Worldwide Bengali Panjika

তারা মায়ের পূজা বিধি – Tara Maa Puja Vidhi


ADVERTISEMENT

তারা মায়ের পূজা (Tara Maa Puja): মা কালীর আরেকটি রূপ হল তারা মা, তারা মায়ের পূজা, তারাপীঠে (Tarapith) খুবই ধুমধাম ভাবে পালন করা হয়ে থাকে এবং এখানে দেবীর নিত্য পূজার আয়োজন করা হয়। ভোগের তালিকায় এখানে দেবীকে প্রেত ভোগ নিবেদন করা হয়, ডাকিনী যোগিনীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয় ভোগ আর শ্মশানেই দেওয়া হয়ে থাকে তাদের ভোগ।

সতীর ৫১ পীঠের কথা অনেকেই জানেন শক্তিপীঠ (Shakti Pitha), সিদ্ধপিঠ (Siddha Pitha), তারাপীঠ (Tara Pitha), কালীপূজায় জমজমাট থাকে বীরভূমের তারাপীঠ। তবে অনেকেই হয়তো ভাববেন যে এটি সতী পীঠ কিন্তু তারাপীঠ কোনো সতীপীঠ (Sati Pitha) নয়। কথিত আছে যে, একবার দেবীর মাতৃরূপ দর্শন করতে চান বশিষ্ট মুনি, দেবীও কিন্তু মুনিকে নিরাশ করেননি, এখানেই তাকে মাতৃরূপে দর্শন দেন দেবী। এখানেই তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেন আর তারা মায়ের ভক্ত হয়ে যান বামাক্ষ্যাপা (Bamakhyapa), ফলে এটি সিদ্ধপীঠ হিসেবে পরিচিত।

তারা মায়ের পূজা অর্চনা:

  • প্রতিটি দেবদেবীর মতোই তারা মায়ের পূজা অর্চনায় রয়েছে বিশেষ নিয়ম।
  • অমাবশ্যায় পালিত হয় দেবীর পূজা অর্চনা, পূজার দিন সকালে স্নান করার পর শুদ্ধ হয়ে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে দেবীর শিলা ব্রহ্মময় মূর্তিকে রাজ বেশে সাজিয়ে তোলা হয়, পরানো হয় চুনরি অর্থাৎ ওড়না।
  • এরপর পঞ্চ উপাচারে মঙ্গল আরতি ও নৃত্য পুজো সম্পন্ন করা হয়।
  • কালীপুজোর দিন খুব সকালে ডাবের জল দিয়ে শুরু হয় মায়ের ভোগ নিবেদন।
  • সকালের ভোগে থাকে পাঁচ রকম অথবা নয় রকমের ভাজা, সাদা অন্ন, পায়েস এবং মিষ্টান্ন।
  • এখানে তারা মায়ের পূজার ক্ষেত্রে পঞ্চ ব্যঞ্জন সহযোগে ভোগ নিবেদন করা হয়।
  • আমিষ ভোগের মূল উপাদান হলো শোল মাছ। তারাপীঠের এই নিয়ম অনেকেই হয়তো জানেন না।
  • ভোগের পাতে এই মাছ না থাকলে ভোগ গ্রহণ করেন না মা তারা, এমনটাই বিশ্বাস করেন সেখানকার স্থানীয় মানুষজন।
  • কালী পূজার দিন তাঁরা ভোগ হিসেবে রাখেন পোলাও, খিচুড়ি, সাদা ভাত, পাঁচমিশালী তরকারি, পাঁচ রকমের ভাজা, পায়েস, মিষ্টি, চাটনি এবং অবশ্যই মাছ।
  • এখানকার অন্ন ভোগের বিশেষত্ব হল পোড়া শোল মাছ মাখা।

