Worldwide Bengali Panjika

শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা – Jhulan Yatra Puja


ঝুলন যাত্রা (Jhulan Yatra): হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন পূজা পার্বণের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের পূজা এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে, তার সাথে সাথে শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন উৎসব অথবা ঝুলন যাত্রা শুভ দিনের মাহাত্ম্য বহন করে নিয়ে আসে।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

যে সমস্ত ভক্তগণ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা করে থাকেন তাঁদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব গুলির মধ্যে একটি উৎসব হল শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন উৎসব। এই উৎসবটি বৈষ্ণবদের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ঝুলন যাত্রা হলো ভারতে বর্ষাকালে রাধাকৃষ্ণের প্রেমের সাথে মিলিত আনন্দ উদযাপন করার একটি খুবই শুভ দিন এবং আনন্দের দিন।

ভারতের কোন কোন জায়গায় ঝুলন যাত্রা পালিত হয়?

ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মানুষ বসবাস করেন, তবে যে সমস্ত জায়গায় শ্রীকৃষ্ণের পূজা বিশেষভাবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে সেই সমস্ত জায়গা গুলিতে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

ভারতের সমস্ত জায়গার মধ্যে মথুরা, পুরি, বৃন্দাবন, মায়াপুর এই সমস্ত জায়গাতে শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা উদযাপনের জন্য সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। ঝুলন যাত্রা শ্রাবণ মাসে পালিত হয়, শুক্ল পক্ষের একাদশী থেকে পূর্ণিমার দিন পর্যন্ত। যাকে শ্রাবণ পূর্ণিমা বলা হয় যা রাখি বন্ধন উৎসব নামেও পরিচিত। সমস্ত বিশ্বজুড়ে এই উৎসবের গুরুত্ব রয়েছে।

সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার ভক্তগণ, কৃষ্ণের ভক্তগণ পবিত্র শহর মথুরা, বৃন্দাবন, উড়িষ্যার পুরী এবং পশ্চিমবঙ্গের মায়াপুরে গিয়ে ভিড় জমান এই উৎসবে অংশগ্রহণ করার জন্য। রাধা এবং কৃষ্ণের মূর্তি গুলিকে বেদী থেকে সরানো হয় এবং ভারী অলংকার দেওয়া দোলনাতে স্থাপন করা হয়, সকল ভক্তরা প্রভুর প্রেমে মগ্ন হয়ে পড়েন।

শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রার শুভ ফল:

শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রায় যে কাজগুলি খুবই শুভ ফলদায়ক, চলুন জানা যাক:

  • শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা পাঁচ দিন ধরে চলে তাই এই পাঁচ দিনের মধ্যে সম্ভব হলে পাঁচ দিনই আর যদি সম্ভব না হয় তাহলে যে কোন একদিন রাধা কৃষ্ণের যুগল মূর্তিকে দোলায় দিয়ে দোল দিতে পারেন, তাহলে খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। তবে এই দোলনা দোলাতে হবে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে।
  • এই পাঁচ দিনের মধ্যে যেকোনো একদিন গীতা পাঠ করা অথবা যদি পাঠ করতে না পারেন তাহলে শ্রবণ করা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়।
  • ঝুলন যাত্রার সময় রাধা কৃষ্ণের যুগল মূর্তিতে হলুদ রঙের ফল, ফুল, মিষ্টি এছাড়া হলুদ বস্ত্র নিবেদন করতে হবে। তবে এই পূজা করার সময় নিজেও হলুদ বস্ত্র পরিধান করতে পারলে খুবই শুভ বলে মনে করা হয়।
  • তবে এই উৎসবের পাঁচ দিন চেষ্টা করুন একটু সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান করে নিত্য পূজার আয়োজন করতে।
  • এই দিনগুলোতে ঝুলন যাত্রা দোলনার সামনে এবং তুলসী মঞ্চে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখুন।
  • আমরা সাধারণত পুজোর শেষে যখন শাঁখ (শঙ্খ) বাজাই তখন তিনবার বাজাই কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রার এই পাঁচ দিন পাঁচবার করে শাঁখ বাজানোর নিয়ম রয়েছে, তার পর শাঁখ টাকে একটা কাপড়ে জড়িয়ে উঁচু জায়গায় রাখতে হবে, তবে অবশ্যই এই কাজ করার সময় শুধুমাত্র ঝুলন যাত্রার দিনটি নির্বাচিত করতে হবে।
  • ঝুলনযাত্রা চলাকালীন যদি কোন ভিখারি বাড়িতে আসেন তাহলে কোন ভাবেই তাঁকে শুধু হাতে ফেরাবেন না এবং খারাপ ব্যবহার করবেন না। তবে সন্ধ্যা বেলা কোনভাবেই কিছু দান করা উচিত নয়।
  • শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা চলাকালীন সন্ধ্যাবেলা কোনভাবেই ঘরবাড়ি ঝাঁট দেবেন না।

শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন অথবা দোলনা সাজানোর পদ্ধতি:

রাধা কৃষ্ণের প্রেম উদযাপনের উৎসব হল ঝুলন উৎসব। এই সময় রাধা কৃষ্ণের যুগল মূর্তিকে বিশেষভাবে সাজানোর নিয়ম রয়েছে এবং অলংকার পরানোর নিয়ম রয়েছে। সেই সঙ্গে সাজানো হয় কৃষ্ণ মন্দির গুলিকেও। তবে গ্রামবাংলায় ঝুলনযাত্রা পালনের এক নিজস্ব নীতি রয়েছে, ঘরোয়া ভাবেই বিভিন্ন পুতুল, খেলনা দিয়ে সাজানো হয় ঝুলন।

