Worldwide Bengali Panjika

শ্রী শ্রী শীতলা সপ্তমী ব্রত – Sheetala Saptami Vrat


শ্রী শ্রী শীতলা সপ্তমী ব্রত (Sheetala Saptami Vrat): সমস্ত অসুখ বিসুখ থেকে সকলকে বাঁচিয়ে রাখতে দেবী শীতলাকে উপাসনা করা হয়। সন্তানের সুস্বাস্থ্য ও তাদের দীর্ঘায়ুর জন্য এই ব্রত পালন করা হয়ে থাকে বহু প্রাচীনকাল আগে থেকেই। শাস্ত্র অনুসারে শীতলা মাতাকে দেবী দুর্গার স্বরূপ বলে মনে করা হয় এবং এই দেবীকে বাসি অথবা ঠান্ডা খাবারের ভোগ নিবেদন করা হয়ে থাকে।

WhatsApp প্রতিদিনের পঞ্জিকা নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে দেখুন (একদম ফ্রী)

এই ব্রত পালন করলে আরোগ্যর আশীর্বাদ লাভ করা যায়, শাস্ত্র মতে শীতলা দেবী সন্তানদের গভীর রোগ থেকে রক্ষা করেন। কোন কোন স্থানে শীতলা পূজা খুবই বড় আকারে অনুষ্ঠিত হয় এবং এই পূজা ‘বাসৌড়া’ নামেও পরিচিত।

শীতলা দেবীর স্বরূপ:

প্রতিটি দেব-দেবীর আলাদা আলাদা স্বরূপ রয়েছে আর সেই অনুসারে মূর্তি স্থাপন করা হয়। স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে শীতলা দেবীর স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে যা দেবী গাধার উপরে অধিষ্ঠিতা। হাতে থাকে কলসি, ঝাঁটা ও কুলো, শীতলা দেবী সন্তানকে নিরোগী থাকার আশীর্বাদ প্রদান করে থাকেন।

যেমন ধরুন জ্বর, বসন্ত রোগ, চোখের সমস্যা থেকে তিনি বাচ্চাদের রক্ষা করে থাকেন। এর পাশাপাশি এই দিনে যাঁরা শীতলা দেবীকে পূজা করে থাকেন অথবা ব্রত পালন করে থাকেন তাঁরাও বাসি খাবার খেয়ে থাকেন এবং শীতলা দেবীকেও বাসি খাবারের ভোগ নিবেদন করা হয়।

শীতলা দেবীকে দেওয়া হয় বাসি ভোগ:

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, শীতলা দেবীকে কেন নিবেদন করা হয় বাসি খাবারের ভোগ:

লোকমুখে শোনা এবং প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী শীতলা সপ্তমীর ব্রতর দিনে টাটকা খাবার তৈরি করা হয় না, একদিন আগে রান্না করা খাবারই প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করা হয়, মনে করা হয় শীতলার বাসি ভোজন অত্যন্ত প্রিয়। এছাড়া এই তিথিতে বাড়িতে উনুন-ধরানো একেবারেই নিষিদ্ধ অর্থাৎ উনুনকে ঠান্ডা রাখতে হয়। সপ্তমীর রাতে অথবা অষ্টমীর সূর্য উদয়ের আগে তৈরি খাবারই এই পূজার দিনে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

এছাড়া এই পূজা করলে ভক্তদের সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয় এবং সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া বাসি খাবার গ্রহণ করার পিছনেও রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণ। যেমন ধরুন ঠান্ডা গরমের কারণে এই সময়টাতে অনেক বেশি অসুখ-বিসুখ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই এই তিথিতে ঠান্ডা খাবার খাওয়ার প্রথা প্রচলিত রয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই।

শীতলা মায়ের ব্রত পালন করার শুভ ফল:

আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার অবতার হিসেবে তিনি পক্স, ব্রন, ঘা, ফুসকুড়ি প্রভৃতি রোগ নিরাময় করেন এবং পিশাচ এর হাত থেকে ও রক্ষা করেন। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে এই দেবীর প্রভাবেই মানুষ বসন্ত’র মত চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে, এই কারণেই গ্রামবাংলায় বসন্ত রোগ কে “মায়ের দয়া” নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

তাই কেউ বসন্তে আক্রান্ত হলে দেবী শীতলা কে পূজা নিবেদন করে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির আরোগ্য কামনা করা গ্রামীন হিন্দু সমাজের প্রধান রীতি অনুযায়ী চলে আসছে বহুদিন আগে থেকেই। প্রচলিত মূর্তিতে শীতলা দেবীর এক হাতে থাকে জলের কলস, অন্য হাতে থাকে ঝাড়ু, ভক্তদের বিশ্বাস কলস থেকে তিনি আরোগ্য সুধা দান করেন এবং ঝাড়ু দিয়ে রোগাক্রান্ত দের সমস্ত রোগ, কষ্ট দূর করে দেন।

শীতলা মায়ের পূজা, তিন দিন ধরে চলে মায়ের মন্দিরে, এই পুজোর আগের দিন মায়ের জাগরণ গান হয়, তারপরের দিন রূপনারায়ন নদী থেকে জল এনে শীতলা মায়ের মন্দিরে ঢালা হয় এরপর হয় দন্ডী কাটা। মায়ের আরতি হয় ধুনো দিয়ে, পুরানো মাধ্যম দিয়ে চলে শীতলা মায়ের পূজা, শীতলা মায়ের পূজা গোটা গ্রামকে নিয়ে শুরু হয় এবং পূজা দেখার জন্য বহু মানুষ দূর দুরান্ত থেকে এসে মায়ের মন্দিরে ভিড় জমান।

এছাড়া দক্ষিণ সুন্দরবনের শীতলা মন্দির বা কাঁকড়া মায়ের মন্দিরে সাত দিন ধরে মা শীতলার পূজা হয়ে থাকে। এই সময় মেলাও বসে, মায়ের ভোগে দেওয়া হয় কাঁকড়া, মাছ এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি। এছাড়া মা শীতলার পূজার জন্য অনেক আরতি, সংগ্রহ ও স্তুতি পাঠ রয়েছে এর মধ্যে কয়েকটি হল শ্রী শীতলা মাতার চল্লিশা, শীতলা মায়ের আরতী এবং শ্রী শীতলা মাতা অষ্টক।

কিছু কিছু জায়গায় মা শীতলার আটটি হাত দেখা যায় এবং আটটি হাত ত্রিশূল, ঝাড়ু, চক্র, জীবাণু ভর্তি পাত্র বা জলে ভরা পাত্র, নিমপাতা, বাঁকানো তরবারি, শঙ্খ এবং ভদ্র মুদ্রার সাথে দেখা যায়। এছাড়া তাঁর দুই পাশে দুটি গাধার অবস্থানও লক্ষ্য করা যায়, এই মূর্তিতে তাঁকে সুরক্ষা, সৌভাগ্য, স্বাস্থ্য এবং শক্তির দেবী হিসেবে সকলের কাছে চিহ্নিত করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!