Worldwide Bengali Panjika

কাত্যায়নী ব্রত পালন ও পূজা বিধি – Katyayani Vrata


কাত্যায়নী ব্রত (Katyayani Vrata): হিন্দু ধর্ম অনুসারে দেবী দুর্গাকে বিভিন্ন রূপে পূজা করা হয় এবং সবথেকে বড় উৎসব হল এই দুর্গা উৎসব। দেবী বিভিন্ন রূপে মর্ত্যবাসিকে আশীর্বাদ প্রদান করেন এবং বিভিন্ন রূপে তিনি পূজা পেয়ে থাকেন।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

শ্রীমৎ ভাগবতে (Shrimat Bhagwat) বলা হয়েছে যে, হেমন্তের সূচনায় অর্থাৎ কার্তিক মাস জুড়ে কাত্যায়নী ব্রত পালন করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে স্বামী হিসেবে পেয়েছিলেন গোপিনীরা। তবে এই কাত্যায়নী ব্রত পালন করার ক্ষেত্রে দেবী কাত্যায়নী আসলে কে? সে ক্ষেত্রে জানা যায় দেবী দুর্গার যে নয়টি রূপ আমরা জানি যাদের একত্রে “নবদূর্গা” বলা হয় তারই একটি রূপের নাম হলো কাত্যায়নী দেবী (Katyayani Devi)।

এই দেবীর চারটি হাত, দুই ডান হাতে তিনি যথাক্রমে বর ও অভয় দান করে থাকেন, আর অন্য দুই বাম হাতে থাকে খড়গ এবং পদ্মফুল। এই দেবীর গায়ের রং সোনার মতো উজ্জ্বল, সিংহ হল কাত্যায়নী দেবীর বাহন, তিনি বৈদিক দেবী।

এছাড়া হরিবংশ গ্রন্থে দেবীর রূপ বর্ণনায় ১৮ টি হাতের কথা বলা হয়েছে, এইরূপে দেবীর একটি মূর্তি কে কাশি ধামের বীরেশ্বর শিব মন্দিরে বহু প্রাচীনকাল আগে থেকেই আজও পর্যন্ত পূজা করা হয়। তবে এ কথাটাও সত্য যে তিনি দশভূজা হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত এবং শাস্ত্রে নবরাত্রি উৎসবের ষষ্ঠ দিনে কাত্যায়নী দেবীর পূজার বিধান রয়েছে।

কাত্যায়নী ব্রত করে কৃষ্ণ লাভ:

চলুন তাহলে জানা যাক কিভাবে কাত্যায়নী ব্রত পালন করে গোপিনীরা শ্রীকৃষ্ণকে স্বামী হিসেবে পেয়েছিলেন?

অবিবাহিতা গোপিনীরা কাত্যায়নী দেবীর প্রতিমা নির্মাণ করে তাতে চন্দন মাখিয়ে, ফুলের মালা অর্পণ করে, ধুপ, প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং সব রকমের উপাচার সহকারে যেমন ধরুন ফুল, ফল, আম্রপল্লব ইত্যাদি দিয়ে সেই দেবীর পূজা করতেন।

পূজা করার পর কোন বর প্রার্থনা করাটাই ছিল এই পূজার প্রধান রীতি ও প্রথা। অবিবাহিতা বালিকারা গভীর আবেগের সঙ্গে কাত্যায়নী দেবীর কাছে প্রার্থনা করতেন যে, তিনি যেন এই আশীর্বাদ দেন যে, কৃষ্ণকে স্বামী হিসেবে পাওয়া যায়, এবং কৃষ্ণের সঙ্গে তাদের বিবাহ হয়।

তারা সম্পূর্ণ কার্তিক মাস, এক মাস ধরে দুর্গা দেবীর অর্থাৎ কাত্যায়নী দেবীর পূজা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণকে স্বামী রূপে লাভ করার জন্য। প্রতিদিন তারা প্রার্থনা করেছিলেন নন্দ মহারাজের পুত্র কৃষ্ণের সঙ্গে যেন তাদের বিবাহ হয় এবং কৃষ্ণের পত্নী হিসেবে নিজেদেরকে যেন দেখতে পারে।

পৌরাণিক কাহিনী:

স্নান করে শুদ্ধ মনে গোপিনীরা এই পূজা সম্পন্ন করতেন। প্রাচীনকালে নিয়ম অনুসারে যমুনায় কন্যাদের জন্য আলাদা একটি আড়াল যুক্ত ঘাট ছিল, স্নান করার ক্ষেত্রে সেখানে পুরুষরা যেতে পারতেন না। ঘাটের উপরে বস্ত্র খুলে রেখে তাই নির্দ্বিধায় গোপিনীরা যমুনার জলে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে স্নান করতেন।

কার্তিকের শেষ ব্রত সমাপন হয়েছে এমন সময় এই ঘাটে একদিন তারা নগ্ন হয়ে স্নান করতে নেমেছেন, তারা কৃষ্ণের অতল রূপের কথা বলছিলেন, তাকে ঘিরে আপন আপন কামনার কথা বলছিলেন, সেই সময় শ্রীকৃষ্ণ চুপি চুপি এসে তাদের সমস্ত বস্ত্র অথবা কাপড় চুরি করে ঘাটের কাছেই একটি গাছের উপরে উঠে বসলেন। এই দৃশ্য কোন জায়গায় আপনি কোন ছবিতে দেখে থাকবেন।

