শ্রী বাস্তু পূজার বিধি (Vastu Puja Vidhi): আমরা যে সমস্ত জায়গায় বাস করি তার আশেপাশে পরিবেশ এবং সেই বাস্তু যেন খুবই ভালো থাকে তার জন্য পূজা করা হয়। বাস্তু এমন একটি স্থান যেখানে প্রকৃতি এবং মানুষ একসাথে বসবাস করে।
প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)
বাস্তু শান্তি পূজা যাকে বাস্তুদোষ নিবারণ পূজাও বলা হয়ে থাকে। আবার বাস্তু পূজাও বলা হয়ে থাকে। চারপাশ থেকে কোনো রকম বাধা-বিপত্তি বা ক্ষতিকারক উপাদান গুলিকে সরিয়ে দিয়ে সেই বাস্তু টাকে সুরক্ষিত রাখতে এবং আকর্ষণীয় ভারসাম্য তৈরি করতে এই বাস্তু পূজার বিধান রয়েছে।
শ্রীশ্রী বাস্তু পূজা:
হিন্দুরা তাঁদের বাড়ি ভাগ্য, অর্থ, সুস্বাস্থ্য, সাফল্য, এগুলির জন্য বাস্তুশান্তি পূজা করে থাকেন। এই পূজা করার ফলে বাস্তু দোষ কেটে যায়, বাস্তু হল বিজ্ঞান যা একটি বাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি প্রকৃতির পাঁচটি উপাদান যেমন ধরুন পৃথিবী / মাটি, জল, আগুন, বায়ু এবং ইথার এগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
আমাদের ঘর এবং আশেপাশের শক্তি এই সমস্ত উপাদান দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। তার পাশাপাশি গ্রহ ও নক্ষত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। এই উপাদান গুলি আমাদের জীবনে ইতিবাচক শক্তি নিয়ে আসার সাথে সাথে আমাদের চারপাশের পরিবেশ কে সুন্দর রাখে, সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলে এবং প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে।
বাস্তু পূজা কেন করা হয়?
বাস্তু শান্তি পূজা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিন্তু যখন নতুন গৃহে প্রবেশ করা হয়, সেই সময় পূজা করা হয় বা কোন জায়গা কেনার ক্ষেত্রে, বাড়ি করার ক্ষেত্রে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলে সেই বাড়িটি আরো বেশি সুন্দর ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কোনরকম অসফলতা, ব্যর্থতা বাড়িটিকে যেন প্রভাবিত না করতে পারে।
বাস্তুশান্তি পূজা করার প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- বিভিন্ন ধরনের ফল,
- ফুল,
- চন্দন,
- তুলসী পাতা,
- দুর্বা ঘাস,
- শঙ্খ, ঘন্টা,
- ধূপ,
- প্রদীপ,
- ধূনা,
- ভোগ,
- নৈবেদ্য,
- পূজার থালা,
- ব্রাহ্মণের দক্ষিণা,
- গঙ্গাজল,
- পবিত্র মাটি অথবা গঙ্গা মাটি,
- সিঁদুর,
- হোমের জন্য কাঠ,
- বালি,
- ঘি,
- বেলপাতা,
- অশোক পাতা ইত্যাদি।
যে সমস্ত ক্ষেত্রে আপনি বাস্তু শান্তি পূজা করতে পারেন:
- বাস্তু নীতির বিরুদ্ধে যায় এমন একটি ভবন নির্মাণ করার ক্ষেত্রে আপনি এই পূজা করতে পারবেন।
- যখন কোন সিদ্ধান্ত বাস্তু নিয়মের বিরুদ্ধে যায় সে ক্ষেত্রে এই বাস্তুশান্তি পূজা করে সকল দোষ কাটিয়ে তুলতে পারেন।
- পুরনো কোন বাড়ি যখন কিনবেন সেক্ষেত্রে বাস্তুশান্তি পূজা করে তবেই সেই বাড়িতে প্রবেশ করা উচিত।
- একটি বাড়ি বা কর্মক্ষেত্রের সংস্কারের পরে অবশ্যই বাস্তুশান্তি পূজা করা দরকার।
- যখন একটা বাড়িতে এক দশক ধরে অবস্থান করছেন তারপরে বাস্তুশান্তি পূজা করার বিধান রয়েছে।
- যখন আপনার কোথাও বাড়ি রয়েছে এবং সেই বাড়ি থেকে দীর্ঘদিন যাবত বিদেশে ভ্রমণ করে সেই বাড়িতে আবার ফিরে আসলেন, সে ক্ষেত্রে বাড়িতে বাস্তুশান্তি পূজা অবশ্যই করবেন।
- একটি বাসস্থান থেকে যখন নতুন একটি বাসস্থানে স্থানান্তরিত হবেন, সেই নতুন বাসস্থানে গিয়ে বাস্তুশান্তি পূজা করতে হয়।
- এছাড়া আপনার জীবনে যদি আর্থিক কোন লড়াই লেগে থাকে তাহলে সেই লড়াই থেকে মুক্তি পেতে বাস্তুশান্তি পূজা করুন।
বাস্তুশান্তি পূজার জন্য যে বিষয়গুলি মেনে চলতে হবে:
বাস্তু পূজা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সকলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে। তাই যখন আপনি বাস্তু পূজা করার জন্য পরিকল্পনা করবেন সে ক্ষেত্রে আগে থেকে কিছু বিষয়ের প্রতি আপনাকে যত্নবান হতে হবে। যেমন:-
