Worldwide Bengali Panjika

খ্রীষ্টমাস ডে বা বড়দিন পালন – Christmas day


খ্রীষ্টমাস ডে (Christmas day) বা বড়দিন (Christmas): খ্রিস্ট ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় একটি উৎসব হল ‘খ্রীষ্টমাস ডে’ অথবা ‘বড়দিন’। তবে এই উৎসব শুধুমাত্র ক্রিস্টানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিন্দুরাও কিন্তু এই দিনটি খুবই আনন্দের সাথে উপভোগ করে থাকেন।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

কিন্তু বড়দিন সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন রয়েই যায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এই দিনটি খুবই সুন্দরভাবে উদযাপন করা হয়ে থাক। বড়দিন হল এমন একটি দিন যা খ্রিস্টানদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ একটি উৎসব

এটি যিশুখ্রিস্টের জন্মের একটি দিন উদযাপন করা হয় আর এই জন্য যীশু খ্রীষ্টের জন্মবার্ষিকী খ্রিস্টানরা বড়দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। ২৫ ডিসেম্বর যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন তাই এই দিনটি তাঁদের কাছে একটি ‘বড়দিন’ হিসেবে পরিচিত।

যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন পালন, বড়দিন পালন:

আমাদের দেশে প্রথম বড়দিন পালন করা সেটা অনেক বছর আগের কথা, আর জানা যায় যে ১৬৬৭ সালে প্রথম বড়দিন পালন করা হয়েছিল। তবে আমাদের দেশে খ্রিস্টানদের সংখ্যা শতাংশে খুবই কম, কিন্তু সংখ্যায় কম হলেও সকলেই কিন্তু মেতে ওঠেন যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন (Jesus Christ’s Birthday) উপলক্ষে।

এই উৎসবে হিন্দুরাও বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। বিভিন্ন আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে বড় বড় হোটেলগুলো এবং বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে বড় বড় শপিংমল গুলিতে বড়দিনের ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে সাজানো হয়। আলোকসজ্জায় সাজানো হয় চারিদিকে বড়দিনের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।

বিভিন্ন ধরনের কেক এবং সান্টা ক্লজের দেখা মেলে। তার সাথে রয়েছে তুষারপাত এর দৃশ্য এবং অনেক অনেক উপহার। এই সবকিছুর মাঝে একটা বাঙালিয়ানার ছাপও কিন্তু থেকে যায়, কেননা এই দেশে খ্রিস্টানরাও বাঙ্গালীদের জীবনযাত্রায় অনেকখানি প্রভাবিত।

কারণ অন্যান্য দেশের ক্রিসমাস ট্রি (Christmas tree) সাজানো হয় পাইন গাছ দিয়ে কিন্তু আমাদের দেশে ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ঝাউ গাছ, দেবদারু গাছ। আবার ক্রিসমাস এর কেকের পাশাপাশি থাকে বাঙালিয়ানা খাবার এবং তার সাথে রয়েছে ঠান্ডা আবহাওয়া, তাই পিঠে- পুলিরও জায়গা হয়ে যায় এই উৎসবে।

ইতালিতে বড়দিন পালন:

সবথেকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে বড়দিন পালন করা হয় বলতে গেলে এই ইতালিতে। এখানে বড়দিন উদযাপন শুরু করা হয় সেই ৮ ডিসেম্বর থেকে। সেদিনই ওখানকার সবাই ক্রিসমাস ট্রি তৈরি করা থেকে ঘর সাজানো এবং চারিদিকে বড়দিনের আমেজ এবং পরিবেশ তৈরি করতে আয়োজন শুরু হয়ে যায় সকল বাড়ির মানুষদের মধ্যে। তার সাথে সাথে যীশুর জন্মের সময়ের ছবি ফুটিয়ে তুলতে মা মেরি, বাবা জোসেফ, শিশু যীশু, একটি গাধা ও একটি হাঁসও তৈরি করা হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় যীশুর মূর্তিগুলি, গির্জা গুলিকে সুন্দরভাবে সাজানো হয়।

