Worldwide Bengali Panjika

সিদ্ধেশ্বরী মাতার পূজা – ️Siddheswari Puja


সিদ্ধেশ্বরী মাতার পূজা (Siddheswari Puja): দেব-দেবীদের বিভিন্ন রূপের পূজা করা হয় বিভিন্ন ভাবে। তেমনি সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পূজা সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন বা অনেকেই জানেন না। সিদ্ধেশ্বরী মাতার পূজা বহু প্রাচীনকাল আগে থেকে প্রচলিত রয়েছে এবং আজও পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় স্থান বিশেষে বিভিন্নভাবে মা সিদ্ধেশ্বরীর পূজা (Siddheswari Puja) অর্চনা করা হয়ে থাকে।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

কৃষ্ণনগরের উত্তর ও দক্ষিণের বিখ্যাত পূজা সিদ্ধেশ্বরী কালী পূজা (Siddheswari Kali Puja) আনন্দময়ী মাতার পূজাকে ঘিরে আজও পর্যন্ত ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা যায়। পুরনো প্রথা মেনে দুটি ভিন্ন কালী মন্দিরের আগে থেকে একাধিক নিয়ম রীতি মেনে চলতে হয়।

সিদ্ধেশ্বরী কালী মায়ের আরাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন তারানাথ ব্রহ্মচারী (Taranath Brahmachari)। আর মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নে পেয়েছিলেন আনন্দময়ী মাতাকে। ২ দেবীর পূজোয় সারা বছর ধরে পালিত হয়। সারা বছর বিভিন্নভাবে বিভিন্ন শুভ কাজে মানুষ এই দুটি কালী মন্দিরে পূজা দিতে আসেন।

সাধারণ মানুষজন থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও তাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ করতে এই মন্দিরে এসে পূজা দিয়ে যান। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেও এই মন্দিরে মায়ের আশীর্বাদ নিতে আসেন। মা খুবই জাগ্রত বলে জানা যায় স্থানীয় মানুষজন দের কাছ থেকে।

সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পূজা:

এই পূজা কবে থেকে প্রচলিত হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা না গেলেও অনুমান করা হয় যে কয়েকশো বছরের পুরানো এই পূজা, তবে কালিবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে জলঙ্গি নদীর ওপারে এক তান্ত্রিকের আশ্রম ছিল, তিনিই তারানাথ ব্রহ্মচারী, ওই দেবীর আরাধনা করে তিনি সিদ্ধি লাভ করেছিলেন। সেই থেকে ওই দেবী সিদ্ধেশ্বরী কালী (Devi Siddheswari Kali) নামে পরিচিত হয়ে পড়েন সকলের কাছে।

দেবী সিদ্ধেশ্বরী (Devi Siddheswari) কে ভোগ দেওয়া হয় পাঁচ রকম ভাজা, তরকারি, খিচুড়ি, চাটনি, রুই মাছ, শোল মাছ, ইলিশ মাছ, পরমান্ন এবং বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি দিয়ে। এছাড়া নিমকি জাতীয় খাবার, গজা, সুজি, জিলাপিও দেওয়া হয় মায়ের ভোগে।

প্রধান যিনি পুরোহিত তিনি সারা বছর ধরে এই মন্দিরে হোম ও যজ্ঞ করেন। তবে কালী পূজার দিন এখানে বিশেষ হোম যজ্ঞের আয়োজন করা হয়। এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে সেই আরতি ও হোম চলতে থাকে। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের স্বপ্নে পাওয়া দেবী এখানে একেবারে অন্যরকম। রাজবাড়ীর কাছে দক্ষিণ মুখী মন্দির নির্মাণ করে আনন্দময়ী কালী মূর্তি (Anandamayi Kali Murti) প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর এই দেবীর নামে মন্দির সংলগ্ন এলাকার নাম হয়েছে আনন্দময়ীতলা, তবে মন্দিরটি মূলত চারচালা বিশিষ্ট।

সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মূর্তি:

পঞ্চমুন্ডি আসনের উপর পাথরের বেদীতে হাঁটু মুড়ে যোগাসনে শুয়ে রয়েছেন শিব এই শিবের বুকের উপর পদ্ম আসনে বসে আছেন কষ্টিপাথরের মা আনন্দময়ী। মন্দিরের পুরোহিত জানান যে, এখানে মায়ের ভোগে খিচুড়ি, সাদা ভাত, পোলাও, পাঁচ রকম ভাজা, চাটনি, তরকারি এবং আঁশযুক্ত মাছ, পায়েস এবং বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়।

তবে আগের মতো নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে হোম সহ সমস্ত কিছু নিয়ম মেনে এই পূজা সম্পন্ন করা হলেও ছাগল বলি দেওয়া হতো আগে, এখন যা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

হুগলির সিদ্ধেশ্বরী মাতার পূজা:

হুগলির হরিপালের শ্রীপতিপুর গ্রামে গত ৭৩ বছর ধরে সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতার মন্দিরে (Siddheswari Kali Temple) অধিকারী বাড়ির ইতিহাস আঁকড়ে ধরে শ্যামা মায়ের আরাধনা করা হয়। এই গ্রামের অধিকারী পরিবারে দীর্ঘদিন ধরে পূজিতা হয়ে আসছেন মা সবুজ কালী, সিদ্ধেশ্বরী পূজা হিসাবে যা অনেকেই জানেন।

এখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং বিরল ঘটনা হলো এখানে মা কালীর গায়ের রং কচি কলাপাতার মতো সবুজ। এই কালী মা বেশ জাগ্রত বলেই অটুট বিশ্বাস এখানকার স্থানীয় মানুষজনদের। এই কালী মাকে ঘিরে রয়েছে অনেক পুরানে কাহিনী।

সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পূজায়, সবুজ কালীর পূজার অদ্ভুত কিছু নিয়ম:

এই পূজায় অদ্ভুত কিছু নিয়ম পালন করতে দেখা যায়। গুপ্ত তন্ত্র মতে পূজা করা হয় এখানে। মা কালী এখানে পঞ্চমুন্ডির আসনের উপরে পূজিত হন। এখানে বলি প্রথার কোন প্রচলন নেই। দেবী এই বাড়িতে পরম বৈষ্ণব, দেবীর কপালে তিলক কাটা হয়, যদিও এখানে মায়ের ভোগ কিন্তু আমিষ বিশেষত ইলিশ মাছের ভোগ মায়ের খুব প্রিয় বলে এই পূজায় ইলিশ মাছের ভোগ নিবেদন করা হয়। সাধারণত মা কালীর প্রিয় রং লাল বলে জবা ফুল দিয়ে পূজা করা হলেও এই সবুজ মা কালীর পূজার ফুল কিন্তু জুঁই ফুল।

এই পূজায় শ্যামা মাকে বাঁশি বাজিয়ে শোনানো হয় বলে জানা যায়। মঙ্গল আরতির মাধ্যমে পূজা সম্পন্ন করা হয়, প্রতিটি অমাবস্যাতেই বহু ভক্তগণ অনেক দূর থেকে মায়ের কাছে পূজা দিতে আসেন এবং মায়ের দর্শন নিতে আসেন। এছাড়া মায়ের কাছে প্রার্থনা করে অনেকেই অনেক সুফল পেয়েছেন বলে গ্রামবাসীদের বিশ্বাস। আর এই মায়ের পূজা সকলের মনের মনস্কামনা পূর্ণ করবে সেটাও বিশ্বাস করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!