্য ছিন্ন হওয়া নরমুন্ড এবং বাম হাতে আসবপূর্ণ নর মুন্ড নির্মিত পানপাত্র। দেবী সর্বদাই ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকেন। শবরূপী সাদা শিবের উপর দন্ডায়মান, কপালে অর্ধচন্দ্র শোভিতা।
শ্মশান কালী দেবীর পূজার স্থান:
পৃথিবীবাসী তাদের সুবিধা মত মা কালীর পূজা-অর্চনা করে থাকেন বিভিন্ন স্থান ভেদে। কালী মায়ের সাধনা করেছেন অনেক সাধক, তবে সাধকদের কাছে সেই কর্মের প্রয়োজন অনুরূপ রূপে দেবীর পূজা বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়।
তেমনি শ্মশান কালীর পূজা শ্মশানে অনুষ্ঠিত হয়। কালীর সব রুপই কিন্তু শ্মশানবাসিনি। তবে গৃহস্থের বাড়িতে তার আরাধনা মূলত দক্ষিণা কালিকা বা রক্ষা কালী রূপেই হয়। তবে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে শ্মশান কালীকে মানুষ শ্মশানেই পুজো করতে অভ্যস্ত। আর এই কালী মায়ের অর্থাৎ শ্মশান কালী পূজা কোনো গৃহস্থ বাড়িতে করা শুভ নয়।
শ্মশান কালী মায়ের পূজা:
তন্ত্র সাধনা যাঁরা করেন তাঁরা শ্মশানকালীর আরাধনা করেন বলে জানা যায়। এই শ্মশান কালীর পূজা তান্ত্রিকগণ মাছ-মাংস আর মদ উপাচার দ্বারা পূজা করে থাকেন। তবে এই তান্ত্রিক মাছ, মাংস বা মদ বলতে যা জিনিসকে নির্দেশ করেন আসলে সেটি একটি সংকেত মাত্র।
এই শ্মশানকালীর পূজায় অন্যান্য সবকিছু দক্ষিণা কালিকা পূজার অনুরূপ বলা যায়। পূজা যন্ত্রের সামান্য কিছু প্রভেদ বর্তমান রয়েছে। বীজ মন্ত্র দক্ষিণা কালিকার মন্ত্র থেকে কিছুটা ভিন্ন তবে মা কালীর মূল বীজ যে কোন রূপভেদেও এক ও অভিন্ন।
বীরভূমের দুবরাজপুরের শ্মশান কালী মায়ের পূজা:
এখানে মায়ের মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত যিনি তিনি জানিয়েছেন যে এটি প্রায় হাজার বছরের পুরনো একটি মন্দির। এখানে কালী মাকে সাধকরা তপস্যা করে পেয়েছেন তখন ভৈরব নামে এক পূজারী পূজা করতেন, মায়ের বেদি তৈরি হয় ১০৮ টি মড়ার মাথা দিয়ে এবং সেই বেদীর উপরে মা পূজিতা হন।
এছাড়া উলঙ্গ হয়ে মাকে পূজা করতে হয় এবং পুজো করার সময় মায়ের মন্দিরের ভিতরে কেউ প্রবেশ করতে পারেন না বলে জানা যায়। মায়ের ঘট ভরতে যাওয়ার সময় সামনে শিয়াল হেঁটে হেঁটে যায় এই প্রথাটি অনুযায়ী বিগত হাজার বছর ধরে হয়ে আসছে এখানে। মা দক্ষিণা কালী রূপে পূজা পান এখানে শ্মশান কালী, সারা বছর মাকে রেখে দিয়ে একাদশীর দিন মায়ের বিসর্জন দেওয়া হয়।