দীপান্বিতা অমাবস্যা (Dipanvita Amavasya) অর্থাৎ কালীপূজা (Kali Puja) হয় যে অমাবস্যা তে দুর্গাপূজার পরে, সেই পূজা উপলক্ষে নিয়ম নিষ্ঠা মেনে হয় বিশেষ সন্ধ্যা আরতি। এরপর নিবেদন করা হয় লুচি, সুজি, পায়েস এবং শীতল ভোগ। তারা মায়ের যেভাবে পূজা করা হয় সেই একইভাবে পূজা করা হয় শ্মশান কালিকেও। শ্মশানেই রয়েছে মায়ের আসল শিলা পাদুকা, তার পাশে বামাক্ষ্যাপার সমাধি।

তারাপীঠের নিয়ম অনুযায়ী সন্তানকে খাইয়ে তবেই তারা মা ভোগ গ্রহণ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই বামাক্ষ্যাপার ভোগ আগে দেওয়া হয়, তারপরেই মায়ের ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগের তালিকায় রয়েছে প্রেত ভোগ, ডাকিনী, যোগিনী দের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয় ভোগ যা শ্মশানেই অবস্থিত। এছাড়া তারা মায়ের পূজার একটি বিশেষ অংশ হিসেবে বামাক্ষ্যাপার খুব কাছের এবং প্রিয় ছিল এক কুকুর তার নাম ছিল শিবা, তার জন্যও থাকে বিশেষ ভোগের আয়োজন।

তারা মায়ের ভোগ:

তারা মায়ের ভোগ হিসেবে আগেই কিছুটা ধারণা পাওয়া গিয়েছে, এর সাথে সাথে তরকারি, পায়েস, পরমান্ন ভোগ নিবেদন করা হয় তারা মাকে। সম্পূর্ণ নিরামিষ ভোগ, আবার লুচি, সুজিও দেওয়া হয় এবং তারাপীঠ বা কামাখ্যা (Kamakhya) বলুন, তন্ত্র পীঠের পূজা আছে কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে থাকে। এখানে মাছ বা বলির পাঁঠার মাংস উপাচার হিসেবে প্রয়োজন পড়ে, এই ভোগ প্রতিদিন দেওয়া হয়ে থাকে মাকে।

অ্যালকোহল অথবা নেশা জাতীয় পানীয় সেটাও কিন্তু প্রয়োজন পড়ে। এক এক পূজায় একে পূজায় একেক উপকরণ লাগে, যেমন নারায়ণ পূজায় লাগে সিন্নি তেমনি তন্ত্রের দেবী মা কালীকে কারণবারি ও মাংস নিবেদন করা হয় আর কারণবারি মদ নয়, যা মাকে ভোগ দেওয়ার আগে শুদ্ধিকরণ করা হয় এটাকে সরাসরি মদ বলা যেতে পারে না।

তারা মায়ের পূজার গুরুত্ব:

তারা মায়ের পূজা করলে জীবনে অনেক সমস্যার সমাধান হয় বলে জানা যায়। এ ছাড়া শনিবার যদি মা তারার পূজা করা যায় তাহলে জীবনের অনেক বাধা-বিপত্তি কেটে যায়। এমনকি মা তারার পূজায় গ্রহরাজ শনিদেবের মহাদশা, সমস্ত দুঃখ ও কষ্ট লাঘব হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। তারা মায়ের প্রিয় ফুল হলো জবা ফুল এবং নীলকন্ঠ ফুল সেই কারণে তারা মায়ের গলায় জবা ফুল ও নীলকন্ঠ ফুলের মালা দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করতে হয়।

এছাড়া মা তারার পূজায় যদি গুড়ের বাতাসা থাকে তবে মা তারার পূজা বিশেষভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি তারা মায়ের পূজায় যদি নীল কাপড় নিবেদন করা যায় সে ক্ষেত্রে শনি দেব সন্তুষ্ট হন বলে জানা যায়। জীবনে শনির দশা পড়লে সেই জীবন যে কত ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা আর নতুন করে বলার কিছু নাই। শনিদেবের মহাদশা জীবনের অনেক কষ্টের মধ্যে অত্যন্ত কঠিন কষ্টের সময় বলে মনে করা হয়। মা কাউকে খালি হাতে ফেরান না তাই নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে মা তারার পূজা করলে আপনার জীবন থেকে সমস্ত শনির দশা কেটে যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!