Worldwide Bengali Panjika

সিদ্ধিবিনায়ক চতুর্থী ব্রত (গণেশ চতুর্থী ব্রত) – Ganesh Chaturthi


সিদ্ধিবিনায়ক চতুর্থী ব্রত (Siddhivinayak Chaturthi Vrat) বা গণেশ চতুর্থী ব্রত (Ganesh Chaturthi Vrat) পালনের নিয়ম: হিন্দু ধর্মে গণেশ হলেন সিদ্ধিদাতা, তিনি অনেকের কাছে সিদ্ধি বিনায়ক হিসেবেই পরিচিত। তিনি সকলের মঙ্গল কামনা করেন এবং সংসারের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বজায় রাখার পাশাপাশি সম্পদ বৃদ্ধি করেন।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

তবে এই সিদ্ধি বিনায়ক অর্থাৎ গণেশের পূজা কিন্তু শুধু একাই করা হয় না তার সাথে সাথে লক্ষীর ও উপাসনা করা হয়। ভগবান গনেশ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রিয় ঈশ্বর, ভক্তরা এই শুভদিনে উপবাস পালন করেন এবং বিভিন্ন বাধা বিপদ থেকে মুক্ত হতে জীবনের জন্য কোন কিছু শুভ পাওয়ার আশায় এই পূজা করে থাকেন। কারণ গণেশ কে ‘বাধাদূরীকরণকারী’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সিদ্ধিবিনায়ক ব্রত:

গণেশ চতুর্থী (Ganesh Chaturthi) এবং সিদ্ধবিনায়ক চতুর্থীর এই দিনে গণেশের পূজা (Ganesh Puja) একেবারে সকলের জীবনে আমুল পরিবর্তন ঘটাতে পারে। সিদ্ধি বিনা নামে জনপ্রিয় তিনি, এই দিনে ভগবান গণেশের ভক্তরা সারাদিন ব্যাপী ব্রত পালন করে থাকেন এবং গণেশ পূজা করে থাকেন এবং দেবতার পূজা করার পরেই ব্রত শেষ করে থাকেন ভক্তরা।

গণেশ চতুর্থী ব্রত পালন করার নিয়ম:

  • ব্রহ্ম মুহূর্ত অর্থাৎ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে, তারপর স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পরে সংকল্প করুন এই পূজার।
  • এরপর ধ্যান করুন এবং উদয় হওয়া সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করুন।
  • ব্রত পালন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই নিরামিষ ভোজন গ্রহণ করতে হবে, যেমন ধরুন পেয়াজ অথবা রসুন বা মাংস যুক্ত কোন খাবার খাওয়া যাবে না।
  • পূজা করুন এবং ভগবানকে মোদক ও মিষ্টি নিবেদন করুন, কেননা গণেশ মোদক এবং মিষ্টি খেতে খুবই পছন্দ করেন।
  • এই পূজার ব্রতকথা পাঠ করুন অথবা শ্রবণ করুন এবং সাথে আরতি করতে ভুলবেন না।
  • আরতি করার পরে এবং সূর্যাস্তের পরেই আপনার উপবাস থাকলে উপবাস ভঙ্গ করতে পারেন।

গণেশ পূজার বিশেষ কিছু নিয়ম:

  • গণেশ চতুর্থীর দিন অথবা সিদ্ধিবিনায়ক চতুর্থীর দিন শুধুমাত্র শুভ সময়ে সিদ্ধি বিনায়কের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
  • এর মাধ্যমে একজন বুদ্ধি সিদ্ধি লাভ করতে পারেন, বিকেল হল পূজার উপযুক্ত সময় একবার মূর্তি স্থাপন হয়ে গেলে এখানে ওখানে প্রতিমা কোনভাবে সরিয়ে নিয়ে যাবেন না।
  • সঠিক দিক নির্বাচন করুন, শুধুমাত্র পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব কোণে গণপতি অর্থাৎ গণেশের মূর্তি স্থাপন করুন এতে গণপতির আশীর্বাদ দশ দিন বাড়িতে থাকবে।
  • যদি ঘরে মূর্তি স্থাপন করতে চান সেক্ষেত্রে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা তাঁকে পূজা অর্পণ করতে হবে এবং দশ দিন ধরে আরতী করতে হবে। প্রতিমার ঘর যেন কোনোভাবেই অন্ধকার না হয়, ঘর খালি রাখবেন না অবশ্যই ঘি এর প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখবেন।

গণেশের পূজার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ:

গণেশ কে সিঁদুর, দুর্বাঘাস ও মোদক নিবেদন করতে হয়। তবে গণেশ পূজায় কেতকি ফুল ও তুলসী পাতার ব্যবহার করবেন না। পূজায় বাসি অথবা শুকনো ফুল রাখবেন না। পূজার পোশাক হিসেবে গণেশের পুত্র গৌরীর প্রিয় রং হলো লাল অথবা হলুদ তাই এই দুটি রঙের পোশাক পরেই পূজা করতে পারেন।

ভুল করেও কালো রঙের পোশাক পরবেন না। যদি আপনি এটি করেন তবে ১০ দিনের পূজা আপনার বৃথা যাবে এবং আপনি যে পূজা করছেন তার কোন শুভ ফল পাবেন না।

গণেশ পূজায় বিশেষভাবে নিষিদ্ধ:

  • গণেশ উৎসবের সময় মাংস এবং কোনরকম মদ্যপান করা যাবে না।
  • তামসিক খাবার থেকেও দূরে থাকতে হবে।
  • গণেশ চতুর্থীর উপবাস যদি পালন করে থাকেন, তাহলে তাঁদেরকে ব্রহ্মচর্য পালন করতে হবে এবং দেহের সঙ্গে সঙ্গে মনের পবিত্রতাও বজায় রাখতে হবে।

সিদ্ধিবিনায়ক পূজার পদ্ধতি:

গণেশ চতুর্থীর দিন তাঁর আরাধনা করতে বিশেষ কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। তবে এই শুভদিনে খুব সকালে স্নান করে গণেশের মূর্তিতে সিঁদুর অর্পণ করে ষোড়শ উপাচার পদ্ধতিতে পূজা করে দক্ষিণা অর্পণ করে ২১ টি লাড্ডু অর্পণ করতে হয়।

এই ২১ টি লাড্ডুর মধ্যে পাঁচটি লাড্ডু গণেশের মূর্তির কাছে রাখা হয় এবং বাকিগুলো ব্রাহ্মণদের দান করে দেওয়া হয়। গণেশের মূর্তি সেরা সময়ে নদী অথবা পুকুরে বিসর্জন করা হয়। এই দিনে গণেশের পূজা করলে জ্ঞান ও সমৃদ্ধি আসে এবং সমস্ত বাধা বিপদ দূরে সরে যায়। আপনিও যদি উপবাস রেখে এই পূজার ব্রত পালন করে থাকেন এবং নিষ্ঠাভরে সকল নিয়ম মেনে পূজা করে থাকেন, তাহলে আপনার জীবনে সকল বাধা বিপদ কেটে গিয়ে সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বজায় থাকবে এবং আপনার সকল মনের আশা পূর্ণ করবেন সিদ্ধিবিনায়ক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!