ইতালিতে বড়দিনের উৎসব শুরু হয় ৮ ডিসেম্বর এবং শেষ হয় ৬ জানুয়ারি। সেদিন তাঁরা সমস্ত প্রিসেপে আর ক্রিসমাস ট্রি তুলে ফেলেন এর মধ্যেও ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের পাশাপাশি ২৬ ডিসেম্বর সেন্ট স্টিফেন্স ডেও পালন করা হয়। তার পাশাপাশি সেইন্ট লুসিস ডে ১৩ ডিসেম্বর এই দিনটি পালিত হয়ে থাকে।

ইতালিতে বড়দিনে খুবই মজা হয় আর এখানে রাস্তা ঘাট থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গা আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে। এখানকার বাচ্চারা বড়দিন উপলক্ষে রাখাল সেজে পাইপ বাজিয়ে বাজিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বড়দিনের গান গেয়ে থাকে আর ছড়া বলে থাকে। তার বিনিময়ে সেই সব বাড়ি থেকে তাদেরকে টাকা দেওয়া হয়, কিছু উপহার দেওয়া হয় এবং খাবার দেওয়া হয়। আর সেই টাকা দিয়ে তারা বড়দিনের উপহার কেনে আর সেই উপহার নিজের জন্য হতে পারে এবং কাউকে দেওয়ার জন্যও হতে পারে।

বড়দিনের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রথা:

বড়দিন মানে কিন্তু গরম গরম কেকের গন্ধ ও ক্রিসমাস বেলের টুংটাং আওয়াজ, ক্রিসমাস এবং জানালায় মোজা ঝুলিয়ে স্যান্টা ক্লজের অপেক্ষা করা, রয়েছে নানা রকমের প্রথা ও রীতি।

১) জানালায় মোজা ঝোলানো হয়:

বড়দিনের আগের রাতে জানালায় মোজা ঝুলিয়ে রাখে ছোট ছোট বাচ্চারা, তারা বিশ্বাস করে এবং মনে করে যে এই মোজার ভিতর উপহার রেখে যাবেন স্যান্টা ক্লজ। এই বিষয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। চলুন সেই গল্পটা একটু জানা যাক:

✨ এক গরিব মানুষের তিনটি মেয়ে ছিল এই মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার মতো কোনরকম আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না সেই ব্যক্তির। তাকে সাহায্য করতে বড় দিনের রাতে সেন্ট নিকোলাস এক ব্যাগ সোনা তার বাড়ির চিমনির মধ্যে দিয়ে ফেলে দেন।

সেই ব্যাগ চিমনির মধ্যে দিয়ে গিয়ে পড়ে চিমনির কাছে ঝুলিয়ে রাখা মোজার মধ্যে। সেই থেকেই বড়দিনের রাতে মোজা ঝুলিয়ে রাখার প্রথা প্রচলিত, আর এটা বিশ্বাস করা হয় যে, ওই মোজার ভিতর খুশি আর আনন্দ ভরে দিয়ে যান স্যান্টা ক্লজ।

২) ক্রিসমাস বেল (ঘন্টা):

ক্রিসমাস ট্রি অনেক কিছু দিয়ে সাজানো হয় তার মধ্যে ক্রিসমাস বেল (Christmas Bell) অথবা ঘণ্টা হল অন্যতম একটি উপকরণ। ছোট ছোট ঘন্টা, ক্রিসমাস ট্রি থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এমনকি দরজার উপরেও এবং বড় বড় এই ঘন্টা অনেক জায়গায় সুন্দর করে সাজানো হয়। এই ঘন্টার মিষ্টি আওয়াজে ঘর থেকে নেগেটিভ এনার্জি দূর হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে।

৩) ক্রিসমাস ট্রি:

আমাদের দেশে পাইন গাছ দিয়ে সচরাচর ক্রিসমাস ট্রি (Christmas tree) টি বানানো হয় না ঠিকই, তবে ঝাউ গাছ দেবদারু গাছ এগুলোতে ক্রিসমাস টি বানানো হয় অথবা এখন আর্টিফিশিয়াল ক্রিসমাস ট্রিও কিনতে পাওয়া যায়। ক্রিসমাস ট্রি ছাড়া বড়দিন পালন করা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, ক্রিসমাস ট্রি সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে বলে মনে করা হয়।

ঘরে ক্রিসমাস ট্রি রাখলে তা নেগেটিভ এনার্জিকে সরিয়ে দেয় এবং পজেটিভ এনার্জিকে প্রভাবিত করে। এর পাশাপাশি ঘর কে সুন্দর দেখানোর সাথে সাথে বাচ্চাদের মনে আনন্দ উচ্ছাস জাগিয়ে তোলে।

৪) কেক:

কেক (Cake) একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার, তবে বড়দিনে এই কেকের গুরুত্ব অপরিসীম। সবাইকে কেক খাইয়ে আনন্দ উপভোগ করা হয়ে থাকে, মনের যাবতীয় দুঃখ, কষ্ট কেক এর মিষ্টি স্বাদে দূর হয়ে যায় বলে বিশ্বাস করা হয়।

সেই কারণে বিভিন্ন রকমের এবং বিভিন্ন আকারের ছোট বড় কেক যেমন বাজারে পাওয়া যায় তেমনি অনেকেই বাড়িতে বানিয়ে থাকেন। আর এই কেক পাড়া-প্রতিবেশী থেকে শুরু করে সকল আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে আদান প্রদান করা হয়, তার সাথে জানানো হয় বড়দিনের শুভেচ্ছা।

৫) মোমবাতি:

মোমবাতি (Candle) ঘরকে সুন্দর একটা মৃদু আলো দেওয়ার পাশাপাশি ঘর কে রাখে শান্ত এবং সুমধুর। বর্তমানে প্রায় ঘরেই মোমবাতি দিয়ে সাজানোর বিষয়টা লক্ষ্য করা যায়। কেননা এই আলোয় অনেকখানি পজিটিভ এনার্জি থাকে বলে বিশ্বাস করা হয়।

হিন্দুদের পূজা হোক অথবা খ্রিস্টানদের বড়দিন যে সব ক্ষেত্রে মোমবাতি ব্যবহার করা হলেও এই বড়দিনে মোমবাতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। হিন্দুদের পূজায় যেমন প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা রয়েছে, তেমনি বড়দিন পালন করতে চার্চে অথবা গীর্জায় মোমবাতি জ্বালানোর প্রথা রয়েছে।

মোমবাতির নরম আলোয় যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনের পাশাপাশি সব দুঃখ, যন্ত্রণা দূর হয়ে যাবে। তাইতো বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন রংবেরঙের মোমবাতি এই সময় লক্ষ্য করা যায় বাজারে। তাছাড়া প্রতিটি দোকান যেন সেজে ওঠে বড়দিনের খুশিতে।

✨ এই বিশেষ দিনে খুবই পবিত্রতার সাথে বাইবেল পাঠ করা হয় গীর্জায় গিয়ে। প্রার্থনা করা হয় ঈশ্বরের কাছে জানানো হয় জীবনের সকল দুঃখ কষ্ট এবং যা কিছু জীবনে পেয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে ঈশ্বরের কাছে ভক্তির সাথে প্রার্থনা করা হয়।

বাইবেল যাঁরা পাঠ করতে পারেন তাঁরা তো পাঠ করেনই এবং যাঁরা করতে পারেন না তাঁরা খুব মন দিয়ে এটি শোনেন। এরপর বাড়িতে এই দিনের আনন্দ বাড়ির সকল সদস্যদের সাথে ভাগ করে নেওয়া হয়। তবে এই দিনের আয়োজন শুরু হয়ে যায় এক মাস আগে থেকেই। আর অপেক্ষা করা হয় আবার পরের বছরের জন্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!