Kamakhya Devi Puja Vidhi: চারিদিকে বর্ষা মুখর পরিবেশের মধ্যে আষাঢ় মাসের বিশেষ দিন অনুষ্ঠিত হয় কামাখ্যা দেবীর পূজা। তাছাড়া কামাখ্যা দেবীর পূজা অনেকের কাছেই বেশ রহস্যজনক মনে হয়। ভারতবর্ষের প্রতিটি কোনায় কোনায় এই মন্দিরের নাম ছড়িয়ে আছে যে মন্দিরটি হল কামাখ্যা মন্দির।
প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)
দেবী সতীর ৫১ পীঠের মধ্যে সতীর দেহের মাতৃযোনি এই স্থানে পতিত হয়েছিল। এখানে প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের মন্দির, অম্বুবাচী মেলা, নরবলি প্রভৃতি বিষয়গুলোর কারণে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত কামরূপ কামাখ্যা।
তবে এখানে উল্লেখযোগ্য যে, এই মন্দিরটি আরো বেশ কিছু বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে যেমন ধরুন অশরীরি আত্মা ও ভূতপ্রেত চালনা, জাদু-টোনা, কালা জাদু ও বশীকরণ তন্ত্র সাধনা ইত্যাদির আতুরঘর বলা যেতে পারে এই মন্দির। এছাড়া পৌরাণিক এই মন্দির কে ঘিরে যেমন অজস্র রহস্য, রোমাঞ্চ ও চমৎকার কাহিনী শুনতে পাওয়া যায় তেমনি এর বিপরীতের চিত্র দেখা যায় প্রায়শই।
এখানকার রীতি রেওয়াজের অপব্যাখ্যা বা নেতিবাচক কাহিনীও শোনা যায় বেশ। তবে এমন একটা ধারণা একসময় ছিল যে এই জায়গায় কেউ গেলে সে আর ফিরে আসে না। এখনো যাদুবিদ্যা সাধনার জন্য বেছে নেওয়া হয় কামাখ্যা মন্দির কেই।
১) কামাখ্যা দেবীর পূজা পর্ব:
পুরোহিতদের কথা অনুসারে মন্দিরে পুজোর পর্ব সম্পাদনা করা, প্রধান মন্দির এর বাইরে কুণ্ড থেকে মাথায় জলের ছিটে দিয়ে শুরু করা হয় এই পূজা পর্ব। এখানে পূজা দেওয়ার জন্য দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন পড়ে। অনেকেই বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে পূজা করেন। মনের সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে এখানে অনেকেই মানত করেন এবং মনস্কামনা পূর্ণ হলে ঘন্টাও বেঁধে রেখে যান তাঁরা।
(Kamakhya Temple) কামাখ্যা মন্দিরের চূড়ায় সপ্তরথ আকৃতির গঠনে পাওয়া যায়, মৌচাকের আদলে সাতটি ডিম্বাকৃতি গম্বুজের প্রতিটির উপর তিন খানা স্বর্ণ কলস বসানো রয়েছে। মন্দিরের বাইরের অংশে গণেশ ও অন্যান্য দেবদেবীর প্রতিকৃতি ও পুরাণ কাহিনীর নানা খন্ড চিত্র খোদাই করা প্যানেলের সারি দেখতে পাওয়া যায়।
Jagannath Rath Yatra Puja Vidhi: জগন্নাথ রথযাত্রা পূজা বিধি
কামাখ্যা দেবীর পূজার ফলাফল:
যে স্থানে দেবীর যোনি পতিত হয়েছিল সেই স্থান হচ্ছে তীর্থচূড়ামনি’, তীর্থচূড়ামনি এর অর্থ হল সব তীর্থের মধ্যে সেরা তীর্থস্থান। যেখানে সতীর যোনি মণ্ডল পতিত হয়েছিল সেই জায়গাটিকে বলা হয় ‘কুব্জিকাপীঠ’।
কথিত আছে যে যোনিরূপ যে প্রস্তরখন্ডে মা কামাখ্যা অবস্থান করছেন সেই শিলা স্পর্শ করলে মানুষ মুক্তি লাভ করে। কালিকাপুরাণে বলা হয়েছে মহামায়া সতীর যোনি অঙ্গ পতিত হওয়ার পর এই উচ্চ পর্বত মহামায়ার যোনি মন্ডলের ভার সহ্য করতে না পেরে কেঁপে উঠেছিল এবং ক্রমশ পাতালে প্রবেশ করতে শুরু করেছিল। তখন দেবতাদের জন্য এই পর্বত পাতালে প্রবেশ করা থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু মাতৃ যোনি পতিত হওয়ার ফলে পর্বতের রং নীল বর্ণ ধারণ করেছিল, তাই পর্বতের নাম হলো নীলকন্ঠ বা নীলচল পর্বত।
কামাখ্যা মন্দিরের একটি বিশেষ বিখ্যাত কারণ:
কামাখ্যা মন্দির টি আরও একটি বিশেষ কারণের জন্য জগৎ বিখ্যাত, আর এই বিশেষ কারণটি হল এখানে প্রতি বছর বর্ষাকালে অম্বুবাচী মেলার আয়োজন করা হয়। বর্ষাকালে কামাখ্যা মন্দিরের মূল বেদী হতে নিরন্তর জলের প্রবাহ বইতে থাকে, তিন দিনের জন্য এই জল দ্বারা লাল বর্ণ ধারণ করে। কথিত আছে এই লাল বর্ণ কামাখ্যা মায়ের ঋতুস্রাব।
এই তিন দিনের জন্য মন্দিরের মূল দরজা বন্ধ থাকে। তখন সকলের জন্যই মন্দিরে ঢোকা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। একবার এক পুরোহিত নিয়ম অমান্য করে মন্দিরে ঢুকলে সাথে সাথেই তাঁর দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায় বলে জানা যায়। ঋতুস্রাব অবস্থায় মাতা কামাখ্যা কারো সাথে দেখা করেন না। তবে মূল দরজার বাইরে অম্বুবাচী মেলার উৎসব ও অন্যান্য পূজা অর্চনা চলতে থাকে।
২) শ্রী শ্রী দেবীর অম্বুবাচী যাত্রা (Ambubachi Yatra):
শাস্ত্র মতে অম্বুবাচী সময়ে বিশেষ কিছু কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এগুলি মেনে চলতে হবে সকলকে:
- যে কয়দিন অম্বুবাচী থাকবে সেই সময়ে ঠাকুর ঘরে দেবীর সমস্ত ছবি অথবা মূর্তি লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। অম্বুবাচী শেষ হওয়ার পর দেবীর আসন পাল্টে দিতে হবে, তারপর স্নান সেরে, ঠাকুর স্নান করিয়ে আবার পুজো শুরু করতে পারেন।
- বাড়িতে তুলসী গাছ থাকলে তার গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করে রাখতে একেবারেই ভুলবেন না এই সময়।
- যেহেতু এই সময়টা দেব-দেবীদের পূজা বন্ধ থাকে সেক্ষেত্রে গুরু পূজা করা যেতে পারে।
- এছাড়াও কিছু কিছু কাজ অম্বুবাচী সময় করা উচিত নয়, এ সময় বৃক্ষরোপণ করা উচিত নয়, কৃষি কাজ করাও কিন্তু বর্জিত।
- এই সময়ে কোন শুভ কাজ করা যাবে না।
- এই সময় মন্ত্র উচ্চারণ না করে পূজা করা যেতে পারে, ধুপকাঠি অথবা প্রদীপও জ্বালাতে পারেন।