এদিকে গোপিনীরা জলে খেলা করতে ব্যস্ত, তারা খেয়ালই করলেন না যে তাদের বস্ত্র সেখানে নেই, শ্রীকৃষ্ণ চুরি করেছেন। কিন্তু এমন অবস্থায় বাড়ি ফেরাও তো সম্ভব নয়, এই পরিস্থিতিতে কৃষ্ণ আপন উপস্থিতির কথা জানায় এবং এটাও জানায় যে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় একে একে জল থেকে উঠে এসে গোপিনীরা কৃষ্ণের কাছ থেকে তাদের নিজস্ব বস্ত্র নিয়ে যেতে পারবে, তা না হলে কিন্তু কোন বস্ত্র পাওয়া যাবে না।

অনেক অনুনয় বিনয় করার পরেও, এমনকি নন্দ মহারাজকে নালিশ জানানোর ভয় দেখালেও কোন লাভ হয়নি। শেষমেষ তারা বাধ্য হলেন একে একে নগ্ন অবস্থায় শ্রীকৃষ্ণের কাছে এসে আপন আপন বস্ত্র নিয়ে যেতে।

শ্রী কৃষ্ণ বস্ত্র চুরি:

কাত্যায়নী ব্রত পালনের পর শ্রী কৃষ্ণ বস্ত্র চুরির মত ব্যবহার গোপিনীদের সাথে কেন করেছিলেন?

এখানে একটা প্রশ্ন থাকতেই পারে যে, গোপিনীদের নগ্ন অবস্থায় শ্রীকৃষ্ণের কাছে এসে বস্ত্র নেওয়ার কথা কেন বলেছেন শ্রীকৃষ্ণ ? স্বাভাবিক নিয়মে দেখতে গেলে দেখা যায়, কেবলমাত্র স্ত্রী বা কোনো নারী নগ্ন অবস্থায় শুধুমাত্র স্বামীর কাছেই যেতে পারে অন্য কারো কাছে নয়।

তাই এই লীলার মধ্যে দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের যে মনের ইচ্ছা, শ্রীকৃষ্ণকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার সেই স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের আচার পালন করে গোপিনীদের নিজের পত্নী হিসেবে বরণ করে তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন।

এ ক্ষেত্রে অনেকেই হয়তো এই বিষয়টাকে একটু অন্যভাবে নিলেও একমাত্র শ্রীকৃষ্ণ এই লীলা খেলাটা করেছেন গোপিনীদের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করতে এবং তাদের ব্রত পালনের শুভ ফল প্রদান করতে। আর এই ভাবেই কাত্যায়নী ব্রত পালন করার ফলে কৃষ্ণকে যে স্বামী হিসেবে গোপিনীরা পেয়েছেন, এটাই বোঝা যায়।

কাত্যায়নী দেবীকে খুশি করার উপায়:

কাত্যায়নী দেবী হলেন খুবই উগ্র স্বভাবের এবং অবিবাহিত মেয়েদেরকে কাঙ্ক্ষিত স্বামী খুঁজে পেতে সাহায্য করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। ভক্তদের প্রার্থনা করা উচিত এবং কাত্যায়নী মহামন্ত্র জপ করা উচিত। দেবীর সঙ্গে যুক্ত রং টি হল মেরুন, সেই রঙের পোশাক পরে পূজা-অর্চনা করলে মিলতে পারে শুভ ফল। ভক্তরা দেবীকে খুশি করার জন্য শৃঙ্গারের সামগ্রী এবং সিঁদুর নিবেদন করতে পারেন।

দেবী কাত্যায়নীর পূজা করার বিধি:

  • খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে নিজেকে পবিত্র করে নিতে হবে এবং পবিত্র বস্ত্র পরিধান করতে হবে।
  • একটি প্রদীপ জ্বালান এবং দেবীকে ফুলের মালা এবং সিঁদুর অর্পণ করুন।
  • মিষ্টি পান এর সাথে বাড়িতে তৈরি করা মিষ্টি এবং পাঁচটি ভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফল দেবীকে অর্পণ করুন।
  • হোম অথবা যজ্ঞ সম্পাদন করুন এবং দুর্গা সপ্তসতী পাঠ করতে পারেন।
  • যাঁরা দুর্গা সপ্তসতী সম্পূর্ণ বই পাঠ করতে পারবেন না, তাঁরা অবশ্যই কবচ পাঠ করতে পারেন অথবা শ্রবণ করতে পারেন।
  • নিজের মনের মত স্বামী পাওয়ার জন্য কাত্যায়নী মাতা-মন্ত্র ১০৮ বার জপ করতে পারেন।
  • সন্ধ্যার সময়ও পূজা করা এবং আরতি করা, জপ করার বিধান রয়েছে।
  • দেবীকে ভোগ, প্রসাদ নিবেদন করুন তারপর সাত্ত্বিক ভোজন করতে পারেন নিজেও।

কাত্যায়নী ব্রত পালন করার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য:

গোপিনীরা শ্রীকৃষ্ণ কে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য পালন করে থাকলেও মর্ত্যবাসি কিন্তু এখানে দেবী দুর্গাকে অর্থাৎ দেবী দুর্গার নব দুর্গার রূপের মধ্যে কাত্যায়নী দেবীর পূজা করে থাকেন শুধুমাত্র জগতের সুখ লাভ করার জন্য।

এক কথায় বলা যেতে পারে সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং মনের মতো স্বামী পাওয়ার জন্য, সুন্দর পরিবার পাওয়ার জন্য এই ব্রত পালন করা হয়ে থাকে। সমস্ত মনের ইচ্ছা পূরণ করতে একমাস ধরে চন্দন, ধুপ, প্রদীপ, ইত্যাদি দিয়ে কাত্যায়নী দেবীর পূজা করা হয়। এই সময় যাঁরা এই পূজার ব্রত পালন করবেন তাঁরা দুধ অথবা দুগ্ধজাত কোন খাবার গ্রহণ করেন না, সকালে স্নান করে ভিজে বালিতে খোদিত কাত্যায়নী দেবীর মূর্তি পূজা করেন অনেকেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!