Worldwide Bengali Panjika

অলক্ষ্মী বিদায় পূজা বিধি – Alakshmi Puja


অলক্ষ্মী বিদায় পূজা (Alakshmi Puja): সংসারের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধির জন্য লক্ষ্মী পূজা (Lakshmi Puja) করা হয়ে থাকে সারা বছর ধরে। এমনকি সপ্তাহে যে বৃহস্পতিবার আসে সেই বৃহস্পতিবারেও লক্ষ্মীর আরাধনা করে থাকেন গৃহস্থ বাড়ির মা ও বোনেরা। তবে ঘর থেকে যদি অলক্ষ্মী বিদায় না করা যায় তাহলে লক্ষ্মীপূজা সম্পন্ন হয় না বলে জানা যায়। সেই কারণে দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজা কালী পূজার সময় পালিত হয়ে থাকে।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

এই সময়ে অলক্ষ্মী বিদায় করার পরেই তবে মা লক্ষ্মীকে আরাধনা করা হয়ে থাকে। এদিন মা লক্ষ্মীর সঙ্গে পূজিত হন গণেশও। উল্লেখ্য যে দূর্গা পূজার পরে পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরি লক্ষ্মী পূজা (Kojagari Lakshmi Puja) হয়, তবে দীপাবলিতে (Diwali) অর্থাৎ কালী পূজার (Kali Puja) সময় যে লক্ষ্মী পূজা হয় তা দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজা (Deepanvita Lakshmi Puja) নামে পরিচিত।

দেবী লক্ষ্মীর পূজা করবেন কিভাবে?

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই সময় অলক্ষ্মীর বিদায় করে দেবী লক্ষ্মীর পূজা করবেন কিভাবে?

এই দিনে বাঙালি গৃহস্থ ঘরে অলক্ষ্মী বিদায় (Alskshmi Biday) করে লক্ষ্মীকে বরণ করে নেওয়া হয়। অবাঙালি সমাজে দীপাবলিতে লক্ষ্মীপূজো বহুল প্রচলিত। লক্ষ্মী বিদায় হলো দীপাবলীর সন্ধ্যায় বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু রমণীদের দ্বারা একটি পূজা অনুষ্ঠান।

কিছু কিছু অঞ্চলে আশ্বিন মাসের সংক্রান্তিতে গাড়শী ব্রত পালন করে অলক্ষ্মী বিদায় ও লক্ষ্মী বরণ করা হয়। অলক্ষ্মীকে অমঙ্গল ও অশুভর প্রতীক বলে মনে করা হলেও এই অলক্ষ্মী হলেন অন্য ব্রতদের লক্ষ্মী ও শস্য দেবী।

অলক্ষ্মী বিদায় করার নিয়ম:

  • বাম হাতে গোবর নিয়ে দেবীর চোখের জায়গায় দুটি কড়ি, সর্বাঙ্গে ছেঁড়া চুল দিয়ে অলক্ষ্মীর মূর্তি নির্মাণ করা হয়।
  • কলা গাছের বাকলের উপরে এই মূর্তি রেখে সেখানে একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে ধুপ দিয়ে দেওয়া হয়।
  • অলক্ষী দেবীর বাহন হল গাধা।
  • এই মূর্তিকে ঘরের ভিতরে আনা হয় না, উঠনের এক কোণে অলক্ষ্মীর মূর্তি রেখে বাম হাতে ফুল নিয়ে পূজা করা হয়।
  • ধ্যান করে আবাহন করে অলক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
  • পূজা সম্পন্ন হয়ে গেলে বাড়ির রমণীরা কুলো পেটাতে পেটাতে মূর্তিটি রাস্তার তেমাথায় নিয়ে যান।
  • সেখানে পাটকাঠি জ্বালিয়ে সমবেত কণ্ঠে গাইতে থাকেন:- “অলক্ষী বাইরে যা, আর লক্ষ্মী ঘরে আয় বা লক্ষ্মী আয় অলক্ষী যা, এই কথাগুলি একসাথে বলে মূর্তিটি ফেলে দেওয়া হয়।
  • এরপর গৃহিণীরা গৃহে ফিরে দেবী লক্ষ্মীর পূজা করতে বসেন নিজেকে নতুন রূপে সাজিয়ে।

অলক্ষ্মী পূজা করার তাৎপর্য:

দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজায় (Deepanvita Lakshmi Puja) লক্ষ্মী ও অলক্ষ্মী দুজনেরই পূজা করা হয়। মঙ্গল ও অমঙ্গল দুটোই আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অমঙ্গল ও অশুভের প্রতিক হলেও অলক্ষ্মীকে ভগবতীর একটি রূপ বলে মনে করা হয়। আমাদের সবার মধ্যে সাদা এবং কালো দুটি দিকই রয়েছে। অর্থাৎ খারাপ এবং ভালো মিশিয়েই মানুষের জন্ম।

কখনো কখনো হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ, ঈর্ষা, এই সবকিছুতেই ভরে যায় আমাদের মন, আমাদের ভিতরে লক্ষ্মীর সঙ্গে ঢুকে যায় অলক্ষ্মীও, কিন্তু তাকেও তো দরকার, তা না হলে কালো না থাকলে যেমন সাদা কে চেনা যায় না, অন্ধকার না থাকলে যেমন দিনের আলোকে চেনা যায় না, তেমনি অলক্ষ্মী না থাকলে লক্ষ্মীকেও জানা যায় না।