যেহেতু এটি একটি প্রেমের উৎসব সেই কারণে শুধুমাত্র রাধা কৃষ্ণ নন, ঝুলন উৎসবের অঙ্গ হিসেবে জড়িয়ে রয়েছেন গোপিনীরাও। কৃষ্ণ প্রেমে মত্ত হয়ে তাঁরা সকলেই মদন মোহন কে ঘিরে নৃত্য করতে থাকেন। স্বয়ং কৃষ্ণ সেই তালে তালে পা মেলান, দেশের বিভিন্ন কৃষ্ণ মন্দিরে এই ধরনের মূর্তি দেখা যায় ঝুলন উৎসবের সময়।

শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা উৎসব পালন:

কৃষ্ণ মন্দির গুলিতে রাধাকৃষ্ণের যে মূর্তিতে প্রতিদিন পূজা করা হয় সেই মূর্তিকে এই বিশেষ শুভদিনে দোলনায় বসিয়ে রাখা হয়, ভক্তরা ধীরে ধীরে সেই দোলনার রশিতে টান দিতে থাকেন, আর মন্দির কৃষ্ণ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। বৈষ্ণব মতে এই ঝুলন আসলে শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম লীলা মাত্র। তাই শাস্ত্রে ঝুলন উৎসব পালনের বিশেষ কিছু গুণের কথা উল্লেখিত রয়েছে। তবে ঝুলন শুধুমাত্র একদিন পালিত হয় না, এই উৎসব পালিত হয় পাঁচ দিন ধরে।

পঞ্জিকা অনুসারে এই উৎসব একাদশী তিথি তে শুরু হয় এবং পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে শেষ হয়। এই সম্পূর্ণ সময়টা জুড়ে রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তিকে ঘিরে চলে ভক্তদের উন্মাদনা, কৃষ্ণ মন্দিরের মতো বাড়িতেও এই ঝুলন উৎসব পালন করা যেতেই পারে খুবই ভক্তি ও নিষ্ঠার সাথে। এর ফলে ভাগ্য বদলেরও সম্ভাবনা রয়েছে। গৃহস্থ পরিবারে শ্রীকৃষ্ণের এই বিশেষ উৎসব পালন করা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। আপনি চাইলে নিজের মনের মত করে সুন্দর একটি দোলনা সাজিয়ে নিজের কৃষ্ণ মন্দির অথবা বাড়ির মন্দিরে এই উৎসব পালন করতেই পারেন।

কৃষ্ণ ও রাধা দুজনকে আরাধনা করার বিশেষ সময় এটি, এই পাঁচ দিন বাড়ির রাধাকৃষ্ণ মূর্তিকেও ফুলমালা দিয়ে সাজানো যেতে পারে। সম্ভব হলে একটা দোলনা তৈরি করে অথবা কিনতেও পারেন সেখানে রাধা কৃষ্ণের মূর্তি রাখুন যদি মূর্তি না থাকে তাহলে রাধা কৃষ্ণের ছবিও ব্যবহার করা যেতে পারে।যে কোন ফুল দিয়ে কৃষ্ণের পূজা করা যেতে পারে তবে লাল ফুল ব্যবহার না করাই ভালো। এছাড়া মূর্তির পোশাকের ক্ষেত্রেও এই দুটি রং ব্যবহার করাই শুভ, হলুদ এবং সাদা, যা শ্রীকৃষ্ণের খুবই পছন্দের রং।

ঝুলন উৎসব চলাকালীন নিরামিষ আহারের নিয়ম রয়েছে। এই সময় বাড়িতে আমিষ খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। ভক্তি করে সকাল সকাল স্নান করে শ্রীকৃষ্ণ মূর্তি সাজিয়ে নিতে হবে তারপর নিজের মনের মতো করে সেই মূর্তির আরাধনা করা যেতে পারে।

শ্রীকৃষ্ণের ভোগ নিবেদন:

আমরা যে পূজাই করি না কেন সেই পূজাতে সেই ঈশ্বরের পছন্দের ভোগ নিবেদন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সে ক্ষেত্রে এখানে শ্রীকৃষ্ণের পূজার জন্য আপনি যে ভোগ অথবা নৈবেদ্য অর্পণ করবেন সেখানে কৃষ্ণের পছন্দের ভোগ, পায়েস, দুধের ক্ষীর ও মালপোয়া অর্পণ করতে পারেন। এই সঙ্গে এই সময় তুলসী মঞ্চ সাজানো যেতে পারে।

প্রতিদিন নিয়ম করে তুলসী মঞ্চে প্রদীপ জালানো যেতে পারে। তবে এই সময় কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, বাড়িতে ঝুলন সাজালে সন্ধ্যেবেলা কখনোই ঝাঁট দেওয়া উচিত না। এছাড়া এই সময় বাড়িতে কেউ সাহায্য চাইতে এলে তাঁকে কখনোই ফেরাতে নেই।

এইভাবে যদি সমস্ত নিয়ম এবং বিধি নিষেধ মেনে শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা বাড়িতেই পালন করে থাকেন তাহলে কৃষ্ণের আশীর্বাদ আপনার ভবিষ্যৎ জীবনকে আরো বেশি সুন্দর ও সুসজ্জিত করে তুলতে পারে। কেটে যাবে জীবনের সমস্ত সমস্যা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!