Worldwide Bengali Panjika

বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ – World Breastfeeding Week


বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ (World Breastfeeding Week): আজকের দিন থেকে বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হয়। জন্মের পর একটি শিশুর জন্য কমপক্ষে ছয় মাস শুধুমাত্র মাতৃ দুগ্ধ পান করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে জন্মের 1 ঘন্টার মধ্যে মায়ের প্রথম দুধ পান করানোর ক্ষেত্রে সেই শিশুর রোগ ও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে নিরাপদ রাখা যায়।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

কিন্তু শিশুদের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে বিপুলসংখ্যক নবজাতক এবং শিশু প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য স্তন পানের সুবিধা নিতে পারছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজন শিশু প্রয়োজনীয় পরিমাণে মায়ের দুধ পায় না। যা তাদের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শিশুদের মৃত্যু হারেও বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে।

বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ এর ইতিহাস:

বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ উদযাপন শুরু হয় ১৯৯২ সালে, প্রকৃতপক্ষে ১৯৯০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক শিশু জরুরি পোস্ট (UNICEF) দ্বারা একটি স্মারকলিপি প্রস্তুত করা হয়েছিল। এরপরে ১৯৯১ সালে স্তন্যপান কর্মের জন্য বিশ্বজোট প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ পালিত হয়। তাছাড়া প্রাথমিকভাবে এই অনুষ্ঠানটি প্রায় ৭০ টি দেশে উদযাপন করা শুরু হয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে এই সপ্তাহ টি ১৭০ টি দেশ পালন করছে।

বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ চলাকালীন ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ তত্ত্বাবধানে বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে স্তন্যপান করানোর বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রচারণারও আয়োজন চলে। যার ফলে সকলেই যেন বুঝতে পারে যে একটি নবজাতক শিশুর জন্য মাতৃদুগ্ধ কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে এই উপলক্ষে হাসপাতাল, স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টারে, সরকারি, বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা, সেমিনার ও অন্যান্য কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা শিশুর জীবনের প্রথম ছয় মাস একচেটিয়া মাতৃ স্তনের দুধ পান করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকে এবং তারপরে দুই বছর এবং তারপরে উপযুক্ত পরিপূরক খাবারের সাথে সাথেও মায়ের দুধ পান করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। আসলে মায়ের দুধে অনেক ধরনের অ্যান্টিবডি থাকে যা শিশুদের শৈশবকালীন অনেক সাধারণ রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং তাদেরকে সঠিকভাবে মানসিক বিকাশে, শারীরিক বিকাশে সহায়তা করে।

শিশুকে মাতৃ দুগ্ধ পান করানো:

শিশুকে মাতৃ দুগ্ধ পান করানোর সময়কালে মাকে যে বিষয়গুলির উপর বিশেষভাবে খেয়াল দিতে হবে:

যেগুলি এড়িয়ে চলবেন:

  • গর্ভাবস্থায় যেমন অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা উচিত তেমন এই সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোর সময় মদ্যপান করাও কোনোভাবেই যাবে না। কারণ স্তন্যদায়ী মা মদ খেলে তা বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরেও প্রবেশ করতে পারে। যদি নেহাতই মদ্যপান না করে থাকতে না পারেন তাহলে খুবই অল্প পরিমাণ এবং শিশুর দুধ খাওয়ানোর অনেকটা আগেই তা পান করতে পারেন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আপনাকে চলতে হবে।
  • পুদিনা পাতা, পার্সলের মতো বিভিন্ন হার্বস যথেষ্ট রিফ্রেশ একটা অনুভূতি দেয় আমাদের মানব শরীরে, কিন্তু যেসব মহিলারা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন তাঁদের এগুলি খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ এই ধরনের হার্বসে “অ্যান্টিজ্যালাকটাগস” নামে এক ধরনের উপাদান থাকে, যা বুকের দুধ কমিয়ে দিতে পারে।
  • মাছ ও সি ফুড দুটোই আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে যথেষ্ট উপকারী, সি ফুডে থাকে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কিন্তু কোন কোন মাছ ও সি ফুড মহিলাদের খাওয়া উচিত নয়। কারণ এই ধরনের খাবারে প্রচুর পরিমাণ পারদ ও সিসা থাকতে পারে, যা সদ্যজাত শিশুর পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।
  • রসুনের মধ্যে যেমন এক ধরনের কড়া গন্ধ থাকে তেমনি রান্নায় বেশি পরিমাণে রসুন খেলে অথবা বেশি মসলা জাতীয় খাবার খেলে সেক্ষেত্রে মায়ের দুধে একটা কড়া গন্ধ থাকতে পারে, আর শিশুর সেই গন্ধের জন্য দুধ না খেতে চাওয়ারও একটা কারণ থাকতে পারে।
  • খুব বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে এমন ফল স্তন্যদায়ী মায়েদের না খাওয়াই ভালো। কারণ অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীরে গেলে শিশুর মধ্যে বমি করার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। টক জাতীয় ফল শিশুর জি আই ট্রাক্টে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

তবে এখানে একটা কথা বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, সব খাবারই অল্প পরিমানে খাওয়াই ভালো আর অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কোন কিছুই ভালো না। খেয়াল রাখবেন আপনার ডায়েটে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস এবং জলীয় পদার্থ থাকে, তাহলে মা ও শিশু দুজনেই থাকবে সুস্থ ও হাসিখুশি। যখনই শিশুকে দুধ পান করাবেন তখন অবশ্যই জল পান করতে একেবারেই ভুলবেন না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!