সেই জন্যই কালী পূজার দিন লক্ষ্মী ও অলক্ষ্মী দুজনেরই পূজা করা হয়। ঠিক যেমন দুর্গাপূজায় (Durga Puja) দেবী দুর্গার সঙ্গে আসেন মহিষাসুরও। মনে করা হয় কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার সময় দেবীর লক্ষ্মীর সঙ্গে ও হাজির হন তাঁরই বোন অ লক্ষ্মী। তাই তাঁকে পূজা করেই বিদায় করা হয় আগে থেকেই। আর এমন কাজ করার জন্য কালীপুজোই হল সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি তিথি। যখন অশুভ নাশ করতে শুভ শক্তির উদয় হয়। বিদায় জানানোর পর তবেই মা লক্ষ্মীকে ঘরে আগমন জানানো হয় এবং তাঁকে নিষ্ঠা ভরে পূজা করা হয়।

দীপাবলিতে দীপান্বিতা লক্ষ্মী পূজার নিয়ম:

  • দীপাবলিতে লক্ষ্মীপূজো করার আগে সম্পূর্ণ ঘর বাড়ি ভালো করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে পবিত্র করে নিতে হবে।
  • প্রয়োজনে সারা বাড়িতে গঙ্গাজল ছিটিয়ে নিতে পারেন। কারণ অপরিচ্ছন্ন জায়গা কখনো দেবী লক্ষ্মী পছন্দ করেন না। নোংরা বাড়িতে প্রবেশ করেন না তিনি। তাই ঘরবাড়ি ভালো করে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে নিন তারপর গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিন।
  • এরপর প্রয়োজন পড়বে কাঠের ছোট চৌকি, তার উপরে পরিষ্কার লাল কাপড় বিছিয়ে দিন যদি সুতির কাপড় হয় খুবই ভালো, সেখানে সামান্য চাল অথবা ধান ছড়িয়ে দিন।
  • এরপর সেই চৌকিতে শস্য ছড়ানো জায়গায় রূপা ও অথবা তামার জল ভরা ঘট স্থাপন করুন।
  • ঘটে একটা সুপারি, গাঁদা ফুল, কয়েন এবং কয়েক দানা চাল ছড়িয়ে দিন।
  • ঘটের মুখের উপরে আমের পাতা রাখতে ভুলবেন না।
  • এরপর যে আসন পেতেছেন সেই আসনের মাঝখানে লক্ষ্মী ও ঘটের ডান দিকে গণেশের মূর্তি রাখুন।
  • একটা ছোট থালায় বেশি করে চাল রাখুন যা উঁচু চূড়ার মত দেখতে লাগে।
  • তারপর হলুদ গুঁড়ো দিয়ে পদ্ম ফুল আঁকতে হবে।
  • এরপর কয়েকটা কয়েন রাখুন এবার এই থালা মূর্তির সামনে স্থাপন করুন।
  • পূজা করার জায়গায় আপনার ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের পাস বই অথবা সম্পত্তি সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র বা যদি বাড়তি কোনো টাকা ঘরে থাকে সেই টাকাও রাখতে পারেন।
  • এরপর দেবীর লক্ষ্মী ও গণেশের ছবিতে তিলক লাগাতে হবে।
  • এবার একটা প্রদীপ জ্বালান, ঘটেও তিলক লাগাতে ভুলবেন না, অবশ্যই এখানে সিঁদুর ও চন্দনের ব্যবহার হবে।
  • এরপর মা লক্ষ্মীর পছন্দের ফুল অর্পণ করুন। মনে মনে সংকল্প নিয়ে এই ফুল দেবীর পায়ে অর্পণ করতে পারেন।
  • হাতে ফুল নিয়ে দীপাবলীর পূজোর মন্ত্র পড়ুন শেষে দেবী লক্ষ্মী ও গণেশের পায়ে সেই ফুল নিবেদন করুন।
  • দেবী লক্ষ্মীর মূর্তিকে জল দিয়ে স্নান করাতে হবে।
  • এরপর পঞ্চমৃত স্নান করিয়ে আবার জল দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে নিতে হবে।
  • পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মূর্তি পরিষ্কার করে আবার স্থাপন করতে হবে।
  • এরপর হলুদ, চালের তিলক, রোলি এগুলি লাগাতে হবে।
  • ফুলের মালা পরিয়ে দিন মা লক্ষ্মীকে।
  • এরপর ধূপকাঠি জ্বালান আর জ্বলন্ত ধুপকাঠি দিয়ে আরতি করুন।
  • শ্রীফল অর্থাৎ নারকেল যা প্রতিটি পূজায় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনি লক্ষ্মী পূজাতেও নারকেল হল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ বা ভোগ ও নৈবেদ্য বলা যায়।
  • লক্ষ্মী কে নারকেল, সুপারি ও পান পাতা নিবেদন করার পর ফল ও মিষ্টি নিবেদন করুন।
  • তার সাথে কিছু ফুল ও কয়েকটা কয়েন মূর্তির সামনে রেখে দিতে হবে।
  • সবশেষে পঞ্চ প্রদীপ জ্বালিয়ে মা লক্ষ্মীর আরতি সম্পন্ন করে, পূজা সম্পন্ন করুন এবং যদি উপবাস রাখেন উপবাস ভঙ্গ করতে পারেন, এরপর সকলের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!