Worldwide Bengali Panjika

সৌভাগ্য চতুর্থী ব্রত (মান চতুর্থী ব্রত) – Saubhagya Chaturthi Vrat


ADVERTISEMENT

সৌভাগ্য চতুর্থী ব্রত – Saubhagya Chaturthi Vrat (মান চতুর্থী ব্রত – Maan Chaturthi Vrat), ব্রত কথা ও পূজা করার পদ্ধতি: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে যে কোন ব্রত উপবাস খুবই শুভ এবং শুভ ফলদায়ক। তার জন্য কষ্ট হলেও অনেকেই এই উপবাস ও ব্রত পালন করার চেষ্টা করেন। এমন সব শুভ ফলদায়ক ব্রত গুলির মধ্যে একটি অন্যতম ব্রত হল সৌভাগ্য চতুর্থী ব্রত / মান চতুর্থী ব্রত।

শরৎকালের দেবীপক্ষে শুভ চতুর্থীর দিন এই ব্রত পালন করতে হয় এবং উপবাস রেখে এই ব্রত পালন করেন যাঁরা তাঁরা খুবই নিষ্ঠার সাথে এই ব্রত নিয়ে থাকেন। এরপর পরপর চার বছর পালন করে এই ব্রত উদযাপন করতে হয়।

সৌভাগ্য চতুর্থীর ব্রত কথা ও পূজা পদ্ধতি:

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় একসময় এক রাজা ছিলেন এবং তাঁর ছিল দুজন রানী। সুয়োরানী এবং দুয়োরানী (Suorani and Duorani), দুয়োরানী কে ভালবাসতেন না রাজা। এমনকি তাঁর মুখ পর্যন্ত দেখতে চাইতেন না। মনের দুঃখে দুয়োরানি রাজবাড়ি ছেড়ে বাগানের এক গোয়াল ঘরে গিয়ে ঠাঁই নিলেন। সেখানেই রইলেন তিনি।

মনের দুঃখ মনে চেপে রেখে এদিকে দুয়োরানী চলে যাওয়ার পর সুয়োরানীর তো আর আনন্দ ধরে না। সুয়োরানী থাকতেন একেবারে উৎসবের মতো মেতে তবুও কিন্তু পারেন না সহ্য করতে রাজ্যের মাঝে দুয়োরানীর অস্তিত্ব। তাঁর আশেপাশের সখীদের সঙ্গে পরামর্শ করে স্থির করলেন যে রাজা কে যে কোন ভাবে বুঝিয়ে দুয়োরানিকে বনবাসে পাঠানো হোক। প্রজাদের কিন্তু ছোট বড় সবাই ভক্তি করত বড়রানী দুয়োরানীকে। ছোট রানি ছিল তাদের দু চোখের বিষ কেননা খুবই হিংসুটে ছিল।

এদিকে বড় রানী কোন রকমে সিদ্ধ ভাত খেয়ে এবং গাছের ফলমূল খেয়ে বেঁচে থাকেন আর ঈশ্বরের কাছে নিজের কষ্টের কথা জানাতে থাকে। এর মধ্যে একজন দাসী এসে বড়রানী দুয়োরানীকে ছোট রানীর এই চক্রান্তের কথা জানিয়ে দিয়ে যায়। সেই শুনে খুবই দুঃখ পায় এবং মনের দুঃখে কাঁদতে লাগলেন।

দিন যায় কাঁদতে কাঁদতে শরীর খারাপ হয়ে পড়ে। এমন সময় তিনি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন, শেষ রাতে স্বপ্ন দেখেন যে অপরূপ সুন্দরী এক মেয়ে এসে তাঁকে বলছেন, “কাঁদছিস কেন ? দুঃখ কিসের তোর ? এবার সব দুঃখের হবে শেষ। আজ যে চতুর্থী তিথি, রাত পোহালে চতুর্থীর পারন, করিস কিন্তু।”

সেই অপরূপ সুন্দরী নারীর কথায় ছিল স্নেহ মাখা, বড়রানিকে এভাবে আশ্বাস দিয়ে যেতে লাগলেন, এমন সময় বড় রানি এই ব্রত কিভাবে পালন করবেন সেটা জানতে চাইলেন। সেই অপরূপ সুন্দরী নারীটি বললেন, “তোর গোয়াল ঘরের পিছনে ছাই গাদা থেকে দুখানা মানকচু গাছের পাতায় এনে ধুয়ে তার একখানায় সব রকমের গয়নার ছবি, পিটুলি গোলা দিয়ে এঁকে তাতে আতপ চালের নৈবেদ্য সাজিয়ে দিবি।

আর অন্য একটি মান গাছের পাতায় ঘি দিয়ে ওইরকম গয়নার ছবি এঁকে তাতে চিনির নৈবেদ্য সাজিয়ে এক মনে দূর্গা মাকে পূজা করতে হবে। এরপর আতপ চালের ভাত রান্না করে ঘি দিয়ে আঁকা পাতা খানায় ঢেলে সেই ভাত মা দুর্গা কে নিবেদন করে প্রসাদ গ্রহণ করবি। সেই এঁটো পাতা জলে ভাসিয়ে দিবি, এতেই ফিরবে তোর সৌভাগ্য। মা দুর্গার আশীর্বাদ এতেই হবে তোর সমস্ত দুঃখের অবসান এবং সৌভাগ্যের উদয়”।

