Worldwide Bengali Panjika

গোবৎস দ্বাদশী ব্রত – Govatsa Dwadashi Vrat


গোবৎস দ্বাদশী ব্রত (Govatsa Dwadashi Vrat): হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন ব্রত পালন করার পাশাপাশি এমন কিছু ব্রত ও উপবাস রয়েছে যেগুলি পালন করতে পারলে নিজেকে ধন্য বলে মনে হয়। তবে হিন্দু ধর্মের গরু খুবই বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গরুকে মা হিসেবে সম্বোধন করা হয় এবং দেবতাদের সাথে তাকেও কিন্তু পূজা করা হয়ে থাকে। এমন একটি ব্রত যা মা গাভীকে উৎসর্গ করা হয় এই উৎসবটি ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে পালিত হয়।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

কিছু জায়গায় একে বাছ বারসও বলা হয়। এই শুভদিনে গরুকে বাছুর সমেত পূজা করার পাশাপাশি গরু রক্ষার সংকল্প নেওয়া হয়। এই দিনে গরুকে বিশেষ ভাবে পূজা করা হয়ে থাকে। এই পূজা সম্পন্ন করার জন্য অনেকেই উপবাস রেখে ব্রত পালন করেন আর এই ব্রতকে গো বৎস দ্বাদশী ব্রত হিসাবে অনেকেই জানেন।

গোবৎস্য দ্বাদশীর ব্রতকথা:

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন প্রথমবার গরু বাছুর পালন করতে বনে গিয়েছিলেন সেই সময় সেই দিন মা যশোদা গোপালের বড় ভাইকে খুব কড়া করে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে বাছুর চড়াতে বেশি দূরে যেতে হবে না, তারা যেন কাছাকাছি গরু ও বাছুর চরাতে থাকে।

শুধু তাই নয় মা আরো বলেছিলেন যে কৃষ্ণকে একেবারে একা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় কারণ তিনি এখনো খুবই ছোট একটি বালক। বলরামও শ্রী কৃষ্ণের সম্পূর্ণ যত্ন নেন এবং মায়ের নির্দেশ মেনে সন্ধ্যার সময় গরু বাছুর নিয়ে ফিরে আসেন সেই থেকে গোপালোকগণ গোবৎসচরণ তিথিটিকে গোবৎস দ্বাদশী উৎসব হিসেবে পালন করেন বলে বিশ্বাস করা হয়।

গোবৎস্য দ্বাদশী ব্রতের গুরুত্ব:

এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে, এই শুভদিনে পূজা করলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শিশুদের সমস্ত বিপদ ঝামেলা থেকে রক্ষা করেন। সন্তানের মঙ্গল কামনায় এই দিনে উপবাস ও পূজা পালন করে থাকেন অনেক মায়েরা।

ভবিষ্য পুরাণ অনুসারে এই উপবাসের প্রভাবে ভক্ত সমস্ত আনন্দ উপভোগ করেন আর এই উৎসবের সূচনার পেছনে পৌরাণিক বিশ্বাস হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পর মা যশোদা এই শুভদিনে মা গরুর দর্শন ও পুজো করেছিলেন বাছুর সমেত।

গোবৎস দ্বাদশী ব্রত পালন ও পূজার নিয়ম:

