Worldwide Bengali Panjika

অপরাজিতা পূজা বিধি – Aparajita Puja


অপরাজিতা পূজা (Aparajita Puja): বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবথেকে বড় উৎসব হলো দুর্গাপূজা (Durga Puja) আর এই দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীতে অনুষ্ঠিত হয় আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মাহাত্ম্যপূর্ণ পূজা, যা অপরাজিতা পূজা নামে পরিচিত। প্রাচীন কাল থেকে এই পূজার গুরুত্ব অপরিসীম আর এই শুভদিনে অপরাজিতা (Aparajita) চারা রোপন করে এই পূজার অনুষ্ঠান শুরু করা হতো বলে জানা যায়। দেবী অপরাজিতা যিনি দেবী আদি শক্তিরই একটি অন্যরূপ।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

শ্রী রামচন্দ্রের সাথে দেবীর অকালবোধন এবং অপরাজিতার পূজা প্রথম প্রচলন করেছিলেন বলে জানা যায়। শত্রুকে দমন করতে এবং এই দেবীকে আরাধনা করে থাকেন ভক্তরা। আর শুভ শক্তিকে আগমন জানানোর জন্য এই দেবীকে বিসর্জনের দিন পূজা করা হয়।

দেবী দুর্গার বিসর্জনের ঠিক পরে শুরু হয় এই অপরাজিতা দেবীর পূজা (Aparajita Devi Puja) কিন্তু খুবই কম মানুষ হয়তো জানেন দেবী অপরাজিতা পূজার কথা। যাঁরা পুরোহিত রয়েছেন তাঁরা খুবই গোপনভাবে দুর্গাপূজা শেষ করে দেবী অপরাজিতার পূজা করে থাকেন। যেহেতু দুর্গা পূজার বিসর্জনের পরই হয় দেবী অপরাজিতার বোধন, সেই কারণে দুর্গা পূজার দশমীতে সাদা আর নীল রঙের অপরাজিতা প্রয়োজন পড়ে। নীল অপরাজিতা ফুলের মালা পরানো হয় দেবী দুর্গাকে।

তবে বারোয়ারি পূজোর ক্ষেত্রে নীল অপরাজিতার মালা জোগাড় করা উদ্যোক্তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে, তাই বাড়ির পূজার ক্ষেত্রে এই রীতি অক্ষরে অক্ষরে পালন হয়ে আসছে অনেক প্রাচীনকাল আগে থেকেই।

বিজয়া দশমীতে অপরাজিতা দেবীর পূজা:

দেবী অপরাজিতা হলেন দেবী দুর্গারই আরও একটি রূপ, মূলত সাদা অপরাজিতা গাছকেই দেবী অপরাজিতা রূপে কল্পনা করে তাঁকে পূজা করা হয়। এই বিজয়া দশমীতে (Vijaya Dashami) প্রাচীনকালে সেই জন্যই দশমীতে অপরাজিতা গাছের চারা রোপন করার প্রথা আজও প্রচলিত। আর তার সাথে সাথে ভক্তদের মধ্যে চলে মঙ্গল কামনা করার প্রার্থনা।

প্রাচীনকালে রাজাদের যুদ্ধে জয় করার জন্য এই পূজা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও আজ বর্তমানে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য এবং সমস্ত সমস্যার সমাধান ঘটাতে এই পূজাতে অনেকেই নিজের জেতার জন্যও প্রার্থনা করেন এবং সব কিছু যাতে মঙ্গলময় হয় সেই প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। এই পুজোর শেষে ভক্তদের হাতে অপরাজিতা গাছের ডাল বেঁধে দেওয়া হয়। এটাও কিন্তু একটা রীতি অথবা প্রথা বলা যেতে পারে।

শাস্ত্র অনুযায়ী অপরাজিতা পূজা:

কৌটিল্যর অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী কোন রাজা যদি দশমীর পরেই বিজয় যাত্রা শুরু করেন তাহলে তাঁকে আর পরাজিত হতে হয় না। সেই কারণে বিজয় লক্ষ্মী লাভের আশা রেখে প্রাচীনকালে রাজারা দশমীর পরের দিনই বিজয় যাত্রা করতেন যুদ্ধ জয়ের উদ্দেশ্যে। পন্ডিত রঘুনন্দনের তিথি তত্ত্ব গ্রন্থে রয়েছে অপরাজিতা পূজার উল্লেখ।

অপরাজিতা পূজা পালনের নিয়ম ও বিধি:

দশমীর পূজা শেষ হওয়ার পর অপরাজিতা গাছকে পূজা করা হয়। বাড়িতে যদি সাদা অপরাজিতার গাছ থেকে থাকে তাহলে খুবই শুভ এবং মঙ্গলময়। দেবীর উপর অপরাজিতা ফুল, বেলপাতা দিয়েই পূজা করা হয় সাধারণত। অনেক বাড়িতে ঘট স্থাপন করেও এই পূজা সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।

পূজা সম্পন্ন হয়ে গেলে সেই অপরাজিতার গাছের ডাল হাতে বেঁধে দেওয়া হয়, প্রার্থনা জানানো হয়, “অপরাজিতা তুমি সর্বদা আমার বিজয় বর্ধন করো, আমার মঙ্গল ও বিজয় লাভের জন্য আমি দক্ষিণ হাতে তোমাকে ধারণ করছি।

তুমি শত্রু নাশ করে নানা সমৃদ্ধির সাথে আমাকে বিজয় দান করো, রামচন্দ্র যেমন রাবণের উপরে বিজয় লাভ করেছিলেন আমরাও যেন সেই রূপ জয়লাভ করতে পারি জীবনের প্রতিটি সংকট মুহূর্তে”।

অপরাজিতা পূজার নিয়ম:

এছাড়াও ঘট বিসর্জনের পর একটি পদ্ম ফুল নিয়ে লাল শালুতে মুড়ে বাড়িতে রেখে দিতে পারেন। বিশ্বাস যে, এতে বাড়িতে বাড়ির মঙ্গল সাধন হয়, সমস্ত বাধা বিপদ কেটে যায়, সেই সঙ্গে এই দিন সারারাত ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলেও শুভ ফল লাভ করা যায় বলে জানা যায়।

অপরাজিতা পূজার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী:

  • অপরাজিতা পূজার সবচেয়ে শুভ এবং পবিত্র জায়গা হল আপনার বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিক।
  • আপনার মন্দিরের চারপাশে বা মন্দিরে পূজা করতে পারেন।
  • এছাড়া পূজা শুরু করার আগে সেই জায়গাটি পরিষ্কার করুন এবং নীল ফুল ও অক্ষত দিয়ে, চন্দন বাটা দিয়ে একটি অষ্ট দল চক্র তৈরি করুন।
  • শুভ মুহূর্তে পূজা করা অপরিহার্য।
  • দশেরার দিনে অপরাজিতা স্তোত্র পাঠ করতে পারেন।
  • তবে পূজার পর মায়েরা তাঁদের সন্তানের কব্জিতে অপরাজিতা লতা জড়িয়ে তাঁদের দীর্ঘায়ু কামনা করে থাকেন।
  • হিন্দু ধর্মে শমি গাছকে সবচেয়ে শুদ্ধতম গাছ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
  • এটি এলাকার চারপাশে এবং ভক্তের জীবনে ইতিবাচকতা আর আনন্দ ছড়িয়ে দেয় বলে বিশ্বাস করা হয়।
  • এছাড়া বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গার পূজা অপরাজিতা পূজা ছাড়া অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!