এমন স্বপ্ন দেখার পরেই খুব ভোরে রানীর ঘুম ভেঙে যায়। স্বপ্নের নির্দেশ মতোই মান কচু গাছের পাতায় ভোগ নিবেদন করে প্রসাদ পেয়ে পাতা ভাসিয়ে দিয়ে আসেন। এমনিভাবেই দেবীপক্ষের শুভ চতুর্থীর এই ব্রত পালন করেন রানী দুয়ো রানী তিন বছর ধরে। দুঃখের কিন্তু কোন অবসান হয় না। নারী তবুও আশা ছাড়েন না, আরো একনিষ্ঠ মনে মুক্তির সাথে এই ব্রত পালন করতে থাকেন এবং মা দুর্গাকে ডাকতে থাকেন। দিন যায়, বছর যায়, রাজ্যে শুরু হয় মহামারী, রাজার হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া এক এক করে মরতে থাকে।

শুরু হয় রাজ্যময় জুড়ে চুরি, ডাকাতি, লুটপাট। দাস দাসী, ছোট রানীর ব্যবহারে চলে যায় সমস্ত কাজ ছেড়ে দিয়ে। প্রজারা ঘোষণা করে দেয় বিদ্রোহ। রাজবাড়ীতে দেখা যায় অরাজক। রাজাকে মন্ত্রীর সঙ্গে যেতে হয় প্রজাদের কাছে। তারা সবাই বলে বড় রানীর কথা, তারা বলে বড় রানি ছিলেন রাজ্যের লক্ষ্মী, তারই অবর্তমানে নাকি এই সমস্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের এই দশা হয়েছে, রাজা ও সেই কথা ভেবে দেখেন।

ছোট রানীর ব্যাপারে রাজাকে প্রজারা সবকিছু জানিয়ে দেয়। তারা আবেদন করে বড় রানীকে ফিরিয়ে আনতে। এমন সময় ভাবতে ভাবতে রাজা ফিরে আসেন রাজ্যে, আবার আসে ঘুরে ফিরে সেই শরৎকাল। কিন্তু রাজ্যের আর সেই আগের অবস্থা ফিরে আসে না, বড় রানীর দুয়োরানী এবারও করলেন সেই দুর্গাপূজার এই ব্রত। চতুর্থী তিথিতে ভোগ দিলেন, ভাসিয়ে ঘাট থেকে উঠে আসতেই দেখতে পান রাজা তাঁর পথ আগলে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। রানী রাজাকে প্রণাম করেন, রাজা আদর করে তাঁর হাত ধরে নিয়ে যান রাজপুরীতে।

বড় রানী ফিরে আসাতে রাজ্যে সবাই মিলে আনন্দ করে ছুটে আসে, দাস দাসী থেকে শুরু করে পাত্র-মিত্র, পরিজন সকল প্রজারা ভীষণ খুশি। আনন্দের ঢেউ বয়ে যায় যেন, এক নতুন উৎসব লেগেছে, মহামারিও চলে গেল, দেশে শান্তি ফিরে এলো। বিদ্রোহ ভালবাসায় পরিণত হলো, বড় রানীর জয়জয়কার পড়ে গেল চারিদিকে। এদিকে ছোট রানীর কান্নাকাটি, আবেদন নিবেদন করেও রাজা মোটেই কোনো রকম ভাবেই ছোট রাণীকে আর সহ্য করতে পারছেন না, ছোট রানীকে বনবাসে যেতে হল। আবার ঘুরে এলো শরৎকাল। বড় রানী ঘটা করে মা দুর্গার পূজা করলেন, আর প্রচার করে দিলেন দেশে দেশে সৌভাগ্য চতুর্থী ব্রত করার মাহাত্ম্য কথা। দেখতে দেখতে সব দেশেই এই ব্রত প্রচার হতে থাকলো। ভক্তি মনে সকলে সৌভাগ্য চতুর্থী ব্রত করতে লাগলেন এবং নিজেদের সমস্ত দুঃখের কথা দেবী দুর্গাকে জানিয়ে তাঁদের জীবনকে আরো বেশি উন্নত করতে লাগলেন।

সৌভাগ্য চতুর্থীর এই ব্রতকথা শোনার পরে অনেকেই এই ব্রতকে “মান চতুর্থী ব্রত” (Maan Chaturthi Vrat) বলে থাকেন। কেননা দেবী মা দুর্গাকে মান কচু পাতায় ভোগ নিবেদন করা হয়, সেই কারণে এই ব্রতর আরেক নাম “মান চতুর্থী ব্রত”। আপনিও যদি সৌভাগ্য ফিরে পেতে চান তাহলে এভাবেই শরৎকালে দুর্গাপূজার এই শুভ চতুর্থীতে অর্থাৎ সৌভাগ্য চতুর্থী বা মান চতুর্থীতে পূজা করতে পারেন, ব্রত রেখে উপবাস পালন করে। এই ব্রত কথার মধ্যেই পূজার পদ্ধতি দেওয়া রয়েছে, আপনি যদি এই পূজা করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে পরপর কয় বছর এ পূজা করতে হবে তার উল্লেখ্যও রয়েছে। মা দুর্গা সকলের মঙ্গল করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!