  • এই শুভদিনে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে উপবাস রাখার এবং পুজো করার সংকল্প নিতে হবে।
  • এরপর দোহনকারী গাভীকে অর্থাৎ যে গাভী দুধ দেয় সেই গাভী তার বাছুরসহ স্নান করাতে হবে।
  • গাভী ও বাছুরকে স্নান করিয়ে উভয়কে নতুন কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • তারপর তাদের গলায় ফুলের মালা দিতে হবে।
  • গরু বাছুরের কপালে চন্দনের তিলক লাগাতে হবে।
  • মনে মনে কামধেনুকে স্মরণ করতে হবে।
  • একটি পাত্রে চাল, তিল, জল ও সুগন্ধি মিশিয়ে নিন এবং মন্ত্র পাঠের সাথে সাথে গরুর পা ধুয়ে দিতে হবে।
  • এরপর গরুর পায়ের মাটি দিয়ে আপনার কপালে তিলক লাগান।
  • এর পরে মা গরুর আরতি করুন এবং বাছ বরসের ব্রতকথা পাঠ করুন অথবা শ্রবণ করুন।
  • এরপর গরুকে পুজো করে গরুকে স্পর্শ করে ক্ষমাপ্রার্থনা করে তার চারিদিকে পরিক্রমা করতে হয়।
  • বাড়ির আশে পাশে গরু অথবা বাছুর না পাওয়া গেলে মাটির গরু বাছুর তৈরি করেও এই পূজার প্রথা সম্পন্ন করা যায় বলে জানা যায়।
  • এছাড়াও একটি প্রথা রয়েছে যে এই শুভ দিনে মহিলারা ছুরি দিয়ে কাটা খাবার রান্না করেন না বা খান না।
  • এই দিন গরুর দুধ থেকে তৈরি খাবার যেমন দই, মাখন, ঘি ইত্যাদি খাবেন না।
  • বাতাসা, মিষ্টি, ফুল এবং ধূপকাঠির গন্ধে চারিদিকে ভরিয়ে তোলা হয়।
  • এই দিনে ভক্তরা কৃষ্ণ মন্দিরে যান প্রদীপ জ্বালান এবং ভগবান কৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করেন।

পূজার পর গরু ও বছরকে দেওয়া হয় গমজাত পণ্য। যাঁরা গোবৎস দ্বাদশী ব্রত পালন করেন, তাঁরা দিনের বেলায় গম এবং দুধের দ্রব্য খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। গোবৎস দ্বাদশীকে নন্দিনী ব্রত হিসেবেও পালন করেন অনেকেই, হিন্দু ধর্মে ‘নন্দিনী’ হলো ঐশ্বরিক গাভী।

গোবৎস্য দ্বাদশী ব্রত পালন করার তাৎপর্য:

ভবিষ্যৎ পুরাণ অনুসারে এটি বলা হয়েছে যে, ভক্ত যখন দ্বাদশী তিথিতে উপবাস করেন তখন তিনি তাদের সমস্ত পাপ থেকেও মুক্ত করেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে গো বৎস দ্বাদশীর প্রথম উপবাসের সাথে পালন করেছিলেন রাজা উত্তানপদ (স্বয়ম্ভু মুনির পুত্র) এবং তার স্ত্রী সুনিতি। গোবৎস দ্বাদশীর দিনে তাঁদের প্রার্থনা ও উপবাসের কারণে তাঁরা পুত্র ধ্রুবকে আশীর্বাদ করেছিলেন। বিষ্ণুপুরাণের পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে স্বয়ম্ভু মুনির (ভগবান ব্রহ্মার পুত্র) তিন কন্যা এবং দুই পুত্র ছিল প্রিয়বর্ত ও উত্তানপদ। শৈশবে একবার ধ্রুব তাঁর পিতার ভালবাসা এবং মনোযোগ না পেয়ে হতাশ হয়েছিলেন।

তিনি ভগবান বিষ্ণুকে খুশি করার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন। ধ্রুব দিনভর উপবাস করে কঠোর তপস্যা করেন, ছোট ছেলের আন্তরিকতা ও ভক্তি দেখে ভগবান বিষ্ণু তাঁর সামনে হাজির হন। ভগবান বিষ্ণু তাঁর ধার্মিক ভক্তি দ্বারা সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে তিন জগতের উপরে সর্বোচ্চ আসনে বর দিয়েছিলেন। তাঁকে পুরস্কৃত করেছিলেন ধ্রুব নক্ষত্র, যিনি তারা এবং গ্রহের প্রধান নোঙ্গর এবং ধারক হবেন। যে ভক্তরা এই দিনে গরুর পূজা করেন তাঁরা শান্তি, সুখ, ও সুস্থ জীবন যাপন করেন এবং জীবনের সকল দুঃখ কষ্ট দূরে সরে যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!