উমা মহেশ্বর পূজা পালন (Uma Maheshwar Puja): বিভিন্ন পূজা অর্চনা আমাদের জীবনে সকল অশুভ শক্তিকে দূরে সরিয়ে শুভ শক্তির আগমন ঘটায়। এর পাশাপাশি জীবনে উন্নতি ঘটনোর জন্যই পূজা পার্বণে মনোনিবেশ করে থাকেন বহু মানুষ।
প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)
এই পূজা অশুভ শক্তি থেকে ভক্তদের রক্ষা করে যা বৈবাহিক জীবনে মতভেদ ও রাগ সৃষ্টি করে না, এটি বর দেয়, জ্ঞান প্রদান করে, বৈবাহিক সুখ এবং সম্প্রীতি প্রদান করে। শিব এবং পার্বতীর ভালবাসার মতই দৃঢ় হয় যে কোন দম্পতির ভালোবাসা, তাঁদের মধ্যে জন্ম নেয় এক সুন্দর বোঝাপড়া।
উমা মহেশ্বর ব্রত:
উমা মহেশ্বর ব্রত ভগবান বিষ্ণু দ্বারা রাখা হয়েছিল তারপর মা লক্ষ্মীকে ফিরে পাওয়া গিয়েছিল। ভাদ্র মাসে যে পূর্ণিমা তিথি পড়ে তার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এটি উমা মহেশ্বর ব্রত (Uma Maheshwar Vrat) পালন করার একটি শুভ দিন। এটি সমস্ত পূর্ণিমার উপবাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচনা করা হয়। ভগবান শ্রী বিষ্ণু এই উপবাস পালন করেছিলেন এবং এই উপবাসের পরে তিনি মা লক্ষ্মীকে ফিরে পেয়েছিলেন।
হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতিমাসে পূর্ণিমার তিথি পড়ে প্রতিটি পূর্ণিমার আলাদা আলাদা তাৎপর্য যেমন রয়েছে তেমনি কোন এক পূর্ণিমাতে বিশেষ কোনো ব্রত পালন করা হয়। পূর্ণিমা তিথিতে পূণ্য স্নান করা, দান করা, পূজা পাঠ করা ও উপবাস রাখা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। কিন্তু ভাদ্র মাসের পতিত পূর্নিমা তিথি নানা ভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই শুভদিনে উমা মহেশ্বর ব্রত পালন করা হয়। বিশ্বাস অনুসারে জানা যায় যে, ব্যক্তি এই উপবাসটি পদ্ধতিগতভাবে পালন করবেন তিনি পূর্বজন্মের সমস্ত পাপ, দোষ এবং অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবেন। ধর্মীয় কাহিনী অনুসারে ভগবান বিষ্ণু নিজেও এই উপবাস রেখেছিলেন বলে জানা যায়।
উমা মহেশ্বর ব্রত পালনের কাহিনী:
কাহিনী অনুসারে জানা যায় উমা মহেশ্বর ব্রত সম্পর্কিত যে পৌরাণিক ঘটনা রয়েছে সেটি হল, মহর্ষি দুর্বাসা যখন ভগবান শিব কে দেখে ফিরে আসছিলেন পথে তিনি ভগবান বিষ্ণুর সাথে দেখা করেছিলেন। মহর্ষি দুর্বাসা ভগবান শিব দ্বারা প্রাপ্ত বেল পাতার মালা, বিষ্ণুকে দিয়েছিলেন কিন্তু বিষ্ণু নিজে এই মালা না পরে গরুড় এর গলায় পরিয়ে দিয়েছিলেন।
এই ঘটনাতে মহর্ষি দুর্বাসা ভীষণভাবে রেগে যান। তিনি ক্রোধে ভেঙে পড়েন, তিনি ভগবান বিষ্ণুকে বলেছিলেন যে, লক্ষ্মী এবং ক্ষীর সাগর আপনার কাছ থেকে চলে যাবে, মহর্ষের কথা শুনে বিষ্ণু নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। তিনি হাত জোড় করে মহর্ষি দুর্বাসার সামনে প্রণাম করলেন এবং নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত করার জন্য প্রতিকার চেয়ে বসলেন।
ভগবান বিষ্ণুর এই অনুশোচনা দেখে মহর্ষি দুর্বাসা বিষ্ণুকে উমা মহেশ্বর এর জন্য উপবাস করতে বলেছিলেন আর সেটাই হলো এই উপবাস ও ব্রত।
এই উপবাসের ফলে লক্ষ্মী কে ফিরে পেয়েছিলেন, এরপর ভগবান বিষ্ণুর উপবাস রাখেন এবং এই উপবাসের প্রভাবে তিনি মা লক্ষী এবং ক্ষীর সাগর দুটোই ফিরে পান। তাই এই উপবাস সম্পর্কে এমন বিশ্বাস রয়েছে যে, যে ব্যাক্তি ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উমা মহেশ্বর এর উপবাস করে নিয়ম অনুযায়ী পূজা করবেন তবে সমস্ত দোষ, ত্রুটি দূর হয়ে যাবে এবং জীবনে সুখ সমৃদ্ধি লাভ করবে।
উমা মহেশ্বর পূজার বিধি:
- এই শুভদিনে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পড়তে হবে।
- তারপর শিবকে জল নিবেদন করতে হবে।
- পূজায় শিবকে ফল, ফুল ও মালা ইত্যাদি নিবেদন করতে হবে।
- চন্দনের ফোটা লাগাতে হবে।
- শিবের সঙ্গে দেবী পার্বতীর আরাধনা করতে হয়।
- এছাড়াও পার্বতীকে সোহাগ সরঞ্জাম অর্থাৎ সাজগোজের জিনিসপত্র ও নিবেদন করতে হয়।
- এরপরে ধুপ, প্রদীপ নিবেদন করুন তার সাথে সাথে আরতি করুন।
- তারপর পুজোর পর ব্রাহ্মণকে দান করুন, দক্ষিণা দান করুন এবং পূজা সম্পন্ন হলে সকলের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করুন।