১) যে জায়গাটিতে বাস্তুশান্তি পূজা করবেন সে জায়গাটির চিহ্নিত করুন এবং সেটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে পবিত্র করুন।
২) যেখানে হোম অথবা যজ্ঞ করবেন সেখানে গঙ্গা জল ছিটিয়ে পবিত্র করে নিন।
৩) বাড়ির দরজায় অশোকের পাতা রাখুন, বাড়ির মূল দরজায় শুভ চিহ্ন অর্থাৎ স্বস্তিক চিহ্ন তৈরি করুন।
৪) পূজার সমস্ত সামগ্রি প্রস্তুত রাখুন এবং হোম এর জন্য কাঠ, বেলপাতা এগুলি নিয়ে রাখুন।
শ্রী শ্রী বাস্তু পূজা করার নিয়ম:
১) পূজার ঘর প্রস্তুত করুন এবং ঘরটি পরিষ্কার করুন এবং সমস্ত আচার অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করে নিন।
২) ভগবান গণেশ এবং অন্যান্য দেবতার ছবি অথবা মূর্তি রাখতে পারেন। ফুল, ধূপকাঠি, প্রদীপ এগুলি সবকিছু ঠাকুরের সামনে রাখুন।
৩) পুরোহিত ডাকতে হবে অবশ্যই, বাস্তুশাস্ত্র এবং হিন্দু আচার অনুষ্ঠানে জ্ঞানী একজন হিন্দু পুরোহিত কে পূজা করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখুন।
৪) ভগবান গণেশের কাছে প্রার্থনা করুন এবং আশীর্বাদ ও নির্দেশনা প্রার্থনা করুন।
৫) দেবতাদের উদ্দেশ্যে ফুল ও আরো অন্যান্য নৈবেদ্য সেগুলি নিবেদন করুন ভক্তি ভরে।
৬) পুরোহিত যখন মন্ত্র পাঠ করবেন এবং পূজা করবেন তখন আপনিও মনে মনে সেগুলি পাঠ করুন।
৭) নতুন বাড়ি অথবা অফিসের জন্য আশীর্বাদ চেয়ে নিন এবং জীবনে যেন ইতিবাচক শক্তির আগমন ঘটে সেটার জন্য প্রার্থনা করুন।
৮) পুরোহিত পূজা করবেন, প্রার্থনা করবেন এবং মন্ত্র পাঠ করবেন পূজায় দেবতাদের উদ্দেশ্যে ফল, ফুল এবং আরো অন্যান্য জিনিসপত্রও থাকতে হবে।
৯) বাস্তুশান্তি পূজার সময় আপনাকে অবশ্যই অগ্নিকুণ্ডের হোম অথবা যজ্ঞ করার অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আগুনে ঘি দিয়ে, অন্যান্য উপকরণ দিয়ে অথবা বেলপাতা দিয়ে যজ্ঞ করতে হবে।
১০) এই পূজায় উপস্থিত যাঁরা থাকবেন, তাঁদের মধ্যে পূজা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেই পূজার প্রসাদ বিতরণ করুন এবং সকলকে এই পূজায় আসার জন্য ধন্যবাদ জানান।
বাস্তু পূজা করার সুবিধা ও তাৎপর্য:
- এই পূজা অর্থের প্রবাহকে উন্নত করে এবং সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধির আগমন ঘটায়।
- ভক্তদের দুর্ভাগ্য দূর করে এবং সৌভাগ্য ফিরিয়ে আনে।
- বাড়ির আশেপাশে গাছপালা, প্রাণী, মানুষের জীবনী শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ঘরকে সুরক্ষিত রাখে সকল প্রকার বিপদ থেকে।
- পরিবারের নিরাপত্তা ও শান্তি এবং মঙ্গল কামনা করে এই পূজা করা হয়, তাই বাড়ির সুখ-শান্তিতে বিশেষ প্রভাব ফেলে।
- ঘরের আগুন, জল, বাতাস এবং মাটির প্রাকৃতিক উপাদানের ভারসাম্য বজায় রাখে।
- প্রাকৃতিকভাবে অনুকূল জলবায়ু পরিস্থিতি নিশ্চিত করে রাখে এবং সমস্ত রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও ঘরকে রক্ষা করে বলে বিশ্বাস করা হয়।
- ঘরের মানুষ, প্রাণী এবং গাছ-পালা এবং সকলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় আর সকলে সমস্ত রকম রোগ থেকে দূরে থাকে।
- নেতিবাচক শক্তি থেকে দূরে রাখে ঘরকে।
- আধ্যাত্মিক শক্তির বৃদ্ধি ঘটায় এবং জীবনের সাফল্যের নতুন পথ খুলে যায়।
✨ কোন বাড়ি তৈরি হচ্ছে অথবা কোন জায়গা কেনা হয়েছে যা কোন ভাবেই আগে থেকে পরিচিত ছিল না সে ক্ষেত্রে সেই সমস্ত জায়গা থেকে নেতিবাচক শক্তি দূর করতে এবং পরবর্তীতে সেখানে বসবাসের উপযোগী করার জন্য এই বাস্তু পূজা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভক্তি ও শ্রদ্ধা দিয়ে এই বাস্তু পূজার নিয়ম রয়েছে।
বাড়িতে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধির জন্য ও ইতিবাচক শক্তির জন্য, দেবতাদের সন্তুষ্ট করার এই রীতি প্রচলিত রয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। তাই আপনিও যদি আপনার নতুন ঘর অথবা নতুন অফিস সুন্দরভাবে রাখতে এবং সকল রকম বিপদ থেকে রক্ষা পেতে বাস্তু শান্তি পূজা করতে ভুলবেন না।